কবিতার   কথা 

Jamini Roy, যামিনী রায়, প্রেমের কবিতা, কবিতা,
অলংকরণ : যামিনী রায় 



অনিমেষ গুপ্ত

নিরাকার


কেরোসিনের গন্ধে যেভাবে 

আশপাশের হাওয়া বিচলিত

নির্জনতা ছেড়ে সেইভাবে 

ভিড় হয়ে উঠছ ক্রমশঃ


বিবর্ণ দেওয়ালের গায়ে 

জানলার পকেট, হুটোপাটি করে 

চলে যাচ্ছে চায়ের চুমুকে গন্ধ রাখা রোদ


এমন সব নিরাপত্তাহীনতায় 

আমাদের ঘর এক স্তিমিত আলোর উপপাদ্য।


প্রেমের কবিতা, রোমান্টিক কবিতা, মৎস্য কন্যা,
অলংকরণ : গুগল


তৈমুর খান

শ্রীমতী মৎস্য কুমারী

 

 আজ তুমি নাভি খুলেই রেখেছ

 বর্ষার মেঘের মতো ফুলে ওঠা নাভি

 সারাদিন জলের মতন পদ্য মুখস্থ করেছি

 গাছের পাতার ছায়ায় তোমাকে দেখব বলে

                                        একটু দাঁড়িয়েছি


 আজ শ্রাবণের ক'তারিখ হল?

 আজ বুঝি তোমাদের বিবাহ বার্ষিকী?


 এতদূর কাদা পথ

 সেও তো ফেরেনি বাড়ি!


 পুকুর ঘাট থেকে ছড়িয়ে দাও আলো

 কুচি কুচি সূর্যরোদ কুড়িয়ে নিক কবি



দলবৃত্ত

 বাস থেকে নামল দ্রুত চোখ

 হাঁটন তার দলবৃত্ত হোক

 ভুরুর নিচে বৃষ্টি পাওয়া মরু

 বসন্তের নতুন কোনও তরু


 পিছনে তার পেছনটান ছিল

 কাজল-চোখে ভোমরা উড়ে গেল

 মোম-বিকেলে গুঞ্জনের বায়ু

 দেখাল সে দীর্ঘপয়ার আয়ু


 নাচমহলের খণ্ডৎ-ত বাঁশি 

 বাজতে বাজতে থামে কাঙাল হাসি

 তেমনি চোখে করুণ ছায়ামায়া

 সূর্য ঢাকা মেঘের প্রচ্ছায়া


 দলবৃত্ত ছুটছে শ্বাসাঘাতে

 রামধনুকের ঝিলিকমারা রাতে

 সন্ন্যাসিতে আর যাবে না লোক

 দলবৃত্ত ঘরের নদী হোক।



প্রেমের কবিতা, রোমান্টিক কবিতা, ট্রেন,
অলংকরণ : গুগল



নিলয় নন্দী

জার্ণি


ট্রেনের হাতল নীচু হয়ে আসছে ক্রমশ

অথবা আমাদের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন


হুড়মুড়িয়ে নদী ঢুকে পড়ছে স্টেশনে 

হাতলে ঝুলিয়ে রেখেছি বাচ্চাদের

বড়দের হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে পাখার ব্লেড

শূন্য পকেটের মিছিল চলেছে রেললাইন জুড়ে

বশীকরণ ট্রেন পিছু পিছু সচকিত হুইসল

ওভারহেড তারে প্রসন্ন কাক শুভস্য শীঘ্রম

নেমে যায় নেমে যাক আপদবিপদ

ব্লাউজের খোলা পিঠ দিলখুশ জড়িবুটি সোমরস

বাঁহাতে নদী থামালে বদলে যায় ট্রেনের গতিমুখ

সামনেই ব্রিজ নং ১৫ ঝুম ঝুম নিঃঝুম


আমি পালকের মত শুধু এ কামরা থেকে ও কামরা


প্রেমের কবিতা, রোমান্টিক কবিতা, কবিতা,
অলংকরণ : গুগল


বনমালী নন্দী
নন্দিতা


নন্দিতা 
মাঝে মাঝে নিজের কাছে দাড়ায় 
ছায়ায় কাছে, নিঃশ্বাসের কাছেও
যা হৃদয়ের প্রতিছবি
সেও মুখ ফিরিয়ে দাড়ায় 
চাঁদের জ‍্যোৎস্না থাকে 
থাকে ফুলের ঘ্রাণ 
নদীর আপন ঢেউ
আসলে আমরা সবাই একা একা
অন্ধকার শহরের মতন



বৈজয়ন্ত রাহা

জল ছবি 


 ১ 

আমি হাঁটছিলাম,

জানি একদিন তোমার কিনারে পৌঁছোব ,

তোমাকে পেরিয়ে চলে যাবার পরে আবারও তোমার কিনারে। 

বারবার তোমাকেই অতিক্রম করে তোমারই পাশে এসে পৌঁছোই।


তুমি বয়ে যাও, 

আমার পৌঁছোন তোমার চোখেও পড়ে না।

আমি বুঝতে পারি আমিও বয়ে যাচ্ছি।


জল থেকে সূর্য উঠে আসে।

জল থেকে ডানা মেলে উৎসব। 

তৃতীয় নয়ন খোলে।


তোমার চলে যাওয়ার মধ্যে শুয়ে থাকে ছুঁয়ে যাওয়া-


বাতাসের শরীরে জলের শব্দ।



 ২ 

ভালোবাসা অত সহজ নয়,

আনুপূর্বিক শরীরের তত্ত্বতাল্লাসির পর একটা সিগারেট ধরিয়ে বলাই যায় -'satisfied...'

আসলে থেকে যায় বাতাসের সম্পর্ক...

কিন্তু ভালোবাসা অত সহজ নয়।


ভালোবাসতে গেলে শিশু হতে হয়,

শিশুর মতো সরল, শিশুর মতো স্বার্থপর, শিশুর মতো বিস্মিত।


হাওয়ায় গাছের পাতা দোলে যখন, দেখেছো?

কত অনায়াস ছন্দ!! 

অথবা জলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যাস্ত?

যা না থেকেও থাকে?


না পাওয়ার মধ্যে যে পাওয়া, না ছোঁয়ার মধ্যে যে ছোঁয়া,

তাকে দেখো-


জল বয়ে যাচ্ছে, জল কি দাঁড়ায়?


খালি বারান্দা  হাতছানি দেয় চুপি চুপি-

'সে তোমাকে ভালোবাসে, তাই সে নেই'



রন্তিদেব সরকার

প্রতীক্ষা  


মঙ্গলধ্বনি পূবের আকাশ জুড়ে

অন্তরে আজ অরুণ-আলো মাখা - 

            দুর্নিবার সে টানের ধ্বনি কই ?


তরীখানি নোঙর জলে বাঁধা 

ছলাৎ ছলাৎ নদীর ঘাটের পাড়ে 

              বৈঠা নিয়ে ছই-এ বসে রই।


গোধূলিতে সব পাখি বাসায় ফেরে 

মনের মানুষ খুঁজে পেলাম কই ? 


গ্রামের বাড়ি, গ্রামের মানুষ, গ্রামের কবিতা, নদী, মাঠ,
অলংকরণ : গুগল




শতদল মিত্র

সবুজ-নদী-প্রাণ  


কী খুঁজছি জানি না

তবু খোঁজার তাগিদে

শহরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে

পথে পা দিলাম যেই,

এক পশলা সবুজ বৃষ্টি ভিজিয়ে দিল আমাকে!

মাটির সোঁদা মন্ত্রে খুঁজে পেলাম জাতিস্মর প্রাণ—

পথের পাশের বটগাছকে বাবা বলে চিনলাম

আর অমলতাসকে মা!

ফলে টিয়ারঙ সে মায়ায়

নির্বাক শব্দে আচ্ছন্ন আমি

মাটি ভেদ করে জন্ম নিলাম দ্বিজত্বে।

সবুজ এ জীবনে নতুন করে

পথ এঁকে দিল উজান বাওয়া নদী এক—

তার দুকূল ছাপানো জলছায়ায়, পলিমাতৃক

খসে পড়েছিল যত তারা-

      হয়তো, কালপুরুষের সুতীক্ষ্ণ তরবারি!

প্রাকৃত আমি যে আজও

       অস্ত্রের ব্যবহার শিখিনি!   



সব গল্পই নটেগাছের 

শীত নেমেছে জাঁকিয়ে বেশ

অকাল মেঘে আকাশ থমথমে

রোদের মুখে হিমানি পমেটম

ফলে রবিশস্যে ধসা রোগ

আর আক্রাগন্ডার বাজারে

খিদেও পায় ভীষণ

এ শীত-আর্ত জীবনে

গরম ভাত যদি পেতাম!

অমনি জার ঘর বাঁধে শিরদাঁড়ায়—

ভাত চাইলে দেশদ্রোহী বলবে না তো কেউ!

ভিজে শীত এমনি জড়িয়ে ধরে

 আমাকে যে

আমি ক্ষ্যাড়কাঠ পুড়িয়ে আগুন জ্বালি

আগুন দেখলে কেমন যেন চুল্লির কথা মনে হয়!

মৃত্যু না শীতঘুম—কোনটা ভাল

ভাবতে ভাবতেই আর্ত এ শীতে বৃষ্টি ঝরে


এক হিমযুগ পারে জাগব আমি, আমরা


আপাতত নধর নটেটি জল পাক!  



প্রেমের কবিতা, কবিতা, ইতিহাস,
অলংকরণ : গুগল



সত্তাপ্রিয় বর্মন

বাকি ইতিহাস 


আকাশে এত রাত নামে 

                           এতবার -

নিভৃতে গোপনে সে কি কাঁদে?

অরণ্যেরও আছে দিনরাত্রি 

মানুষের মতো সে কেমন মানুষ হয়ে যায়! 

নদীদের মিলন বিরহ দেখি 

ফুলে ওঠা ক্রোধ বা ঝরঝর কান্না -

এ পৃথিবী বাঙ্ময় 

উৎসবে মহরতে মানুষের কোলাহলের মত 

ফাঁকা মাঠে দাঁড়ালে ঘাসেদের চিৎকার শুনি-

মাটি বাতাস জল পাথর 

                         প্রতিবেশী গাছপালা 

গাছের নিচে 

শুনি পাখিদের অর্কেস্ট্রা 

পাথর ভেঙে ঝরনার উল্লাস নামে - 

যেন পৃথিবীতে কোথাও কোনো যুদ্ধ নেই 

অথবা যুদ্ধ যারা করে 

তারা বিদায় নিয়েছে পৃথিবী ছেড়ে 

                                        ইতিহাসে -