![]() |
গোলাম রসুল |
- মহাপৃথিবীর কবি, মহাজীবনের কবি গোলাম রসুল। তৈমুর খান।
গোলাম রসুল
গু চ্ছ ক বি তা
উড়ন্ত পাখিরা
যারা একটি একটি করে সরলরেখা খুলে দেয়
তারা যখন উড়ে যায় শিশির পড়ে
আর তৈরি হয় একটি করে বিচ্ছেদের আবেগঘন মুহূর্ত
দূরে পাথর আর মানুষ এক সঙ্গে কথা বলছে পরিপূরক হয়ে উঠে
যেন পূর্ণ সময়ের জন্য এক বেকার ধূসর
জলের ধারে দামী পোশাক পরা এক ঝাঁক দুঃখ
তারা অপেক্ষা করছে একটি অন্য গ্রহের জন্য
কিছুটা লম্বা রিবন পরা জীবন
বুঝতে পারছিলাম না কি ঘটছে ভেতরে
আর আকাশ সেখানে যা আশা করেছিলাম তা নেই
![]() |
অলংকরণ : গুগল |
দিন রাত্রি
অবশেষে পাথর এবং জলের সঙ্গে মিশে যাই
এখন আমি জল আর পাথর
দিন রাত্রি একটি ফাঁপা শব্দ ভেসে বেড়ায়
আর তার প্রতিধ্বনি শোনা যায় সর্বত্র
আমরা ফিরে আসি
দেখি দুঃখের কিনারায় আকাশ
জানি না কে রক্ষা করবে আমাদের জীবনের হাত থেকে
যখন আমরা শূন্যের দিকে এগিয়ে যাই জোরে ধাক্কা লেগে কাঁপতে থাকে
গভীররাতে একসময় নক্ষত্রের উঠোনময় বৃষ্টি নামে
পৃথিবীর ঘরে ফেরা
সমস্ত গ্রহে ঢোকার একটাই দরজা
এবং আমরা অপেক্ষা করে থাকি অনন্তকাল
আকাশ অনুপস্থিতি
দিশাহারা এক পয়ঃপ্রণালী দিয়ে মেঘ ভেসে যায়
দূরের সূর্য কিরণে আমরা সেই বৃষ্টির কণ্ঠস্বর শুনতে থাকি
সময়ের কঙ্কাল
পাথরের ওপর তেল চলকে পড়ে
সহসা আলোগুলো জ্বলে ওঠে
আতরের গাছ
শিশুদের কান্নাগুলো কুসুমকুড়ির মতো
তার ওপর শিশির পড়ছে
সম্ভবত এক একটি অস্থায়ী দুর্গ
নিয়ন্ত্রিত হয় পৃথিবীর ঘরে ফেরা
ধীরে নেমে আসে এক অনুপস্থিতি
ব্যথিত মেঘেদের
দিগন্ত দিয়ে ওদের কারারুদ্ধ করা যায় নি
চলে যাওয়া ধূসরমালা
শূন্য থেকে শূন্য সেতুগুলো পাহারা দেয় ওদের
এমন সময় আকাশে মৃতেরা জেগে উঠেছে
যারা মারা গিয়েছিল বন্দিশালায় নৈঃশব্দ্যের সঙ্কটে
নির্যাতিত বালি ধুধু করছে
প্রাগৈতিহাসিক বৃষ্টি
আমি আয়নায় দেখছিলাম ব্যথিত মেঘেদের
তারা চলে যাচ্ছে
আর তাদের হাতে হাতে রয়েছে একটা বড়সড় সূর্য
প্রসারিত ডানার মতো
যে পক্ষীদানবকে আমরা চিনতাম না তার আগমন
আমাদের কবর গুলোও ডানা ঝাপটায়
আর এখান থেকেই আমরা পূর্ব পুরুষদের স্বল্পস্থায়ী উপস্থিতি গুলো জেনে নিই
ধূসর অবকাশ
শুধু ডানার ছায়া
তাদের নৈঃশব্দ্য
আর সে সব মানুষের অনুকরণে তৈরি
যেভাবে জলের ভেতর দিয়ে মেঘ চলে যায়
সাবমেরিনের তারে জড়িয়ে রয়েছে আকাশ
আমাদের সামনে সময় এবং সূর্য কোনটাই নেই
শুধু একটাই দরজা চলে গেছে
গভীর রাত
কথা নেই
নিদারুণ জিভ অতলান্তিক তলিয়ে
কোনো এক সূর্যের মধ্যে দেখি মাটির দেয়াল
দেয়াল গুলোর ওধারে অস্থি গুলো ফুটে রয়েছে
কোনো লক্ষ্য নেই
সংযোগ
পৃথিবী আর আমার সংযোগের স্থানটি একটি ক্ষতের মতো
সেখান থেকে একটি গিরিখাত নেমে গেছে আরও নিচে
নিঃশেষিত আমি সেই দূরত্ব থেকে আমার কন্ঠস্বরকে ভগ্নদূত হিসেবে পাঠিয়েছিলাম সূর্যের পর্বতমালায়
রাতের পর রাত কেটে গিয়েছিল
মহাশূন্যের ধূসর অবকাশে আমাদের ব্যথার অংশ চাঁদ
ছিটকে গিয়ে অনুসরণ করছে আমাদের
বজ্রপাতের পাথর গুলো নক্ষত্রের মতো জ্বলছে
আমি যে নরকের জলাভূমিতে জন্মেছিলাম বেশ বোঝা যায়
না আমি জন্মেছিলাম পাথরের ভেতরে
আর কোনো জাদুকর প্রদর্শন করছে আমাকে সন্ধ্যার মেঘের মধ্যে ঠিক তার বৃষ্টির অতুলনীয় মূহূর্তে
ধাতুর হাতের মুঠোর মতো বৃষ্টি পড়ছে সর্বক্ষণ
বন্ধ পাখনা নিঃশ্বাস ফেলছে আমার দরজার কাছে এসে
মহাশূন্যের এক মাটির ঘরে আমি আমার অস্তিত্বের ঘন অন্ধকার
বন্ধুর মতো রাত্রি
এই রাত্রিতে অরণ্যের পালকির ভাঁজ আমাকে তুলে ধরে
উড়ে যাওয়া ডানা গুলো সংগঠিত করে তোলে আকাশজাহাজের শ্রমিকদের
আবার তারা হারিয়ে যায় সমুদ্রের জলের দীর্ঘ ঘুমের ভেতরে
বিধ্বস্ত পাথর আমি
শুধু নক্ষত্র শিখায় জ্বলতে থাকি নিঝুম জলের ওপরে
জীবনের জন্য এক গুচ্ছ মেঘ
তাই আমি সমুদ্রের ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘকে নির্বাচন করে নিয়েছি
আর সেই দুটি ডানার সৌহার্দ্য যা আমার নিজস্ব গৃহ
তারপর ওসব শুধু কান্না ঝরা দিগন্ত ভেদ করে চলে যাচ্ছে পাখিরা
সন্ধ্যা নামছে
রহস্য ঘেরা আমি
কে আমাকে দিয়েছিল পৃথিবীর মতো গোল একটি পান পাত্র
আর আমি পান করছিলাম যখন আমার কপালে ঠেকে যাচ্ছিল আকাশের মাস্তুল
দূরে সংগীতের শব্দ বোঝাই জাহাজ
বন্ধুরা সব চলে গেছে ওই জাহাজের দুঃখের সঙ্গে
তারা কোনো দিন আর ফিরবে না জানি
তাও ফিরে আসে মেঘ
বৃষ্টি নামে
তাই আমি নির্বাচন করে নিয়েছি সমুদ্রের ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ