বুক রিভিউ
স্তব্ধতার ক্যাকোফোনি
সৌ তি ক হা তী
বার্তা প্রকাশন ● বিনিময় ১০০/-
পর্যালোচনায় : সূর্যকান্ত জানা
স্তব্ধতা , আয়নার প্রতিশব্দ হতে পারে। শুধু নিজেকে নয়,দেখা যায় সব কিছু। তার মধ্যেও কোলাহল আছে। তার স্নায়ু প্রবাহেও ট্রফিক জ্যাম হয়।
এমনই এক জ্বলন্ত উদাহরণ , কবি বন্ধু সৌতিক (হাতী)-র কাব্য গ্রন্থটি, 'স্তব্ধতার ক্যাকোফোনি' (দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ)।
"উদভ্রান্ত নাবিক স্তব্ধতার ক্যাকোফোনি
শুনতে পেয়ে এগিয়ে চলেছে
একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের দিকে..."
আমাদের সকলেরই যাত্রা কিন্তু ঐ পথ গামী। জানিনা সেই দ্বীপ কোন সাগর বা মহাসাগরে। প্রশান্ত মহাসাগরে হয়তো। হয়তো বা মেঘের দেশে অন্তরীপ।সেই স্তব্ধতা কোথাও যেন ভেঙে যায় ট্রাফিক জ্যাম এ-
"... সিগন্যালে দেখি সিঁদুরে মেঘ,
অগনিত হেলমেট ঢাকা গার্হস্থ্য অসুখ,
সেখানে কিন্তু স্তব্ধতা বিদ্যমান
কোথাও আবার স্তব্ধতাও কর্কশ হয়ে ওঠে,...
"নিজেকে চিনতে পারিনা আয়নায়,
শুধু দাঁত বার করে আছে
এক একটা মুখোশ।"
কবির কথায় সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিরল স্তব্ধতা রয়েছে। যা তাকে কর্মঠ করে তোলে। পোঁছে দেয় উচ্চ দ্বারে। রূপান্তর বিষয়ক ভাবনায় উঠে এসেছে-
"পেশাদার নেটওয়ার্কে
বর্ষা নামে টাচস্ক্রিনে"
কবি কখনো পুরানোকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছেন-
"অস্থির বিছানা। আধময়লা বেডশীট। খোলা ডায়েরী। ভাবনার এনট্রপি। বেশ ছিল।"
যাই বলিনা কেন স্মৃতির রোমন্থন আর তার প্রতি নিরব এক ভালোবাসা আমাদের কম বেশি সকলেরই।ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষে চলে গেছেন মহেঞ্জোদাড়ো তে। সারা বিশ্বের নানা স্থানে ঢু মেরেছেন-
"বোহেমিয়ান বাইচ", "ম্যাকাবার হরিনীর বনপথ", "মগ্নতার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন"।
যেথাই যাননা কেন, ফিরে আসতেই হয়েছে সূবর্ণরেখা বা ডুলুং-এর পাশে। যার উপত্যকায় তিনি লালিত পালিত। ভাবনারা দেশের গন্ডি পেরোলে , ভাষাও নতুনত্ব আসে । যেমন প্যাপিরাস স্মৃতি, নেমেসিস উপত্যকায় আরো কিছু।
তবে কিছু কিছু বিদেশি শব্দের প্রয়োগ স্তব্ধতাকে বেশ বেসুরো করেছে। পরিবর্তে দেশি শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হতো।
জীবন পরিমন্ডলের আকৃতি যে আকারের হোক না কেন , বৃত্ততে শেষ । যার কেন্দ্র বিন্দুতে বিরাজ করে স্তব্ধ বেসুর। কবি তাই তো লেখেন "বৃত্ত থেকে বৃত্তে"। সেই পরিধি ফুটো করে বেরিয়ে আসতে হবে।
এলিজি সিরিজে বলেছেন- "...রাতের অক্ষরে ঘষা কাঁচে প্রতিশ্রুতি লেখা হয়"
আবারও " গানওয়ালা রাত নিয়ে চলে গেছে
মিশে গেছে বাতিঘর কুয়াশায়।"
চলমান রাজনৈতিকা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র পরিকাঠামোয় ঘুন ধরা নিয়ে -
"চুপ থাকো
নিঃশব্দে উপেক্ষা করো
হায়নার ভ্রুকুটি।"
নিজের রক্তে জড়িয়ে থাকা মতাদর্শ উঠে এসেছে তার কবিতায়।
বাস্তবতা যখন চেপে ধরে , উদ্ভিন্নতা একাকী করে দেয় । দূরবর্তী কোনো নদী তীরে বা অনুচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে গোঙায় কবি মন।
ক্লান্ত হয়ে চাল ভাঙা ঘরে ফিরে এলে, অশ্রু গ্রন্থি ঋতুমতী হয়। ভিজে যায় বালিশ ছেঁড়া তুলো।
আর তখন সমস্ত স্তব্ধতা ছিন্ন করে মনে হয়
"......... হারাতে হবে আদ্যোপান্ত সংশয়,
যদিও সব চরিত্রই কাল্পনিক!"
কাল্পনিকই বটে। কিন্তু মাটিতে পা ফেললেই যে ফুটে ওঠে মানব ধর্ম। লোভ ক্ষোভ দ্বিধা দ্বন্দ্ব। তার মধ্যেও গিলে খায় স্তব্ধতা । তার বেসুরো হাতিছানি তলিয়ে যায় অনেকেই।
কবিকে অনেক অনেক ভালোবাসা। তার ভাবনা গুলি যে আমাদের সমান ভাবে প্রযোজ্য , তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।