অলংকরণ : প্রণবশ্রী হাজরা 



অ নি মে ষ  গু প্ত

মা


মাঝেমাঝে দেখতাম উঠোনে মা একা, গান গাইছেন গেরস্থালীর কাজের ফাঁকে। সেসব সুর বিষণ্ণ, পৌঁছে যেত খিড়কি ছাড়িয়ে দূরে পতিত জমির লতাগুল্মে। মার চোখে দুলত এক সবুজাভ পাতা।

গান শিখিনি তবু আমার জেগে থাকা বা স্বপ্নাবলীর মধ্যে এই এক দৃশ্য ফিরে ফিরে আসে বারবার, অন্যরকম হয়ে— 

গলায় বাঁধা হারমোনিয়াম, আমি আর মা গাইতে গাইতে হেঁটে যাচ্ছি বক্সীর মাঠ, বড় পুকুরের পাড় ধরে শ্যামল এক নক্ষত্রের দিকে...      

ঘুম আসেনা কিংবা হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে বিছানাতেই বসি। একটানা সিলিং ফ্যানের আওয়াজ, জানলার সার্সির বাইরে অন্ধকার গাঢ় হয়ে আছে। নীচের দিকে তাকালে মনে হয় রাতের রাস্তার মতো একা বোধহয় আর কেউ নেই । কপালের ঘাম মুছি, দমবন্ধ লাগে যেন বুকের কাছে আটকে আছে হাওয়া। নাবলা সব কথার কষ্ট জমে আছে গলার ভেতরে।

বিছানা ছেড়ে উঠি, চোখে মুখে জল ছেটাই। তবু এক অস্বস্তি যেন ছেড়ে যেতে চায়না কিছুতে। ঘামতে থাকি, হিসেব করি— কতদিন হল যেন চলে গেছেন মা!   



অ নি রু দ্ধ  ব্যা না র্জি

প্রত্যেক শীতের দুপুরে 


দু পকেটে হাত রেখে বখাটে ছেলেটা 

মেয়েটার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বেড়াল তাড়ায়। 

আমি নষ্ট মেয়ের কাছে 

শুনি জাহাজ ভাঙার গল্প। 


সাদাকালো চশমার নীচে জিরিয়ে নেয় 

কাবুলিওয়ালা, বিছানার বদলে রাস্তা 

শরীর বদলে হয়ে যায় তোষক। 



অ মি ত  প ন্ডি ত

কাব্য ও সাহস


আরো কত ছন্দ আছে বন্ধ করে দখিন দুয়ার কতকাল রুদ্ধ গোলাপ ঢালেনি গন্ধ যে তার

খুলে দিলে শুদ্ধ আকাশ বুদ্ধও উঠবে হেসে আঁধারও জব্দ হবে বরাদ্দ রাত্রি শেষে

দ্বন্দ্বরা আঁকছে ছবি মাথার ওই বদ্ধ ঘরে যুদ্ধটা থাকবে জারি নতুনের মুগ্ধস্বরে

স্তব্ধতার জমাট বরফ বিদ্ধ হবে তীব্র আলোয় কেটে যাবে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঋদ্ধতার প্রদীপ ছুঁলেই

শব্দরা গড়ছে মহল ধ্বনিদের জোট বাঁধাতে আমাদের কাব্য শপথ উঠছে গগনভেদে

আকাশের চিবুক চুমে হাসছে রক্তপলাশ আগামীর আয়না জুড়ে বেঁচে থাক শুধুই সাহস



অ মি ত  লৌ হ

আমি ও রাস্তা 


আমি শুয়ে আছি ফুটপাতে 

পাশে আছে অনেক গুলো লাশ,

কিন্তু কোন গন্ধ নেই-

শুধু আছে স্পর্শ'তা,

বেশিক্ষন ঘুমাতে পারিনি 

 ঘড় ঘড় শব্দে কান তেতে ওঠে।


 তবুও আমি নেমে আসতে পারিনি রাস্তায় 

সেখানে পা রাখার অধিকার নেই।


রাস্তা তাদের -

রাস্তা ধর্মের -

রাস্তা রক্তের -

আমার আর রাস্তার দূরত্ব কোন এক ধর্মগ্রন্থ!

  

                                                    

গো লা ম  র সু ল

ভোরের হাওয়ায় সৃষ্টি একটি শিরোমাল্য


সেখানে তখন মেঘ একটি কুয়োর মতো

জল  শোকে কাঁপছিল তুমি যেমন আমাকে জড়িয়ে ধরো

আর আমি জলের বৃত্তকে অদৃশ্য হতে দিই নি


নিরবতা আর শীত একটি মাত্র ঋতু

একটি কুঠার আমাদের যন্ত্রণা


আমাদের চোখের একঝাঁক ঈগল খুঁজছিল ঈশ্বরের আর একটি দ্বীপ

তাও আমরা ফিরে এলাম মস্তক হাতে  যেখানে প্রচণ্ড আলো  তল্লাশ করছে

ভোরের হাওয়ায় সৃষ্টি একটি শিরোমাল্য



তৈ মু র  খা ন

সব যুদ্ধের পর


তোমাকে কোন কল্পনায় লিখব তবে?

     সব গল্প ফুরিয়ে গেছে

     নাভি নিতম্বে থই থই করে না মেঘ

     সব বৃষ্টি ঝরে গেছে

        মরা জ্যোৎস্নায় বৃদ্ধ অনুভব 

                              চলাফেরা করে 


 ধুলো জমে গেছে টেবিলে টেবিলে

     যেতে ইচ্ছে করে না রক্তজবার বনে

      খিদেরা সহিষ্ণু এখন আত্মগোপন করে

          কেউ এসে আর ছুঁয়েও দেখে না                                  

 রেশমি চুড়ির হাতে


 কলমটা কাঁপতে থাকে

 শূন্য আকাশে দুরন্ত চাবুকের দাগ

 ঘোড়া চলে গেছে, উড়ন্ত ঘোড়ারা সব

 ভাঙা পয়ারের অক্ষরবৃত্তে তবুও দুলতে থাকি


 তীব্র নৈঃশব্দ্যের কাছে খুঁজি হারানো বৈভব



নি ল য়  ন ন্দী

হীরামন


এমন বৃষ্টির ভোরে বেজে ওঠে রাতের ম্যান্ডোলিন 

বুধবার শাদা জামা স্বপ্নের আঁকিবুঁকি ছাপিয়ে

চেনা রাস্তায় নৌকা নামে ভাটিয়ালি বাঁক 

সারাদিন জলের পসরা টুপটুপ ঝরঝর 

আলো কমে এলে মেঘ পাতে বিষণ্ণতা ফাঁদ

যেন কেউ এসে ধরা দেবে ডিপ্রেশনের মেয়ে

হারিয়ে ফেলবে ছাতা, বুক মার্কার, ক্ষতচিহ্ন

দূর থেকে সে ডাকে অনর্গল - 'হীরামন'


শেষের কদমফুলে আজও পা পিছলে যাবার ভ্রম



দে বা শি স  সা হা

একা


একা হয়ে যাওয়া বাড়ির নাম দিলাম তপতী 

কলমের ডাকনাম রাখি সু

রাস্তা ছাড়া ভীষণ একা দেবাশিস


এক একটি নি:সঙ্গ সাইকেলরিকশা 

 অপেক্ষা হাতে দাঁড়ায়


তুমি এক এক করে 

সাজিয়ে রাখো একা


আমি একাকার হয়ে যায়

আদরে আদরে শংখ লাগে

নেমে যায় জোয়ার


আনন্দের আলাদা গন্ধ আছে

একা একা আসে একাকীর কাছে



রবিন বণিকের দুটি কবিতা

রাষ্ট্র ও সাপ

 

খুচরো পয়সার মতো বেরিয়ে আসছে সাপ–


ভয় একটি আধুনিক ঢেউ, আপনি জানেন

অযথা ছোটাছুটি করবেন না এদিক ওদিক 

ওরা অনুভব করে মুদ্রা ভাঙার শব্দ

স্থির থাকুন, নিশ্চিন্তে দেখে নিন গতিবিধি 

পায়ের কাছে এলে ভাববেন, ওরা খুঁজছে ফসলের ছিদ্রপথ

নড়বেন

 না, সাপ একটি রাষ্ট্রীয় কোলাহল  

একথা আপনি জানেন

 বেমালুম ভুলে যাবার আগে

জানিয়ে রাখি, রাষ্ট্র থেকে সাপের দূরত্ব মাত্র ফিসফিস— 


প্রবুদ্ধ বক


সমস্ত চুপচাপ একদিন আড়ালে চলে যাবে জলে

ছলাৎ শব্দে ভেঙে যাবে সব প্রহসন

কে আমি কে তুমি–র ভেতর এই  অনন্ত দাগ

শহর জুড়ে ডুবে যাবে সব হৈচৈ কবিমন


তিরের ফলার মতো ঘরে ফেরা প্রবুদ্ধ বক

জল নেড়ে নেড়ে দেখে নিষ্ফলন

সাদা পাতা ভরা এতো উপমহাদেশ

জলের ঠোঁটে ঠোঁট রাখা চুপচাপ, ছুঁয়েছে চরণ

 

            

রা জী ব  মৌ লি ক 

বেহুলা 


ভালোবাসার টিপ পরে কপাল পুড়লো তার

এখন সে পোড়া কপাল নিয়ে কথায় যাবে

যার সামনেই দাঁড়ায় সে-ই

শত্রুর মতো মুখ ফিরিয়ে নেয়


যেন তার পোড়া কপালে লেপ্টে গেছে মরদেহ

যেন তার কপাল জুড়ে ছড়িয়ে অভিশপ্ত রাত


তবু সে রোজ নিয়ম করে কপালে তিলক কাটে

আর বিশ্বাসে রাখে


মরদেহের ভেতর লক্ষ্মীন্দর ঘুমিয়ে আছে



রো ন ক  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

ডিসেম্বর


বাড়ির এক কোণে বসে বৃদ্ধ চিঠি লিখছেন যৌবন বয়সকে,

গুটিয়ে যাওয়া চামড়া পর্ণমোচী বনের মতো মুষড়ে থাকে

চন্দনকাঠের দরজায় টোকা দিয়ে যায় কৈশোর


খেলনাবাটির দিন, সুজনের বান্ধবী কোনকালে আমায় ডেকেছিল

লজ্জার মাথা খেয়ে আমি ওকে কিনে দিয়েছিলাম কূপ

উষ্ণতা কমে গেলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়

ব্রিজের ধার ঘেঁষে ফুরফুরে হাওয়ায় হেঁটে গেলে স্ট্রিটলাইট পারদ কমতে দেয় না।



বৈ দ্য না থ  চ ক্র ব র্তী

বহ্ন্যুৎসব 


আজ সন্তানের দেহ পুড়ছে অমাবস্যা রাতে।

কাগজ-মলাট-পুট-ভেতরের পাতা দিয়ে গড়া 

ঐ সন্তানের দেহ। অবিচল চোখ দেখছে 

কুঁকড়ে উঠছে ছাই। তার কত নামের বাহার!


এই পৃথিবী আমাদের; ঘাসজমি; মা তুমি নদী;

গেরস্তের খোকা হোক; পোকা-র জীবন; শেকড়েই শুরু;

পুড়বে-কী-পুড়বে না; মাতৃমঙ্গল; অজ্ঞাতবাস;

বালখিল্য কবিতা-বোকা ছেলেমেয়েরা পুড়ছে সজ্ঞানে।


পিতা জানে কী করছে সে, অসার এই সন্তানেরা জগতে কোনোই মঙ্গলকথা ছড়াতে পারেনি। কেবল রহস্যকথা, আকাশের জয়গান, জলের গহনা কত ঝলমলে, 

মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়, ফিরে পায় না ঘাম-


এইসব আগড়ম-বাগড়ম কথা লিখে গেছে।

পিতা জানে কী করছে সে, অন্ধকারে মুখরোচক 

জীবন রচনা করে পেছনের সব গল্প, সব গান মুছে ফেলে

সে চলে যাচ্ছে নামের মহিমা পায়ে ডলে ফেলে...



ব্র ত তী

সুগন্ধি নির্জনতায়


অদ্ভুত কৌতুকের বীজ

আশ্চর্য সহজে

ঢেকে দিল আমাদের সমূহ যাপন, ভালোবাসার চন্দনগন্ধ

যাবতীয় স্বপ্নরং, আলোর উদ্ভাস-

উপেক্ষা বয়ে যায় নিস্তরঙ্গ নদীর মতন

সুবাসিত বিভ্রমের দিকে তবু একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নেশাতুর চোখ

নির্বোধ জিজ্ঞাসা লজ্জা ঢাকে মৌনতার নিবিড় আশ্রয়ে

অজস্র পরাজয় বুকে বয়ে ফেরারি, অনুগত বিশ্বাস

নির্ভেজাল একাকিত্ব বেঁধে রাখে বন্ধুর মতন



মৌ পি য়া  মু খা র্জী

সম্মুখে


অকাল মেঘে বন্দি আছো সমস্তদিন,

মনের ভেতর কেউ ছিলো না  অমন করে-

এখন আমার হৃদয়পুরে কালশিটে  লাল,

তোমার ছায়ায় ঈশ্বরও যে  তফাৎ সরে!

জীবন আমার, দুঃখটুকু সঙ্গে নেবে?

কালশিটে নয়! প্রেমের ভুলে  দুহাত ভিজে!

একটু শুধু ভিজবো বলেই জুড়ছি নদী;

তোমার রাতে যুগ্ম চেয়ে শমন নিজে!

ঠিক যেভাবে ফিরতি পথে থামলে না আর

আমার ভেতর শ্মশান ফেরত লোহার বেড়ি

বুকের কাছে ত্রিভুজ সেতুর রহস্যভেদ;

তোমার এমন স্থির সময়ে আমার দেরী!

এখন আমার গ্ৰীষ্ম ভিজে, মাসিক বাদল

সত্যি বলো, এমন করে বদলানো যায়?

ভাঙছিলো প্রেম, ঠিক যেভাবে আগুন ভাঙে,

ধারালো হাত তোমার শিরায় রক্ত থামায়!

কেমন করে ফিরবো বলো তোমায় নিয়ে!

অহংকারেও টানবে তুমি বিদায় ক্ষত-

কিন্তু এবার ফেরার পথে সামনে আমি

হারাও তুমি ঠিক সেদিনের 'আমি'র মতো!



শ ত দ ল  মি ত্র

খোঁজ   


ধুলো উড়িয়ে হাঁটছি একা  

হাঁটছি হারিয়ে যাব বলে

হাঁটতে হাঁটতে একদিন বুঝলাম

আমি খুন হয়ে গেছি

তবুও হাঁটছি...

ওরা আমাকে খুঁজল

পথে

নদীর নিরালা ঘাটে

গাছের ছায়ায়

গোধূলির খুনখারাপি মায়ায়

রক্তের আঁশটে গন্ধে

       নিহিত লবণে তার

জনহীন শ্মশানে, কবরে

এমন কি আমার একলা কবিতায়—

কোথ্থাও খুঁজে না পেয়ে

হাল ছেড়ে দিল ওরা...

সেই থেকে খুন হয়ে যাওয়া আমি

হাঁটছি একা, ধুলো উড়িয়ে, ধুলো উড়িয়ে

আর খুঁজছি সে খুনিকে—

              হয়তো নিজেকেই!


বহু দূরে কাজলরঙা মাঠে তখন

          জেগে উঠেছিল হরপ্পা, সান্নাটা ভেঙে!   



শা ন্ত নু  পা ত্র

প্রেমিক


সন্ধে নেমে আসে, শান্ত নদীতট...

আকাশ ডানা খোলে। অন্ধকার।

ফিরছে মেঠো পথে, মোষের পিঠে বক,

 রাতের চাঁদ যেন অলংকার।


নদীর স্রোত ছুঁয়ে বইছে সুবাতাস

রোমকুয়োর জলে মন উথাল,

হৃদয়ে পূর্ণতা, স্নিগ্ধ জলরাশি

 কবিতা-নৌকায় উড়ছে পাল।


সবাই গৃহে ফেরে, একলা কবি শুধু

বন্দী হয়ে আছে কোন খাঁচায়?

ফেরার বাড়ি নেই, সুষুপ্তির ঘোর,

রুদ্ধ চেম্বারে শুধু হাঁপায়...


হার্টের বিট শোনো, ছন্দে জেগে ওঠে

জ্যান্ত অক্ষর আয়ুষ্মান।

প্রতিটি মানুষের বক্ষ পিঞ্জরে

আছেন কবি এক মুহ্যমান।


রুধির দিয়ে তিনি লিখেই চলেছেন

শরীরী লিপি যেন অলৌকিক।

ওষ্ঠ চুম্বনে প্রোপোজ করে যাও...

তিনিই দুনিয়ার সেরা আশিক।



শ্রী ম ন্ত  সে ন

ছায়ানট

 

তত্ত্বতালাশ করে দেখা তো যেতেই পারে

কে কেমন ভালো আছে গভীর অসুখে,

যার যতটা ক্ষমতা সুনিপুণ লুকোবার

তেমন দেখাতে পারে মুখে-অবয়বে সুখী,

ব্যথা ঢেকে বুকে।

 

আলগোছে আলোপাখি বিষণ্ণ আঙিনায়

ঘুরে ফেরে মৃদু পায়ে হাহাকার নিয়ে,

মানুষেরা আজ নেই মানুষের মত ঋজু,

মনে-মুখে একাকার হবে নাকো আর,

তাই থাকে বুঝি তারা বুকে খিল দিয়ে!

 

রক্তকরবী ফোটে বুকের বাগানে ম্লান

অদৃশ্য অভ্যাসে আভাসবিহীন,

কপট বিভাস যত মুখের মুখোশে ওঠে,

রক্তদীর্ণ বুক কুয়াশাগহন

অগম অন্তরালে থাকে দিন পরে দিন।

 

অপটু ও অকপট সরল মনের বনে

আজো ফুল ফোটে আর সুবাসিত করে,

নরম আলোর পাখি প্রতিদিন খুঁটে খায়

অসুখের কালবীজ প্রাণের আরামে—

তাই রাতে চাঁদ এসে ছায়ানট ধরে।



স র্বা নী  ব ন্দো পা ধ্যা য়

তিতির এবং


মেঘের কাছে খবর আছে

তোমার চিঠির,

আকাশ দেখো নতুন সাজে

সাজছে তিতির।

আমরা চলো গাছের ছায়ায়,

নদীর ধারে-

গল্প করি এক বিকেলে

শেষ আষাঢ়ে।

বৃষ্টি পড়ুক আমায় ছুঁয়ে

তোমার ঠোঁটে;

কাঁটার মাঝেই গোলাপ ফুটুক- 

যেমন ফোটে।

আমরা দুজন বলব কথা-

আপনমনে;

রাখবো স্বপ্ন হাতের মুঠোর

গোপন কোণে।

সত্যি যদি গল্প লেখো

ঘাসের গায়ে,

বৃষ্টি সেদিন ফিরবে না আর

অচিন গাঁয়ে।

বাঁচিয়ে নেবে তোমার আমার

সাধের বাড়ি,

সৃষ্টিছাড়া! দেখিয়ে দেব

আমিও পারি।

বুনছি স্বপ্ন চোখের ভাষায়-

শুনছ তিতির!

মেঘের কাছে খবর আছে

তোমার চিঠির।

মেঘ আমাদের সঙ্গী হবে

নদীর ধারে,

অন্ত্যমিলে ভিজব দুজন 

শেষ আষাঢ়ে।



স ত্তা প্রি য়  ব র্ম ন 

মন খারাপের কবিতা 


কেউই ভালো নেই

          সবাই কিন্তু ভেতরে ভেতরে পুড়ছে

          তবু দেখো কেমন বেহায়ার মত 

                                        বাঁচতে চাইছে।

শরীরের ওপর পাহাড়ের পোশাক চাপিয়ে

শরীরের ওপর সমুদ্রের পোশাক চাপিয়ে

হেঁটে যাচ্ছে নির্জন দ্বীপ,

সবাই ভিড় এড়িয়ে চলতে চায়

          তবু কেন রাস্তায় এমন ভিড়?

এসো তবে পাশাপাশি হাঁটি

মুখের ওপর মেখে রাখি মৌচাক

মুঠোর ভেতর ভাঙা পাথর ফুল হয়ে ফুটুক

দুর্দিনে গান ধরি একসাথে

       নীরবে চুপচাপ থাকতে চাইছি বলেই

               গভীরে ভীষণ বিস্ফোরণ।



সে লি ম  ম ণ্ড ল

মধুপুর


অবহেলা, এখন দুধের মতো সাদা

যেখানে সর পড়ে, সেখানেই এসে যায় শীত


হাওয়া বয়— কানে কানে


দূর কুয়াশায় হেঁটে যায়— হারানো মধুপুর!



সৌ তি ক  হা তী

ইচ্ছে ডানা


কোনো এক মেঘলা আকাশ, স্মৃতির ভীড়ে জুঁই এর সুবাস, ভুল ঠিকানা!

অথবা ঝলমলে দিন,

দীঘল চোখে

সিঁধ কাটা রোদ, স্বপ্ন গহিন,

ইচ্ছে ডানা।



সৌ ম্য ম য়  পা ত্র

অপেক্ষার যুবতি-নাম সম্মোহন 


এখন রাতের ভেতরে চেয়ে আছি

রাত ঋজু নয়, রাত দীর্ঘ

এখন অবসাদে শরীর পাতা

আমাদের দেখা হয় ছায়ার নীচে

                         অথবা সরল ঘুমে ।

চেয়ে আছি গভীর জানালার শীত-অন্ধকারে,

শরীর হাঁসের পালক;

বাতাসবিলাসে ধীর নৌকো!

রাত ভেঙে জল— আমি যক্ষ

জল যেন চৌকাঠ ভাঙছে

এখন রাতের ভেতরে চেয়ে আছি

কোত্থাও ঘুম নেই; সাইরেন !

এখন দু'চোখ ধীর সাপ 

শুয়ে আছি, এ-শরীর জলজ;

অপেক্ষা... অপেক্ষা... অপেক্ষা...

অপেক্ষার যুবতি-নাম সম্মোহন


দুহাত অর্জুনের নয় 

       তবু চেয়ে আছি জানালায় 

                      যদি বলো "এসেছি"।

এখন রাতের ভেতরে চেয়ে আছি।



ভ বে শ  মা হা ত

মুখোশের আড়ালে 


একটা মিছিল হেঁটে যাচ্ছে আমার ভেতর নীরবে একটা চর গড়ে উঠেছে নদীর মাঝে, সকলেই আমার থেকে সরিয়ে নিচ্ছে নিজেকে কী জানি কেন সকলে একটা বিকল্প খোঁজে।


হয়তো ওপারে আকাশ সেজেছে নীল মেঘে তবুও নদীগুলো বিরহ বয়ে নিয়ে যায়, নীরবতা দিয়ে জীবন সাজানো এখানে যদিও বা দুই কুল মিশে গেছে মোহনায়।


মাস্তুলে কাক বসে আছে আজীবন এভাবেই এখানে রামধনু রঙ ছড়ানো, অজুহাত আর মুখোশের আড়ালে ঠিক যেন মুখোশটাকে খুঁজে বেড়ানো।



হ রি ৎ  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

সবুজ পৃথিবীর সমাহার


ফাটা বাঁশের মধ্যে থেকে যে আওয়াজ বেরিয়ে আসে

তা দিয়েই একটা গোটা জাতিকে সম্পূর্ণ চেনা যায়

চোখের সামনের সব মানুষ হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছিল

একটার পর একটা ইতিহাসের পাতা

হাতের দূরত্বে তৈরি করে ফেলেছিল 

রঙবেরঙের মন্দির মসজিদ গির্জা

আর নিজেরাও ছড়ানো হাতের ওপর শুয়ে পড়ে

একটার পর একটা বস্তাপচা বাতিল লাইন

তোতাপাখির মতো অবিশ্রাম আউড়ে যাচ্ছিল


শিশুদের চিৎকার মুখের হাঁগুলোকে 

গোপন গর্তের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছিল

আর মানুষের যাবতীয় চাহিদা এক ফুঁয়ে উড়িয়ে

সকলের চোখের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছিল

                                            এক একদিনের জয়স্তম্ভ

আঙুলের চাপেই বদলে বদলে যাচ্ছিল দিন রাত


সারা পৃথিবীতে উড়বে নিজের পতাকা -

এই ভেবে যারা সমুদ্র সমান কাপড় কিনেছিল

তারা এখন নিজের শরীর আর মুখ ঢাকতেই ব্যস্ত

দিনের ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড সব শেষ

হৃদয়ে এখন বাতাস নেই, মাংস গজগজ করছে

কোন কালে মানুষ শুনেছে মাংসের কথা বলা

তিনদিনের টকে যাওয়া বাসি গোলা রুটির মতো

ধর্ম এখন ছাঁচতলা পেরিয়ে উঠোনের এক কোণে শুয়ে

সকালে জমাদারের তুলে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়

উপাসনালয় আজ কোনো নির্জন স্টেশনের 

                                                   বিশ্রামঘরের আদলে

সবাইকে চমকে দিয়ে ইতিহাসের শিশু মুখ তুলেছে

তাদের মুষ্টিবদ্ধ হাতের তালু সবুজ ধানক্ষেত

শতাব্দী প্রাচীন দুঃখের বাষ্পে ঘনীভূত মেঘ

আরও একটু ভারী হয়ে বৃষ্টিগান শুরু হলেই

পৃথিবীর উঠোনে সকাল নিয়ে নামবে চড়াই

শস্যক্ষেত্রের ধানের জ্যামিতি কুঁদে নেবে

                                        সবুজ পৃথিবীর সমাহার।