শারদ সংখ্যা
![]() |
বামদিক থেকে ডানদিকে: রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী এষা মিত্র, এলিজাবেথ গুন্থার, রন্তিদেব সরকার, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। পিছনের সারিতে - সমীরণ মিত্র এবং রিনা সরকার। |
অলোকরঞ্জন ও এলিজাবেথ গুন্থার
- প্রাচী প্রতীচ্যের মিলন
স্মৃতিচারণায় : র ন্তি দে ব স র কা র
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ভারতীয় কাব্য-সাহিত্যে এক বিরল মনীষা। তিনি পঞ্চাশ-দশকের কবি বলে বর্ণিত হন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যৌবন বাউল’ ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয় এবং সেই প্রথম কাব্যগ্রন্থ দিয়েই তিনি বাংলা কাব্যজগতে নিজের নাম খোদাই করে ফেলেন। বস্তুতপক্ষে এমন ধারার বুদ্ধিদীপ্ত এবং বহুধাবিভক্ত বিষয়বস্তু নিয়ে কবিতা বাংলা কাব্যজগতে তাঁর আগে কেউ লেখেন নি। এবং ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে তিনি বোধহয় সমসাময়িক সমস্ত কবিকে ছাপিয়ে গেছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আকাদেমিক ঘরানায় বাস করেছেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধদেব বসুর আবাহনে তুলনামূলক সাহিত্যে ও পাশাপাশি পরবর্তীকালে বাংলাভাষার অধ্যাপনা করেছেন । সেই পঞ্চাশ দশকের শেষার্ধে তিনি তাঁর কাব্যজীবন ও পেশাজীবন অর্থাৎ অধ্যাপনা পাশাপাশিভাবে চালিয়ে নিয়ে গেছেন। ইতিমধ্যে ‘যৌবনবাউল’-এর পর পরপর ‘নিষিদ্ধ কোজাগরী’, ‘রক্তাক্ত ঝরোখা’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থগুলি আলোড়ন জাগিয়ে তুলেছে সারা বাংলার বিদ্দ্বজন মহলে এবং কবিতা-প্রেমিদের মধ্যে। ইত্যবসরে অলোকরঞ্জন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৫৫ সালে। এরপর তার কর্মজীবনের শুরু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রায় নতুন বিভাগ- তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে বুদ্ধদেব বসুর নেতৃত্বে। এর সাথে রামতনু লাহিড়ির সহকারী হিসেবে গবেষণা শুরু। বিষয় ছিল – ‘ভারতীয় লিরিক রূপকল্পের উৎস ও ক্রমবিবর্তন’। ১৯৬২ সালে গবেষণা অন্তে প্রথম ইংরেজি গ্রন্থ– The Lyric in Indian Poetry. এরপর ১৯৭১ সালে তিনি ‘আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্ট ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে ফেলোশিপ অর্জন করেন এবং জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভারততত্ত্ব’ বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। সংগী সহকর্মী হিসেবে ছিলেন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ লোথার লুৎসে। ১৯৭৫ সালে গ্যেয়েটে ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের প্রকাশনায় একটি পূর্নাংগ বই লেখেন। এই বছরেই তিনি ট্রুডবার্টা হেসলিঙ্গার-এর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ‘লঘু সঙ্গীত ভোরের হাওয়ার মুখে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘সুধা বসু’ পুরষ্কারে ভূষিত করে ১৯৮৪ সালে। তাঁর ব্যাপক ও বিস্তীর্ণ সাহিত্যমুখী কাজকর্ম এবং ভারত ও জার্মানি- দুটি দেশের মধ্যে যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনে প্রয়াসী হন বিশ্বনাগরিকতা ধারনার বশবর্তী হয়ে, দু-দেশের সাহিত্যকর্মের পারষ্পরিক অনুবাদের মাধ্যমে তার স্বীকৃতিস্বরূপ জার্মানি সরকার তাঁকে জার্মানির সর্বোচ্চ সাহিত্যক্ষেত্রের পুরষ্কার ‘গ্যেটে পুরষ্কারে’ ভূষিত করে ১৯৮৫ সালে। এর পরেও বহু পালক তাঁর মূল্যবান মুকুটে শোভিত হয়েছে একের পর এক।
• ১৯৮৪ : সুধা বসু স্মৃতি পুরষ্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
• ১৯৮৫ : গ্যেয়টে পুরষ্কার, গ্যেয়টে ইন্সটিটিউট, মিউনিখ, জার্মানি; আনন্দ পুরষ্কার, কলকাতা
• ১৯৮৭ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরষ্কার, ইন্দো-জার্মান এসোসিয়েশন, স্টুটগার্ট
• ১৯৯১ : শিরোমণি পুরষ্কার, কলকাতা
• ১৯৯৩ : সাহিত্য আকাদেমি পুরষ্কার
উপরোক্ত পুরষ্কারগুলি ছাড়াও পেয়েছেন নজরুল পুরষ্কার, বিদ্যাসাগর পুরষ্কার এবং অরবিন্দ পুরষ্কার। পুরষ্কার ছাড়াও তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন বিভিন্ন সময়ে, দেশে ও জার্মানিতে।
এলিজাবেথ গুন্থার শিক্ষতা করতেন ন্যুরেমবার্গ-এ। তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও অনুবাদক। আর তিনি ছিলেন অলোকরঞ্জনের এক একনিষ্ঠ পাঠক। তিনি শুধু অলোকরঞ্জনের টানে বহুবার ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেছেন। সেই ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে চিনেছেন, জেনেছেন পরতে পরতে এবং তার উপর ভিত্তি করে ভারতবর্ষের উপর বই লিখেছেন – ‘শ্বাসপ্রশ্বাসে ভারত আমার’। সেই বইটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এবং ইংরেজি ও বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এলিজাবেথের সঙ্গে আমার পরিচয়, অলোকদার সুবাদেই এবং অলোকদার বাড়িতেই। আমার প্রথম প্রকাশনা অলোকদার কবিতা নিয়ে ইংরেজিতে অনুবাদ সঙ্কলন Scripted On Silvery Wings (2007) তারপর অলোকদার উৎসাহে আমি ও এলিজাবেথ যৌথভাবে অলোকদার কবিতার ইংরেজি অনুবাদে দুটি সঙ্কলন প্রকাশিত করি- Mosaics of a Rainbow Bridge এবং The Ether Shirt With Anguished Strokes এবং এই দুটি বই ভারতবর্ষেই প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধে এই দুই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লেখা হয়েছে।
বেশ, সংস্কৃতি বলতে তুমি কি বোঝো ?’... আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হল- ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’। তা শুনে অলোকদা যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন- ‘বাহ্ ! দারুণ বলেছ। এটাই আমাদের শ্লাঘা, আমাদের একমাত্র ঐহিক গর্বের বিষয়।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আমি তখনো দুর্গাপুরে থাকি। অলোকদা কলকাতায় থাকাকালীন আমি প্রতি উইকএন্ডে কলকাতায় বোন এষার বাড়ি চলে আসতাম। তেমনই এক রোববার, সবে ঘুম থেকে উঠে বেশ আয়েশ করে চা খাচ্ছি, সেই সক্কাল সক্কাল অলোকদার ফোন। জরুরি তলব। নাস্তা চটপট সেরে গাড়ি চালিয়ে অলোকদার ‘দৃষ্টিকোণ’-এ হাজির। ডোরবেল বাজাতেই অলোকদা স্বয়ং দরজার ওপারে। ‘কি ব্যাপার অলোকদা, একেবারে জরুরি তলব ? শরীর কুশল তো ?’ ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। এখানে বোসো, কথা আছে। ঘরে আর কেউ নেই। মুখোমুখি অলোকদা আর আমি, সোফায় সামনা-সামনি। ‘এলিজাবেথ আসছে। কলকাতায় এই প্রথমবার। পরের সপ্তাহে কলকাতায় চলে আসার কথা। আমাকে ফোন করেছিল। উঠবে এসে আলিপুরে হোটেল তাজ বেঙ্গল-এ। আমাকে তাজ বেঙ্গল-এ যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কিন্তু,আমি বলেছি আমি তোমার হোটেল-এ কেন দেখা করতে যাব ? হোটেল হচ্ছে হোটেল। তাচ্চেয়ে আমার বাড়িতে তুমি এসো, এসে দ্যাখো আমরা কেমন জায়গায় থাকি, কেমন আমাদের জীবনযাপন; যতই হোক, যেমনই হোক, এটা তো বাড়ি। আর বাড়ি হচ্ছে বাড়ি। ঘরোয়া একটা ব্যাপার থাকতে হবে তো, ঠিক বলিনি আমি ?’ বলেই আমার দিকে আমার সমর্থনের আশায় তাকিয়ে রইলেন। আমিও সম্পূর্ণ সহমত জানালাম অলোকদার এই সিদ্ধান্তে। দৃশ্যতই খুশির ঝিলিক দেখলাম চোখে। ‘হ্যাঁ, পরের ধাপগুলোই খুব গুরুত্বপূর্ণ আর এজন্যই তোমাকে সাত-সকালে ডেকে নিলাম। পরক্ষণেই অন্দরমহলে সেই ব্ল্যাক কফির বরাদ্দ জানালেন। বলতে না বলতেই অলোকদার চিরসাথী পরমাত্মীয় চন্দন-দা দুই কাপ ধূমায়িত ব্ল্যাক কফির ট্রে রেখে দিয়ে গেলেন। আমরাও পরবর্তী আলোচনা শুরু করলাম কফির কাপে চুমুক দিয়ে। পরের আলোচনা যতটা না করণীয় তার থেকে বেশি আকাদেমিক হয়ে উঠল। যেমন অলোকদা শুরু করলেন-‘আচ্ছা রন্তি, এলিজাবেথকে আমন্ত্রণ তো খুব জানালাম কিন্তু এটাও তো ঠিক, বৈভব, জাঁকজমক, বিলাসিতা, প্রাচুর্য, এইসব দিয়ে তো আমরা এলিজাবেথকে ছাপিয়ে যাবার চেষ্টা করব না, কারণ তা আমাদের সঙ্গতির বাইরে। সুতরাং ঐ রাস্তায় আমরা নিশ্চয়ই হাঁটব না, কি বলো ?’ আমিও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম-‘একদম ঠিক’। অলোকদা দৃশ্যতই খুশি হলেন। ‘তাহলে তুমিই বলো, আমরা ঠিক কিভাবে ওকে বরণ করব ?’ এটা শুনে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল –‘আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি দিয়ে।‘ আমার প্রতিক্রিয়া শুনে অলোকদার সহর্ষ প্রতিক্রিয়া –‘একদম। এমন উত্তরই তোমার কাছে প্রত্যাশা করেছিলাম। বেশ, সংস্কৃতি বলতে তুমি কি বোঝো ?’ এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাকে খুব বেশি ভাবতে হয়নি। বরং বলা যায়, প্রতিবর্ত প্রতিক্রিয়ায় আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হল-‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’। তা শুনে অলোকদা যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন- ‘বাহ্ ! দারুণ বলেছ। এটাই আমাদের শ্লাঘা, আমাদের একমাত্র ঐহিক গর্বের বিষয়। বেশ তা না হয় হলো। এইবার আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবতে হবে এক্ষুণি। তোমার পরের কাজ হবে, এই ব্যাপারটা নিয়ে আজই এষার সঙ্গে কথা বলো। ওই আমাদের পাড়ানির কড়ি। ওকে বলো, আমি বলেছি, এই প্রেক্ষিতে ওর পছন্দের দুটো ‘ঢালা’ গান বাছতে। সেটা আমাকে ফোনে জানাও। তারপর তোমার কাজ হবে ঐ গান দুটোকে অনুবাদ করে তোমার প্রিন্টারে দুটো প্রিন্ট আউট বের করে আমাকে একবার দেখাও, তারপর আরো কয়েকটা কপি বের করে রেখে দাও তোমার কাছে আর এষাকে খালি গলায় একটু রেওয়াজ করতে বলো।’ এক নিশ্বাসে এতগুলো কথা বলে থামলেন। আমি অলোকদার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছি আর ভাবছি, কি আন্তরিকতা দিয়ে তিনি গোটা ব্যাপারটাকে ভেবেছেন এবং ভিতরে ভিতরে এর একটা রূপরেখা তৈরি করে ফেললেন, মুহূর্তের মধ্যেই। আমি আর কালবিলম্ব না করে অলোকদার কাছে বিদায় নিয়ে বাড়িমুখো হলাম। গিয়েই ব্যাপারটা এষার কাছে বললাম। সব শুনে এষারও বেশ একটা উদ্দীপনা দেখলাম। এবং সাথে সাথেই এমন একটা অভিনব দায়িত্ব পেয়ে গীতবিতান নিয়ে বসে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পাতা উলটে আমাকে দুটো গানের কথা বলল। একটা হলো-‘আমি রূপে তোমায় ভোলাব না’ আর অন্যটি বাছল-‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে’। বাঃ খুব ভালো। সঙ্গে সঙ্গে আমি অলোকদা ফোনে এষার গান নির্বাচন নিয়ে জানালাম। অলোকদা, এমন ত্বরিত অগ্রগতি দেখে তাঁর সন্তোষ প্রকাশ করলেন আর স্বভাবসিদ্ধ প্রণোদনায় এষাকে অভিনন্দন জানাতে বললেন। অতঃপর আমিও বসে গেলাম খাতা-কলম বাগিয়ে, তর্জমার কাজে। বিকাল নাগাদ অনুবাদ কমপ্লিট। দুটোরই একটা করে প্রিন্ট-আউট কপি নিয়ে বিকাল পাঁচটার মধ্যে অলোকদার বাড়ি পৌঁছে গিয়ে অলোকদার হাতে গান দুটো হ্যান্ডওভার করে দিয়ে সোফার এক কোণে বসে রইলাম দুরু দুরু বক্ষে। এত তাড়াহুড়ো করে অনুবাদ তো করলাম। সাপ-ব্যাং কি হলো, কে জানে। দেখতে দেখতেই অলোকদার সম্মতিসূচক মাথা নড়ে উঠলো। আমিও টেনশনমুক্ত হলাম। অলোকদা আমাকে অভিনন্দিত করলেন। ‘খুব ভালো অনুবাদ হয়েছে। আমি জানতাম।‘
নির্দিষ্ট দিনে বিকাল পাঁচটায় এলিজাবেথ গুন্থার, কবি এবং জার্মানির ন্যুরেমবার্গ শহরের এক স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক, তাজ বেঙ্গল-এর শ্যেফার-চালিত গাড়িতে এসে অলোকদার যাদবপুরের বিনীত, মধ্যবিত্তিয় আবাসন, ‘দৃষ্টিকোণ’-এ পদার্পণ করল। আমরা সবাই, অলোকদা, চন্দন দা, এষা, আমি মিলে এলিজাবেথ-কে অভ্যর্থনা জানালাম। এষার উপর দায়িত্ব ছিল পুষ্পস্তবক দিয়ে এলিজাবেথকে সম্মানিত করার। এলিজাবেথ আপ্লুত এই আন্তরিক সম্বর্ধনায়। চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক দিচ্ছিল এমন ভারতীয় সাদর আপ্যায়নে। আমাদের সবার সাথে আলাদা আলাদা ভাবে অলোকদা পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর স্ন্যাক্স, মিষ্টি আর ব্ল্যাক কফি সহযোগে সারা হলো সান্ধ্য জলখাবার। এরপর এলিজাবেথ-এর হাতে অলোকদা তুলে দিলেন দুটি গানের তর্জমার প্রিন্ট-আউট। এলিজাবেথকে সংক্ষেপে বুঝিয়ে দিলেন অলোকদা, আমরা কি করতে যাচ্ছি। শুনে খুব খুশি হলো এলিজাবেথ। খুব মনযোগ দিয়ে ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…’ গানটির ইংরেজি তর্জমা পড়ল এলিজাবেথ। চোখে মুখে মুগ্ধতা। অলোকদার চোখ ‘ভরিল গৌরবে’। এরপর এষা গাইল গান খালি গলায়। গানটি গাওয়া হলে এলিজাবেথের চোখে নিথর বিস্ময়। এইবার ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি…’ র গানটা নিবিষ্ট ভাবে পড়ার হলে এষা দ্বিতীয় গানটি গাইল। এইবার এলিজাবেথের দুই আনত আঁখির কোণা চিকচিক করতে লাগল। অলোকদারও এমন গদগদ চিত্ত আগে আমি দেখিনি। সারা ঘরে পিন পরলে তার শব্দ শোনা যেত। একটু সময় লাগল গানের ঐন্দ্রজালিক রেশ কেটে উঠতে। পরক্ষণেই যথারীতি উচ্ছ্বল। এলিজাবেথ এষাকে কাছে ডেকে নিয়ে তাকে নানান প্রশ্ন করতে লাগল। অলোকদা এরপর আমাকে এলিজাবেথ-এর কাছে ডেকে নিয়ে আমার সম্বন্ধে আমার অনুবাদকর্ম নিয়ে বিশদ বলে আমার সদ্য প্রকাশিত অলোকদার কবিতার অনুবাদ সংকলন বইটি এলিজাবেথ-এর হাতে তুলে দিতে বললেন। আমি সেইমত তুলে দিলাম তৎক্ষণাৎ। এলিজাবেথ পেয়ে খুব খুশি হলো আর আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করল।