শারদ সংখ্যা
![]() |
অলংকরণ : কেভিন স্লোন |
অ র্ঘ্য ক ম ল পা ত্র
নিরুত্তাপ মানুষের গায়ে রোদ পড়লে, ড্যাম্প কেটে যায়। তখন শহরজুড়ে মিছিল বেরোয়। সমস্ত মিছিলের ধর্ম খানিকক্ষণ জেগে থাকা। সমস্ত মিছিলের সামনে একটিই মুখ। এবং রাস্তা চওড়া হলে, মিছিলও ক্রমশ রোগা হতে থাকে...
প্রতিটি রোগা মিছিলের রোগা রোগা হাত, ভারী কিছু বইতে অক্ষম৷ তাই তুলে নেয় — পছন্দমতো পতাকা
অবশিষ্ট
কিছু লোক, একদিন প্রথমবারের জন্য শ্মশানে আসে। মৃতদেহ পুড়িয়ে, ফিরে যায়...। তারপর থেকে, তাদের পরিচিত কেউ মরলেই, মফস্বলি শ্মশানে ওই লোকগুলোই মরা পোড়াতে আসে...। প্রতিবার তারা দ্যাখে— শান্ত-শীতল দেহ, বুজে আসা চোখ, কান্নাকাটি, আগুন, ছাই, গঙ্গার ঘোলাটে জল।
এবং প্রতিবার মরা পোড়ানোর শেষে, মদ খেতে খেতে তারা শপথ করে— নিজেদের আরও সুস্থ রাখতে হবে। আরও কিছু দেহকে পোড়াতে তাদের শ্মশানে আসতে হবে এখনও…
সফলতা
প্রত্যেকদিন রাত্রে হাতের শিরা কেটে ফেলি। আর গলগল করে শরীরের রক্ত বেরিয়ে যেতে থাকে। ভাবি, এইবার আত্মহত্যা সফল হবে। কিন্তু পরের সকালে অবশ্যম্ভাবী ঘুম ভাঙেই। এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই, আমি বুঝতে পারি — মৃত্যু আসলে এক স্বপ্নহীন ঘুম। তাই প্রত্যেক সকালে, এই পুনর্জন্ম পেয়ে, আমার মনে হয়— জন্ম এক সহজলভ্য বস্তু। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী মৃত্যু? অগত্যা প্রত্যেকদিন রাত্রে হাতের শিরা কেটে ফেলি ব্লেড দিয়ে। ভাবি, এইবার, ঠিক এইবার…
অ নি মে ষ গু প্ত
তোমার জন্যমহাসত্তা, অস্তিত্ব-ফসল
তার মেঘ তার আকাশ পল অনুপল
মাটি বাজছে শান্ত এবং প্রতিধ্বনিময়
ওঁ স্বাহা পূত অগ্নি হে—
এই নাও এজন্মের যন্ত্রণা-সমিধ।
তোমার জন্য কড়া নড়লে
কিংবা কোনও বন্ধ দরজা
হঠাৎ খুলে গেলে—
কখনো বলিনি, ‘কীগো,
একবারও দেখবে না ফিরে?
৩
দেখে এসেছি রাধাচূড়ার নীচে
শেষ চৈত্র দাঁড়িয়ে আছে একা
বেস্পতিবারের আকাশ। হাওয়ায়
হাওয়ায় চাঁপাকলা, কর্পূরের গন্ধ—
খোলা জানলায় দোল খায় স্নানরতার লতা
পুরুষ চোখের ডাগর টেনে তোমার দিকে তাকাই—
কেন যে আর সহ্য করতে পারনা আমায়!
৪
চৌবাচ্চার পাড় ধরে সামনে
ঝুঁকেছ। গভীর জলে প্রতিটি
রেখা নিখুঁত।
প্রতিফলন ব্যাপারটাই অদ্ভুৎ-
যা দেখে তার সবটুকু দেখায়।
৫
সেই কোন প্রাচীন থেকে
হেঁটে আসছি তোমার সঙ্গে
সারাগায়ে আদিম অস্বস্তি
জঙ্গলের মায়া গায়ে
হাত নাড়ছে পুরনো পলাতক।
৬
নরম গান এসে শুয়ে পড়েছে
আগুনের পাশে। অন্ধকারে এ ওকে
দেখে নিচ্ছে মজা নদী,
অতৃপ্ত আকাশ।
জঙ্গলের প্রেম মাথা ঘষছে কুমারী পাথরে।
৭
মায়া মোহ কাম...
রিপু নাকি শরীরের গান!
তোমার নীলাভ চোখ—
চতুর মানুষ ভোলে
পতনের শব্দ কেমন!
জিজ্ঞাসার চিহ্ন গায়ে এক দ্যুতি রাত জাগে একা।
সৌ ম্য ম য় পা ত্র
অরুণিমা তোমাকে১
এই নাও আমার হাত,
ভেঙেচুরে আনম্য বানিয়ে নাও রুচিবোধে;
সমস্ত শরীর গোপন মৈথুনে!
শরীরে জ্বরের দাগ, কয়েকটা জন্মচিহ্ন–
এর বেশি আমি দিতে পারি সমস্ত রোদ,
পাতার সবুজ আয়ু!
তিনশো তেতাল্লিশ পাতার অক্ষরহীন উপন্যাস।
কালই পকেট থেকে পড়ে গেছে ইস্তেহারি সম্মোহন!
এই নাও আমার হাত।
২
একচল্লিশটা নদীর সঙ্গম–
জল, ঢেউ, কাদা, জল, মনেপড়া...
অবর্ত পেরিয়ে যাওয়ার একটাও সুতো নেই!
এতো দূরে... জন্মের দাগ স্মৃতি— নিভৃতে।
সব স্রোত দূরে!
অরুণিমা হাত ধরো, এখনো উনত্রিশ বছর বাঁচতে চাই।
৩
এ-সব কবিতাহীন দিনে শুকনো পাতা হয়ে উঠি,
পাতা বলতে মনে পড়ে অল্পায়ু প্রাণ,
আমাদের উঠোন লাগোয়া পুকুরের গাঢ় স্তব্ধতা,
স্কুল ফেরত কলম দিয়ে লিখে দেওয়া নাম।
কেবল একটাই নাম রবীন্দ্রসংগীতের মতো, তবু
জানালার ময়লা বিকেলের থেকে মরে যাওয়া ভালো!
দু'চার পা এগিয়ে গিয়ে কাদের শুনছি খুব ধীরে,
কারা যেন ছায়া—
কাদের অ-স্পস্ট হাতে আশ্বাস!
রাজাবাজার সাইন্স কলেজের সাইকিয়াট্রিস্টদের মতে, সিজোফ্রেনিয়ায় সবাই আত্মহত্যা প্রবণ।
তবুও তোমার নাম অতিক্রম করতে পারছি না,
অরুণিমা!
৪
কয়েক মিনিট যেন অক্ষর ভাঙা সময়
অক্ষরের পিঠে অক্ষর,
কোনো সূত্র নেই—
তবু হিসেব মিলছে। অন্তমিল।
স্টেশন ছাড়িয়ে দ্রুত ট্রেন—
জানলা থেকে কুয়াশার সমীকরণে চোখদুটো
দূরে...
দূর শব্দের অনুবাদ জানি না
তবুও কী এক অক্ষেপ গুলিয়ে উঠছে বুকে!
বিছানা ছাড়ার পরেও হারানো সুগন্ধ—
কবিতা লিখে ফেললে
যতটা হারাই তোমাকে!
একদিন ও তারপর তেত্রিশ বছর
—কাল রাতেও স্বপ্নে ছিলাম?
একবার কেন ফোন করো নি?
—তোমায় আমি দূর ভেবেছি,
তোমায় তখন ঠিক চিনিনি!
— এখন বলো, স্বপ্নে আমি কেমন ছিলাম?
বদ-মেজাজী? শিশুর মতো রাত জাগালাম?
—ওসব কথা আর কোনোদিন।
যেমন ছিলে, ভালোই ছিলে।
স্বপ্নে থাকে অনেক কথা
— আমরা কেমন? এলোমেলো?
— ওসব কথা আর কোনোদিন....আর কোনোদিন!
তার পর তিন বছর। আরও হয়তো তেরো, তেত্রিশ...
স্বপ্নে থামা সেই মেয়েটা দশ হাত জুড়ে সংসারে মন
এখন সে গাছ। মা।
আজও তেমন স্বপ দেখে ফোন করে না।
স্বপ দেখে ফোন করেনি।