অনিমেষ গুপ্ত
কেরোসিনের গন্ধে যেভাবে
আশপাশের হাওয়া বিচলিত
নির্জনতা ছেড়ে সেইভাবে
ভিড় হয়ে উঠছ ক্রমশঃ
বিবর্ণ দেওয়ালের গায়ে
জানলার পকেট, হুটোপাটি করে
চলে যাচ্ছে চায়ের চুমুকে গন্ধ রাখা রোদ
এমন সব নিরাপত্তাহীনতায়
আমাদের ঘর এক স্তিমিত আলোর উপপাদ্য।
![]() |
অলংকরণ : গুগল |
তৈমুর খান
আজ তুমি নাভি খুলেই রেখেছ
বর্ষার মেঘের মতো ফুলে ওঠা নাভি
সারাদিন জলের মতন পদ্য মুখস্থ করেছি
গাছের পাতার ছায়ায় তোমাকে দেখব বলে
একটু দাঁড়িয়েছি
আজ শ্রাবণের ক'তারিখ হল?
আজ বুঝি তোমাদের বিবাহ বার্ষিকী?
এতদূর কাদা পথ
সেও তো ফেরেনি বাড়ি!
পুকুর ঘাট থেকে ছড়িয়ে দাও আলো
কুচি কুচি সূর্যরোদ কুড়িয়ে নিক কবি
বাস থেকে নামল দ্রুত চোখ
হাঁটন তার দলবৃত্ত হোক
ভুরুর নিচে বৃষ্টি পাওয়া মরু
বসন্তের নতুন কোনও তরু
পিছনে তার পেছনটান ছিল
কাজল-চোখে ভোমরা উড়ে গেল
মোম-বিকেলে গুঞ্জনের বায়ু
দেখাল সে দীর্ঘপয়ার আয়ু
নাচমহলের খণ্ডৎ-ত বাঁশি
বাজতে বাজতে থামে কাঙাল হাসি
তেমনি চোখে করুণ ছায়ামায়া
সূর্য ঢাকা মেঘের প্রচ্ছায়া
দলবৃত্ত ছুটছে শ্বাসাঘাতে
রামধনুকের ঝিলিকমারা রাতে
সন্ন্যাসিতে আর যাবে না লোক
দলবৃত্ত ঘরের নদী হোক।
![]() |
অলংকরণ : গুগল |
নিলয় নন্দী
ট্রেনের হাতল নীচু হয়ে আসছে ক্রমশ
অথবা আমাদের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন
হুড়মুড়িয়ে নদী ঢুকে পড়ছে স্টেশনে
হাতলে ঝুলিয়ে রেখেছি বাচ্চাদের
বড়দের হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে পাখার ব্লেড
শূন্য পকেটের মিছিল চলেছে রেললাইন জুড়ে
বশীকরণ ট্রেন পিছু পিছু সচকিত হুইসল
ওভারহেড তারে প্রসন্ন কাক শুভস্য শীঘ্রম
নেমে যায় নেমে যাক আপদবিপদ
ব্লাউজের খোলা পিঠ দিলখুশ জড়িবুটি সোমরস
বাঁহাতে নদী থামালে বদলে যায় ট্রেনের গতিমুখ
সামনেই ব্রিজ নং ১৫ ঝুম ঝুম নিঃঝুম
আমি পালকের মত শুধু এ কামরা থেকে ও কামরা
![]() |
অলংকরণ : গুগল |
বৈজয়ন্ত রাহা
১
আমি হাঁটছিলাম,
জানি একদিন তোমার কিনারে পৌঁছোব ,
তোমাকে পেরিয়ে চলে যাবার পরে আবারও তোমার কিনারে।
বারবার তোমাকেই অতিক্রম করে তোমারই পাশে এসে পৌঁছোই।
তুমি বয়ে যাও,
আমার পৌঁছোন তোমার চোখেও পড়ে না।
আমি বুঝতে পারি আমিও বয়ে যাচ্ছি।
জল থেকে সূর্য উঠে আসে।
জল থেকে ডানা মেলে উৎসব।
তৃতীয় নয়ন খোলে।
তোমার চলে যাওয়ার মধ্যে শুয়ে থাকে ছুঁয়ে যাওয়া-
বাতাসের শরীরে জলের শব্দ।
২
ভালোবাসা অত সহজ নয়,
আনুপূর্বিক শরীরের তত্ত্বতাল্লাসির পর একটা সিগারেট ধরিয়ে বলাই যায় -'satisfied...'
আসলে থেকে যায় বাতাসের সম্পর্ক...
কিন্তু ভালোবাসা অত সহজ নয়।
ভালোবাসতে গেলে শিশু হতে হয়,
শিশুর মতো সরল, শিশুর মতো স্বার্থপর, শিশুর মতো বিস্মিত।
হাওয়ায় গাছের পাতা দোলে যখন, দেখেছো?
কত অনায়াস ছন্দ!!
অথবা জলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যাস্ত?
যা না থেকেও থাকে?
না পাওয়ার মধ্যে যে পাওয়া, না ছোঁয়ার মধ্যে যে ছোঁয়া,
তাকে দেখো-
জল বয়ে যাচ্ছে, জল কি দাঁড়ায়?
খালি বারান্দা হাতছানি দেয় চুপি চুপি-
'সে তোমাকে ভালোবাসে, তাই সে নেই'
রন্তিদেব সরকার
মঙ্গলধ্বনি পূবের আকাশ জুড়ে
অন্তরে আজ অরুণ-আলো মাখা -
দুর্নিবার সে টানের ধ্বনি কই ?
তরীখানি নোঙর জলে বাঁধা
ছলাৎ ছলাৎ নদীর ঘাটের পাড়ে
বৈঠা নিয়ে ছই-এ বসে রই।
গোধূলিতে সব পাখি বাসায় ফেরে
মনের মানুষ খুঁজে পেলাম কই ?
![]() |
অলংকরণ : গুগল |
কী খুঁজছি জানি না
তবু খোঁজার তাগিদে
শহরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে
পথে পা দিলাম যেই,
এক পশলা সবুজ বৃষ্টি ভিজিয়ে দিল আমাকে!
মাটির সোঁদা মন্ত্রে খুঁজে পেলাম জাতিস্মর প্রাণ—
পথের পাশের বটগাছকে বাবা বলে চিনলাম
আর অমলতাসকে মা!
ফলে টিয়ারঙ সে মায়ায়
নির্বাক শব্দে আচ্ছন্ন আমি
মাটি ভেদ করে জন্ম নিলাম দ্বিজত্বে।
সবুজ এ জীবনে নতুন করে
পথ এঁকে দিল উজান বাওয়া নদী এক—
তার দুকূল ছাপানো জলছায়ায়, পলিমাতৃক
খসে পড়েছিল যত তারা-
হয়তো, কালপুরুষের সুতীক্ষ্ণ তরবারি!
প্রাকৃত আমি যে আজও
অস্ত্রের ব্যবহার শিখিনি!
শীত নেমেছে জাঁকিয়ে বেশ
অকাল মেঘে আকাশ থমথমে
রোদের মুখে হিমানি পমেটম
ফলে রবিশস্যে ধসা রোগ
আর আক্রাগন্ডার বাজারে
খিদেও পায় ভীষণ
এ শীত-আর্ত জীবনে
গরম ভাত যদি পেতাম!
অমনি জার ঘর বাঁধে শিরদাঁড়ায়—
ভাত চাইলে দেশদ্রোহী বলবে না তো কেউ!
ভিজে শীত এমনি জড়িয়ে ধরে
আমাকে যে
আমি ক্ষ্যাড়কাঠ পুড়িয়ে আগুন জ্বালি
আগুন দেখলে কেমন যেন চুল্লির কথা মনে হয়!
মৃত্যু না শীতঘুম—কোনটা ভাল
ভাবতে ভাবতেই আর্ত এ শীতে বৃষ্টি ঝরে
এক হিমযুগ পারে জাগব আমি, আমরা
আপাতত নধর নটেটি জল পাক!
![]() |
অলংকরণ : গুগল |
সত্তাপ্রিয় বর্মন
আকাশে এত রাত নামে
এতবার -
নিভৃতে গোপনে সে কি কাঁদে?
অরণ্যেরও আছে দিনরাত্রি
মানুষের মতো সে কেমন মানুষ হয়ে যায়!
নদীদের মিলন বিরহ দেখি
ফুলে ওঠা ক্রোধ বা ঝরঝর কান্না -
এ পৃথিবী বাঙ্ময়
উৎসবে মহরতে মানুষের কোলাহলের মত
ফাঁকা মাঠে দাঁড়ালে ঘাসেদের চিৎকার শুনি-
মাটি বাতাস জল পাথর
প্রতিবেশী গাছপালা
গাছের নিচে
শুনি পাখিদের অর্কেস্ট্রা
পাথর ভেঙে ঝরনার উল্লাস নামে -
যেন পৃথিবীতে কোথাও কোনো যুদ্ধ নেই
অথবা যুদ্ধ যারা করে
তারা বিদায় নিয়েছে পৃথিবী ছেড়ে
ইতিহাসে -