শঙ্করী দাস


অফবিট

অ হ না  বি শ্বা স



তকাল শঙ্করী দাস নামে এক মহিলার সঙ্গে পরিচিত হবার পুণ্যঅর্জন হল।

ইনি একজন সাহিত্যকর্মী। ইনি একজন এমন মা, যিনি পরিচিত মায়ের ভূমিকাপালনের অনেক উর্ধ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। 


সকলের জন্য তাঁর জীবনকথাটি বলি।

ব্যারাকপুরের শঙ্করীর শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। নবম শ্রেণীতে পড়তে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী বি এস এফ এর জওয়ান। 

দুটি পুত্র মারণরোগে আক্রান্ত হবার মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শঙ্করীর স্বামী মানসিক ভারসাম্য হারান ও চাকরিতে ইস্তফা দেন।

 স্বামীর কোনও ভাতা বা পেনশন না থাকাতে শুরু হয় প্রবল অর্থকষ্ট। তারমধ্যে শঙ্করী সিনেমা হলে বাদাম বিক্রি করে, তিনটি বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে দুটি প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা ও লেখাপড়া চালাতেন।

বড় ছেলে সোমনাথ মাইল ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত। অধিকাংশ সময় হাসপাতালে কাটালেও সোমনাথ সাহিত্যসৃজনে উৎসাহী ছিল। নিজের টিউশনের পয়সায় সোমনাথ  সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতে চায়। শঙ্করী দাস ছেলেকে সাহায্য করতে তাঁর বহুকষ্টে জমানো তিনহাজার টাকাও দিয়ে দেন। কারণ তিনিও যে সাহিত্য ভালোবাসতেন। পত্রিকার নাম — ‘সময় তোমাকে’

শুধু তাই নয়, স্বাভাবিক চলাফেরায় অপারগ সোমনাথের পত্রিকার সব কাজ, প্রেসে পত্রিকা ছাপতে দেওয়া থেকে পত্রিকা মেলায় নিয়ে আসা সব কাজই করতেন শঙ্করী।

2012 সালে পশ্চিমবঙ্গ তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে এই পত্রিকার ‘ছোটগল্পে মিথ’ সংখ্যাটিকে পুরস্কৃত করা হয়। এরপর এই সালেই শঙ্করীর সন্তান সোমনাথ মারা যায়।

ছেলে মারা গেলেও শঙ্করী  তাঁর ছেলের স্বপ্নের পত্রিকাটি বন্ধ করেন না। এই বয়সেও সেই পত্রিকা চালিয়ে যান মেয়ের সহায়তায়। মেয়ে একটি বেসরকারি মলে কাজ করেন আর তিনি করে চলেছেন গৃহ পরিচারিকার কাজ। 

তাঁরও বয়স বেড়েছে, শরীর অশক্ত হয়েছে, কিন্তু বাঁচিয়ে রেখেছেন পত্রিকা,  বাঁচিয়ে রেখেছেন সাহিত্যসেবা। যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন, যতদিন সামর্থ্য থাকবে, ততদিন পত্রিকা প্রকাশ করে যাবেন, ততদিন পুত্র সোমনাথের স্বপ্নকে তিনি বাঁচিয়ে রেখে যাবেন।


এই মহীয়সীর দেখা পেলাম কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রের বার্ষিক সমাবর্তন উৎসবে। তাঁর প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম রইল।  তিনি সুস্থ থাকুন। 

শঙ্করী দাস, লিটল ম্যাগাজিনের মা , পেলেন মমতা রহমান স্মারক সম্মান