অলংকরণ : প্রণবশ্রী হাজরা |
অ নি মে ষ স র কা র
ঈশ্বর লিখিত আশীর্বাদ
আমাদের দেখা হলো কথা হলো আর মৃতদেহের ভিড়ে গোনা হলো কতজন আমার পরিচিত। এইভাবে নিজেকে পুড়তে দেখছি, গতে ধরা নিয়মের জামা পরে ভাসছি শূন্যে। এখানে অবলম্বন সহায়, কোনো এক অন্ধকার ঘরে লুকিয়ে রাখা চাবিগোছা এখন পরোপকারী ঔষধ। দিক ভুল করে ঢুকে পড়ি সাধুদের আশ্রমে। নিজেকে শান্ত করি, মনোনিবেশ করি আগত ভাষণের আবহে। শব্দ গোছাচ্ছি, শব্দ গোছাতে গোছাতে কলের পার থেকে ডাক আসে। শব্দবাহন, সেন্টিগ্রেড আর বেকারের ৮/১০এর ঘর। ছাদ উড়ে যাচ্ছে স্বমহিমায়। দংশনে দোষী প্রতিটি পাহাড়ের খোপে লেখা হচ্ছে হোমোসেপিয়েন্সদের গল্প। খানাখন্দে ভরা রাস্তা, রাস্তা অ্যালকোহলিকদের জন্য অলিখিত রানওয়ে। নন স্মোকারদের জন্য হৃদয় বিদারক চিৎকার। সেনসিটিভ ত্বকের ওপর আলোড়ন পড়ছে। মেঝেতে বসে আরও গুলিয়ে আসছি, ভুলে যাচ্ছি যাবতীয় মিছিলে গায়কদের গান। শ্লোগানে শ্লোগানে ভাসছে আত্মরতী করার জয়গান। এখানেই ফিনিশিং টাচ, আর ব্যথা আগলে বেকারভাতার দলে নাম লেখাচ্ছি, পুরুষাঙ্গ মেরুদন্ড ক্রমশ নুইয়ে আসছে। বিকলাঙ্গ হচ্ছি, হারছি আর শেষ দেখা মেয়েটির সঙ্গে সাক্ষাতের তারিখ লিখে রাখছি গোপন নোটবুকে। আমি সাধুমাত্র শূন্য, শূন্য মাত্র কুহক। তারপর পাহাড়ি কুঠি, ভেসে আসে লাফ দেওয়া ছেলেদের কথা। একদল তরুণ তরুণী জায়গা করে নেয় প্ল্যাকার্ডে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। ছবির মতো ছাপতে থাকি, বাদ পড়তে থাকি গতির থেকে। ঘর বলতে এখন গাছ আর বয়স বাড়ার অজুহাত। মৃত বিশ্বাস আর চির ব্যর্থতার আন্তরিক স্লগ ওভারে পিছিয়ে যেতে থাকি ট্র্যাক থেকে। যে ট্র্যাজেডির চরিত্র বিন্যাসে ক্রমশ আবছা হয়ে আসছি আর খাতার ভেতর থেকে তুলে আনছি অতীব ক্ষীণ সম্ভাবনা তার গায়ে লেগে থাকছে হিংস্র গন্ধ। স্বপ্ন এখন আন্ডাররেটেড, আর নিমেষে ফুরিয়ে আসা এখন চর্বিতচর্বন। ভুল ব্যখ্যার অসহায় মন্ত্রে, ডুব দিই অশরীরি অবগাহনে। এই যে স্পেশালিষ্ট আহ্বান, ধ্বংসচেত স্বাধীনতা রুখে দিচ্ছে শোক। এ আত্মহুতির অসংলগ্ন গল্প ছাড়া কথা নেই। পোয়েটিক ডিকশন খুলে পড়ছে খিদের কাছে, জীবিকাহীনতার কাছে। তারপর উগরে দিচ্ছে ভান্ডারের সমগ্র উদাসীনতা। এরপর! এরপর অর্চন যে রোদের কাছে হাত পাতবো বলে এতদিন ক্ষয়রোগ সঞ্চয় করেছি, সেই ক্ষয়রোগ ক্ষয় করে দিচ্ছে বিশ্বাস জ্ঞান আর ঈশ্বর লিখিত আশীর্বাদ। এমন রোদের জন্য কটা ছুটি বরাদ্দ অর্চন! এমন রোদের কাছে কটা নদী শুকিয়ে আসে, এমন রোদের তাপে কটা শরীর জ্বর ঝরিয়ে ফেলে! জানো কি বেকার হবার, খিদে কমে আসার, প্রয়োজন বেড়ে যাওয়ার শেষ কোথায়! কোথায় পাথর কেটে পাহাড় কেটে আলো বসতি গড়া যায়! কোথায় বা শূন্যতা একটা আকস্মিক রিদিম! কোথায় ফুরোয় সব ফুরোনোর বিন্যাস!
সৌ র ভ ম হা ন্তি
ফুরিয়ে আসা ডিসেম্বর
আমার মনে পড়ে না ঠিক কবে প্রথম 'ক্রিসমাস' শব্দটা শুনেছিলাম। সান্তা ক্লজ কে? কী করে? এসবকিছু মাথাতেই আসেনি বহুদিন। ছোটবেলায় রূপকথার গল্প পড়তাম খুব। পঞ্চম শ্রেণী, এরকমই এক শীতের দুপুরে লাইব্রেরি থেকে যীশুর গল্প পড়েছিলাম। পড়েছিলাম এক মেষপালকের গল্প। বইটার নাম মনে পড়ে না। তবে মলাটটা ছিল অদ্ভুত এক আলোয় রাঙানো, যার মাঝখানে একজন দুদিকে হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে পেরেক পোঁতা, আর তা থেকে রক্ত ঝরছে অবিরাম। পরে কতবার যে এই ছবি মাথাতে ঘুরপাক খেয়েছে তার হিসেব নেই। ব্যক্তিগত দুঃখের দিনে, মাতৃহারা শিশুটির শোকে, অন্ধ ভিখিরির গানে আলো হয়ে জ্বলে উঠেছে যীশুর প্রসন্ন মুখ...
সান্তা ক্লজের ধারণা এসেছে অনেক অনেক পরে। আমরা বড়দিনের আগের রাতে কোনোদিন ক্রিসমাস ট্রি সাজাইনি, মাথার পাশে মোজা রেখে ঘুমোতেও যাইনি কোনোদিন। তাই, বুড়ো লোকটি ভুল করেও আমাদের জন্য উপহার পাঠায়নি একবারও। ডিসেম্বর এলে বড়দিন নিয়ে উচ্ছাস আমাদের নেই। পাড়াগাঁর নিভে আসা আলোয় কোথাও কোনো বাড়িতে কেক আসেনা এখনও। তবে, ডিসেম্বর অদ্ভুত এক আলো-আঁধারের মাস। ধান কাটা হয়ে উঠোনে আসে। কোনবছর খুব ভালো ধান হয়, কোনবছরের অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির দায়ে উঠোন খালি হয়ে যায়। তবু এইসবকিছু ভুলে কান পাতলে এখনও দূরের মাঠ থেকে যেন ভেসে আসে আমাদেরই পুরোনো যত ফেলে আসা ব্যথাদের অদ্ভুত সব সুর...