খণিজ  কবিতা  

অলংকরণ : প্রত্যুষ বাগ


অ নি মে ষ  গু প্ত

খণিজ কবিতা

 


আমাদের বাড়ি

বাড়ী বলতে... 

একত্রের কালটুকু ছেড়ে  

আমাদের ছিল –


খুব ঘন বুনো ঝোপে ঢাকা                               

ইট কাঠ বালি আর

সিমেন্টের স্তূপ    


বাকিটা শূন্যতা ভরা শীতের

বর্ণহীন কুয়াশার মতো...

নিষ্প্রাণ। 


রুদ্ধ

হাওয়া বদলে

ভয় ছিল তার

কুলুপ এঁটে খিল-কপাট  

বন্ধ রেখেছিল


খড়িগুলোর ফাঁক ধরে

উদোম বাতাস ঢুকে এলে

বেতসের মতো

কেঁপে উঠে ভাবত...


তুলে রাখা কাঁচের বাসন

ভেঙ্গে যাবে হয়ত!


মেয়েটি

বাঁশবনে রক্তের মধ্যে

যন্ত্রণাহীন অসাড়তায়

মেয়েটি ভাবছিল...


 কীট জীবন

পতঙ্গ জীবন

এবং

পাখিজন্মের কথা...




ডার্ন বা পোষ্ট মডার্ন যাই হোক না কেন, দেশ কাল পাত্র নিরপেক্ষে কবিতার গঠন ও সার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে এবং আজও হয়ে চলেছে।  


এই ধরণের এক্সপেরিমেন্টেশনের দিকে নজর রাখলে দেখা যায় ফরাসী কবি ইউজিন গিলভিক (Eugene gullivic) গত শতকের সবচেয়ে তাৎপর্যময় কবিদের একজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য কবিতার বই ‘Terraque (1942)’ আর এর পর থেকেই তিনি পরিচিত হয়ে যান অন্য একধরণের কবিতা রীতির জন্য, যা পরে ‘খনিজ কবিতা’ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।


এই ধরণের কবিতায় শব্দের ব্যবহার কম,  ভাষা স্পষ্ট আর সোজাসাপটা, কিছু কিছু জায়গায় কর্কশ। বস্তুই এই ধরণের কবিতার মূল উপাদান। কবিতাগুলি আকারে খুব বড় নয় এবং বোঝা যায় যে এখানে নীরবতা বা নৈঃশব্দ  দিয়ে শব্দকে কনট্রোল করার চেষ্টা করা হয়েছে। মেটাফর ব্যবহার করার বদলে সোজাসুজি তুলনা করা হয়েছে  বিভিন্ন মানবিক আবেদন, উপাদানের সঙ্গে।  


তাঁর ব্যবহার করা রীতির অনুসারী হয়ে এই রচনায় অপ্রয়োজনীয় বিস্তার বাদ দিয়ে সরাসরি তাঁর দুটি কবিতা উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হল, যাতে পাঠকদের কাছে এই রীতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে (অনুবাদকের নাম অজানা)। 


একটা চেয়ারকে নিয়ে

এত হৈ–হট্টগোলের কোন মানে ছিল?

-একটা চেয়ার তো তেমন গর্হিত কিছু নয় ।

পুরনো কাঠ দিয়ে বানানো,

যে গাছের কথা ভুলে বিশ্রাম করছে।

তার বিদ্বেষের কোন ঝাঁঝ নেই।


 কোনকিছুই সে চায় না,

কোনকিছুরই ধার ধারে না,

তার নিজস্ব ঘুর্ণি নিয়ে সে খুশি।


অন্যটি...


যা কিছু পাথরের মধ্যে নেই

যা কিছু পাথর আর দেয়ালের মধ্যে নেই

এমনকি গাছের মধ্যেও নয়


যা সব সময় একটু একটু কাঁপে…

আশ্চর্য ! তা আমাদের মধ্যে আছে।