আঞ্চলিক    কবিতা  

খোট্টা ভাষা, আম, ভোট, খুট্টা ভাষা, মালদা, আঞ্চলিক ভাষা, আঞ্চলিক কবিতা,
অলংকরণ : গুগল



রী তা  রা য়

ঘাঁটো ফুল  


ঘাঁটো ফুল, ঘাঁটোফুল কেকর সঙ্ তু বিহা রচাবিন?

বিহানবেলা উঠি গেলিন, দোপহরীও বিতি গেলই গে,

ভাট্টিবেলা এক্কিঠিনা বৈঠি তু কেকর ঘাঁটা দেখেলছিন?

ঘাঁটো ফুল, ঘাঁটোফুল কেকর সঙ্ তু বিহা রচাবিন?


অঙ্গ ভরি গেলই তোর ধূলাউলা মাখিয় গে 

সুন্দর সুন্দর মুখ তোর মুর্ঝি গেলই রুখিয় গে 

তইও তু ঘাঁটা দেখিন, ঘর কন নই আবলছিন? 

ঘাঁটো ফুল ঘাঁটো ফুল কেকর সঙ তু বিহা রচাবিন?


আকন্দ আর ধতুরা তোর আগুপাছু ঘুরলছিও গে 

তোর বিনা শিব ভোলানাথ সন্তুষ্ট নই হইলছিও গে 

তইও তু উদাস হোকর কেকরো কনঅ খোঁজোইছিন 

ঘাঁটোফুল ঘাঁটোফুল কেকর সঙ তু বিহা রচাবিন?


চৈত-বৈশাখ মাহিনাম শিরুয়া পরব আবলছিও গে

ঘর ঘর ঘাঁটোপূজা ছৌড়িসনি করলছিও গে

ঘাঁটোবেদী উপ্পর তু কেত্তে সুন্দর লাগলছিন 

ঘাঁটোফুল 'ঘাঁটো' সঙ ইবার তোর বিহা রচালীন।

                     

• শব্দার্থ : ঘাঁটোফুল - ঘেঁটুফুল, বিহা - বিয়ে, ঘাঁটা দেখিন - পথ চেয়ে থাকা, বিহানবেলা - সকালবেলা, ভাট্টিবেলা - বিকালবেলা, ঘাঁটোপূজা - কুমারী মেয়েদের ব্রত ( বিশেষজ্ঞরা একে চর্মরোগের দেবতা ঘন্টাকর্ণ পূজা মনে করে), শিরুয়া - নীলপূজা থেকে ১লা বৈশাখ অব্দি বিশেষ পূজা সহকারে নববর্ষ উদযাপন যার একটি অংশ 'ঘাঁটোপূজা'


মালদা, Malda, আঞ্চলিক কবিতা,
অলংকরণ : গুগল



বহু


চৌদ্দ বচ্ছর বয়স যখনি ছৌড়িঅ বাপ দেলকো বিহা  

গনগনিয়া যৌবন তুষঅ আগিন মতন গেলই মিহা।

গোদিয়ো চেংড়া পেটেম আলো, বর গেলই কামম,

গাঁ ঘর ছোড়ছাড়ি বহুদ্দুর শহরম, ভিন দেশম।

যায়েবেলা বোলিও গেল, "যাহিন বাপঅ ঘর 

হাজার পাঁচঅ টাকা আনহিন নঈতো যাবই ছোড়"।

হাতঅ চুরি চাঁদিঅ মাল্লা সব্বেকুছ বেচি দেলো 

চেংড়া দুটায়া মুখ দেখকর ছৌড়ি বাঁচিয় রহলো ।

বর নঈ আবই বচ্ছরভর, ঘাঁটা দেখেই উ

ছা দুটাআ শুক্কা মুখম ভাত নঈ জুটা পাবয়ু ?

ছোটকা মুখঅ রা নঈ ফুটলো, বড়কাটা ছে লুল্হা

দানাউনা ওড়াআ গেলই, ঘরম নঈ ধরঈ চুল্হা।

মায়অ মন না মানই কুচ্ছু, গেলই বাহার কামম

ঘরঅ বহুউ হলো লেবার, অপনি জিম্মা কান্ধাম।

যোগাড় দেইঈ, অইট বহি, আশা জাগঈ বুকম

ছা সনিঅ ভাত জুটঈ, ফুটলো হাঁসি মুখম।

 

• শব্দার্থ : তুষঅ আগিন - তুষের আগুন, ঘাঁটা - রাস্তা, লুল্হা - পঙ্গু, চুল্হা - উনুন, অইট - ইট, ছা সনি - ছেলেপুলে 




ভোট


ভোট দেলে যাহিন গে কনিয়া ভোট দেলে যাহিন?

পরথমবার ভোট ইবার তোর আঠার পার করলিহিন।

ফুর্তি উঠ যাহিন বিহানী, কাম-উম করিয় লাহা-ধো লীন 

অচ্ছাসে সাবুন-উবুন ঘিষীয় উঙলী সাফফা করলীন।

তেল সিনুর মাখিয়, মাথা বানহিয় লয়া ভুন্নী পহনলীন

সব্বেকোই দল বানহিয় ভোট দেলে যাহিন।

তোর একটা ভোট কেত্ত দামি ইবার তু বুঝল পারবিন,

পাঁচ বছরম এক্কিটা দিন হমরারি হইছিও স্বাধীন।


• শব্দার্থ : কনিয়া - কনে বৌ, বিহানী - সকালবেলা, পরথম - প্রথম, লাহানা - স্নান করা, ফুর্তি - তাড়াতাড়ি, উঙলী - আঙ্গুল, সিনুর - সিঁদুর, ভুন্নী - শাড়ি, লয়া - নতুন, হামরারি - আমরা 




আম


আম চুনল চল গে ছৌড়ি আম চুনল চল 

বাতাস উঠলো আহ্নি আবৈ বাগানম গিরী ফল।

কাচ্চা আম-অ আঁচার দেবৈ আর কুচ্ছু ডালবো খট্টাম

পুঁদিনা দে ক চটনি বানাবৈ পিষবৈ লোড়া পাট্টাম।

কটিয় অরিহন মসলা মিশায় খাবৈ আমঝাম

রাহ্নবো রাতি ভাত তরকারি আর ডালম দেবৈ আম। 

পাক্কা আমঅ ছানবো আমতা, খাবৈ বচ্ছর ভর

বেশি হলো তো বেচবই আমতা আর খট্টা বাহার।

হকরবকর কাম করলে পাঁওম উঠতো ছাল 

দু-চার টাকা হাতম আতো, মজা করলিন কাল।


• শব্দার্থ : আম চুনল - আম কুড়োতে, আহ্নি - প্রবল ঝড়, অরিহন - পাঁচফোড়নভাজা গুঁড়ো, ছানবো - শুরু করবো, আমতা - আমসত্ব, খট্টা - আমচুর, হকরবকর - তাড়াহুড়ো 



• মালদহ জেলার দিয়ারা ও টাল অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলের ভাষা 'খোট্টা বা খুট্টা'। উচ্চারণে একটু পশ্চিমী টান। তবে হিন্দি বা ভোজপুরি কোনোটাই নয়। প্রাচীন আওধী বা মাগধি ভাষার ক্রমবিবর্তনে খোট্টাভাষার উদ্ভব। এটি কোনো উপভাষা নয়। এই ভাষার বেশির ভাগ শব্দ পুরোনো দিনের বাংলার মতোই, শুধু উচ্চারণে মৈথিলী ও গুজরাটি টান। ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র সহ ওই অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়েরও মাতৃভাষা খোট্টা যা বর্তমানে অবলুপ্ত হতে বসেছে।


ঘেঁটুফুল, ভাট ফুল, মহাদেবের প্রিয় ফুল,
© গুগল