সাক্ষাৎকার  

Interview, সাক্ষাৎকার,


কারোর ভেতরে কবিত্ব না থাকলেও কবিতা রচনা করা তার পক্ষে সম্ভব। কবিত্ব এক আদর্শ। কবির বোধ সবসময় সত্য, সুন্দর। তার অন্তর্দৃষ্টি গভীর ও সত্যসন্ধানী। কখনও কাল্পনিক মেরুধর্মী।



অনিমেষ সরকার  কবি

জন্ম ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৭। জন্মস্থান উহ্য থাকুক।
• প্রকাশিত বইয়ের তালিকা :
‘নপুংসক ফিনিক্স’ (২০১৯) কর্পোরেট পাবলিসিটি
‘এপ্রিল পেরোনো জোনাকি’ (২০২৩) শহরতলি প্রকাশন
• সম্পাদিত পত্র-পত্রিকা :
ওয়েব ডুয়ার্স (ওয়েবজিন), এবং পাহাড়তলি (মুদ্রিত)
• পুরস্কার সম্মাননা :
‘চুনি কোটাল স্মৃতি সম্মান’ (২০১৭)




খোঁজ: “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি” কেন?

অনিমেষ: খুব সহজ ভাবে উত্তর যদি দিই। যার ভিতর কবিত্ব আছে, সেই কবি। এবার 'কবিত্ব'টা কী? খায় না মাথায় দেয়? বলছি, কবি আর কবিতা রচনাকার এক নয়। কারোর ভেতরে কবিত্ব না থাকলেও কবিতা রচনা করা তার পক্ষে সম্ভব। কবিত্ব এক আদর্শ। কবির বোধ সবসময় সত্য, সুন্দর। তার অন্তর্দৃষ্টি গভীর ও সত্যসন্ধানী। কখনও কাল্পনিক মেরুধর্মী।

এই অখাদ্য জিনিসটা হলো এক বিশেষ মানসিকতা। কাব্যচর্চা করলেই এই মানসিকতা অর্জন করা যায় না। কোনো কপট মানুষ চর্চা করলে সুন্দর কবিতা লিখতে পারবেন হয়তো কিন্তু কবি হবেন না। মানসিকতা আর জীবনদর্শনে কবি না হলে কেউ প্রকৃত কবি হতে পারে না। পরিবেশের প্রভাব ছাড়াও মানুষের চিন্তাধারা, মনোভঙ্গি ও জীবনবোধের সাথে জন্মগত একটা সংযোগ থাকে। যার মধ্যে এইসব কিছু নেই সে কবি হতে পারেই না। নেহাত লোভ, সামাজিক পরিচিতি, অথবা মানসিক শান্তির খোঁজে সে লেখে। কিন্তু কবি নয় সে। আর এখনকার সময়ে আমরা তো সবাইকে কবি বলি। কেউ ব আকার ল লিখলেও কবি। এতটুকুই।


খোঁজ: একজন লেখকের কাছে চরম প্রাপ্তি কী পুরস্কার?

অনিমেষ: প্রকৃত লেখকের কাছে পুরষ্কার কিছুই না। সাময়িক একটা স্বীকৃতি হতে পারে। কিন্তু একজন প্রকৃত লেখকের কাছে কখনোই পুরষ্কার চরম প্রাপ্তি হতে পারে না। যারা চরম প্রাপ্তি বলে মনে করে তারা আর যাইহোক প্রকৃত লেখক নন। তারা জীবনের ইঁদুর দৌড়ে ফার্স্ট হবার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন শুধু।


খোঁজ: লিটিল ম্যাগাজিনের কাছে আপনি কী প্রত্যাশা করেন?

অনিমেষ: তার যা ধর্ম ছিল যা আদর্শ ছিল তা বজায় রাখুক। লিটল ম্যাগাজিন এখনের সময় আরও সৎ হয়ে উঠুক।

লিটল ম্যাগাজিনের নামে ব্যাঙের যত ছাতা গজিয়ে উঠেছে সেগুলো বন্ধ হোক।


খোঁজ: হাতে কলমে বা ওয়ার্কশপে বসে কবিতা লেখা কী রপ্ত করা যায়?

অনিমেষ: কখনোই না। ওয়ার্কশপ আপনি কীসের জন্য করবেন! আর ওয়ার্কশপ থেকে যদি কবি তৈরি হয় তাহলে যারা আদতেই কবি তাদের কবিতা লেখা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। আর কারা দিচ্ছে এই সব ওয়ার্কশপ! যারা দেয় তাদের জন্য সমবেদনা। এরচেয়ে নাচ গান শেখান। তাদের কাজে দেবে। কবিতা লেখা অত সহজ! ওয়ার্কশপ আসলে একদল ছাগল আরেকদল ছাগল তৈরি করে।


সাক্ষাৎকার, এবং পাহাড়তলি,
অনিমেষ সরকার 


খোঁজ: আপনার প্রকাশিত বইগুলোকে কী বলবেন, ‘কবিতার বই’ না ‘কাব্যগ্রন্থ’?

অনিমেষ: যতগুলো সিরিয়াস প্রেম করেছি এবং ভেঙে গেছে তারপর যদি তাদের প্রাক্তনী বলে চিহ্নিত করতে পারি, তাহলে কাব্যগ্রন্থ বলব, আর যদি না করতে পারি তাহলে কবিতার বই।


খোঁজ: ‘সমবায় সংকলন’ নিয়ে আপনার কী অভিমত?

অনিমেষ: কিছুই বলতে ইচ্ছে করে না। এখন যে যেমন পারছে করছে। ভাল মন্দ যাই হোক। এই থেকে যদি কিছু ভাল বই পাওয়া যায় তাহলে মন্দ নয়। কিন্তু আলতাবরি হলে তাতেই মুশকিল। বাকি কবি প্রকাশক দুজনেই বুদ্ধিমান।


খোঁজ: আপনার জীবনে প্রথম কবি কে?

অনিমেষ: আমার কেন সবারই বোধহয় জীবনের প্রথম কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।


খোঁজ: “মুদ্রিত বই বা পত্র-পত্রিকার বিকল্প ই-বুক বা ওয়েব ম্যাগাজিন হতে পারে না” - আপনি কী মনে করেন?

অনিমেষ: এটা খুব একটা সত্যি কথা না। তবে ওয়েব ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতে গিয়ে তিনবছর আগেও লকডাউনের সময় মনে হচ্ছিল বিকল্প হতে পারে। এখনও মনে হয় বিকল্প আলবাৎ হতেই পারে। কিন্তু একটা 'কিন্তু' এখানে থাকবেই তা হলো, মুদ্রিত বই বা পত্রপত্রিকার মতো আরাম আপনাকে দিতে পারবে না কিছুই। যতই আমরা ইবুক ওয়েবের দিকে যাই। যতই ডিজিটালাইজড হয়ে যাক জীবন। সাহিত্য মুদ্রিত মাধ্যমেই বরাবর আরাম দেয়।


খোঁজ: পড়ার জন্য কোনো পরিচিতকে বই দিয়েছিলেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত ফেরৎ দেয়নি - এমন কোনো অভিজ্ঞতা আছে?

অনিমেষ: হ্যাঁ এটা বোধহয় সবারই আছে কমবেশি। বড় হবার পর তেমন খুব একটা হয়নি। তবে ছোটবেলায় অনেক গল্পের বই পড়তে দিয়ে ফেরৎ পাইনি।


খোঁজ: সাহিত্য সাময়িকী হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা আদৌ কী আছে?

অনিমেষ: আছে যতই অস্বীকার করুক সবাই ভূমিকা অবশ্যই আছে।