অনুবাদ  কবিতা 

অলংকরণ : অমিতাভ ঘোষ 


মূল ওড়িআ কবিতা : যীশুকৃষ্ণ দাস

বাংলা তরজমা :  প্রদীপ কুমার রায়



নাটকের শেষ দৃশ্য


এ কি, নাটকের মাঝে আমাকে মরে যাওয়ার

কঠোর নির্দেশ এই পাণ্ডুলিপিতে ?

আমার  তো নাটকের শেষ দৃশ্য পর্যন্ত

                                  বেঁচে  থাকার কথা।

আমি অপেক্ষা করেছিলাম

দর্শকদের চোখে সন্তোষের শেষ অশ্রুবিন্দু।

আমার অভিনয়ের প্রশংসা কে নিয়ে

                          হাততালি  গুঞ্জরিত

   সমাপ্তি পর্বের জন্য।

   সেই জন্য আমি চক্ষুহীন ধৃতরাষ্ট্রের   

                             ভূমিকা গ্রহণ করিনি

   দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ কালে আমি

                         কৌরবদের সাথে থাকিনি।    

                        

আমার বোধহয় মহাভারতের চরিত্র গুলোকে

পড়ে নেওয়া উচিত ছিল

পিতামহ ভীষ্ম হওয়ার আগে।

কিন্তু আমি ত জানতাম

সে ইচ্ছা-মৃত্যুর বরদান প্রাপ্ত বলে।


এখন জানতে পেরেছি

কেনো সেই নাটকের নাম ছিল

" শর শয্যা "।

কেনো সেই সংলাপে লেখা ছিল

" সব ছেড়ে যাওয়া ই জীবন। "

কেনো বারবার সূচনা দেওয়া হয়েছে

" তোমার মৃত্যুতে নাটক শেষ হবে।"

কেনো পরিচালক বোঝাচ্ছিলেন

" মৃত্যু এখানে স্বার্থপর

স্বেচ্ছা মৃত্যুর বরদানকেও

অতিক্রম করতে পারে মৃত্যু,

অপমৃত্যু এক যুগের অবসান হবে

বিগত স্মৃতির বিকল কান্নার আওয়াজে

নীরব হতে থাকবে পিণ্ডপ্রাণ


ফিরিয়ে নিয়ে চলে যাবে

শেষ হতে থাকা সময় অবধির

বাকি থাকা কামনা,

কামনার থেকে সৃষ্ট যন্ত্রণা

যা তোমার একান্ত নিজস্ব।

মুক্তি এক প্রতিক্ষিত পরিণাম তখন।


দেখতে দেখতে মঞ্চের উপরে আমাকে ঘিরে বসে

অনেক লোক, বলে,

অবিশ্বাস্য এই অন্ত। এভাবে হঠাৎ। এতো সহজে ?


রাত ক্রমশঃ বয়স্ক হচ্ছে জেনে তারা

অনুকম্পার তেলে চুবিয়ে বর্ণাঢ্য প্রদীপ

ভাগবতের বাণী শোনাতে শোনাতে খাওয়ায় তুলসীর জল। ।

মঞ্চ  ঝলসানো সপ্তরঙ্গী প্রহরীদের ক্লান্ত

চোখ ড়লে তারা পরস্পরকে জিঞ্জেস করতে থাকে,

যুদ্ধে  কার জয় হয়েছে?

কৌরব ? না পাণ্ডব?

-  "এদের মধ্যে  কারোর নয় ,

মৃত্যুর জয় হয়েছে " - আমি সামান্য

প্রাণ সঞ্চারিত শেষ স্বরে বললুম ।



ନାଟକର ଶେଷ ଦୃଶ୍ୟ


ଏ କଣ ନାଟକର ମଝିରେ ମୋତେ ମରିଯିବାର

କଠୋର ନିର୍ଦ୍ଦେଶ ଏ ପାଣ୍ଡୁଲିପିରେ?

ମୋତେ ତ ନାଟକର ଶେଷ ଦୃଶ୍ୟଯାଏଁ ବଞ୍ଚିବାର ଥିଲା।

ମୁଁ ତ ଅପେକ୍ଷା କରିଥିଲି

ଦର୍ଶକଙ୍କ ଆଖିରେ ସନ୍ତୁଷ୍ଟିର ଶେଷ ଅଶ୍ରୁବିନ୍ଦୁକୁ,

ମୋ ଅଭିନୟର ପ୍ରଶଂସାକୁ ନେଇ କରତାଳିର ଶବ୍ଦଗୁଞ୍ଜରଣକୁ,

ସମାପନ ପର୍ବକୁ।

ସେଥିପାଇଁ ତ ମୁଁ ଚକ୍ଷୁହୀନ ଧୃତରାଷ୍ଟ୍ରଙ୍କ ଭୂମିକା ଗ୍ରହଣ କରିଲିନଥିଲି

ଦ୍ରୌପଦୀର ବସ୍ତ୍ରହରଣ ବେଳେ ବି ମୁଁ କୌରବମାନଙ୍କ ମଧ୍ୟରେ ନଥିଲି।


ମୋତେ ବୋଧେ ମହାଭାରତର ଚରିତ୍ର ସବୁକୁ

ଭଲଭାବେ ପଢ଼ିନେବାର ଥିଲା ପିତାମହ ଭୀଷ୍ମ ହେବା ପୂର୍ବରୁ।

କିନ୍ତୁ ମୁଁ ତ ଜାଣିଥିଲି ସେ ସ୍ବେଚ୍ଛା-ମୃତ୍ୟୁର ବର ପ୍ରାପ୍ତ ବୋଲି!


ଏବେ ଜାଣୁଛି,

କାହିଁକି ସେ ନାଟକର ନାଁ ଥିଲା

"ଶର ଶଯ୍ୟା"

କାହିଁକି ସେ ସଂଳାପରେ ଲେଖାଥିଲା

"ସବୁ ଛାଡ଼ି ଯିବା ହିଁ ଜୀବନ"

କାହିଁକି ଲେଖକ ବାରମ୍ବାର ସୂଚାଉ ଥିଲେ

"ତୁମର ମୃତ୍ୟୁରେ ନାଟକର ଶେଷ ହେବ"

କାହିଁକି ନିର୍ଦ୍ଦେଶକ ବୁଝାଇ ଚାଲିଥିଲେ

"ମୃତ୍ୟୁ ଏଠି ସ୍ୱାର୍ଥପର,

ସ୍ବେଚ୍ଛା-ମୃତ୍ୟୁର ବରଦାନକୁ ବି ବଳିପାରେ ମୃତ୍ୟୁ,

ଅପମୃତ୍ୟୁରେ ଗୋଟେ ଯୁଗର ଅବସାନ ହେବ,

ବିଗତ ସ୍ମୃତିରେ ବିକଳ କ୍ରନ୍ଦନର ରୋଳରେ

ନୀରବି ଯାଉଥିବ ପିଣ୍ଡପ୍ରାଣ,

ଫେରେଇ ନେଇଯାଉଥିବ

ସରି ଯାଉଥିବା ସମୟ ଅବଧିରେ ବଳକା ରହିଯାଉଥିବା କାମନା, କାମନାରୁ ସୃଷ୍ଟ ଯନ୍ତ୍ରଣା

ଯାହା ତୁମର ଏକାନ୍ତ ନିଜର।

ମୁକ୍ତି ଏକ ପ୍ରତୀକ୍ଷିତ ପରିଣାମ ସେତେବେଳେ।"


ଚାହୁଁ ଚାହୁଁ ମୋତେ ମଞ୍ଚ ଉପରେ ଘେରି ବସିଲେ

ଅନେକ ଲୋକ, କହିଲେ

ଅବିଶ୍ୱସନୀୟ ଏ ଅନ୍ତ।ଏତେ ଶୀଘ୍ର। ଏତେ ସହଜରେ?


ରାତ୍ରି କ୍ରମଶଃ ବୟସ୍କ ହେଇଯାଉଥିବା ଜାଣି ସେମାନେ

ଅନୁକମ୍ପାର ତେଲରେ ବତୁରେଇଲେ ବର୍ଣ୍ଣାଢ୍ୟ ଦୀପାଳି।

ଭାଗବତର ବାଣୀ ଶୁଣାଉ ଶୁଣାଉ ପିଆଇଲେ ତୁଳସୀ ପାଣି।

ମଞ୍ଚ ଝଲସୁଥିବା ସପ୍ତରଙ୍ଗୀ ପ୍ରହରୀରେ ଥକି ପଡିଥିବା

ଆଖି ମଉଳି ସେମାନେ ପରସ୍ପରକୁ ପଚାରି ଚାଲିଥିଲେ,

" ହେଲେ ଶେଷରେ ଯୁଦ୍ଧ ଜିତିଲା କିଏ?

କୌରବ? ନା ପାଣ୍ଡବ?"

-"ଏମାନଙ୍କ ମଧ୍ୟରୁ କେହିବି ନୁହଁ।

ମୃତ୍ୟୁ ଜିତିଲା'',ମୁଁ ସାମାନ୍ୟ ପ୍ରାଣ ସଞ୍ଚରି ଶେଷ ସ୍ୱରରେ କହିଲି।





যীশুকৃষ্ণ দাস : জন্ম ২৫ই ডিসেম্বর, ১৯৯৮। মাত্র ২১-২২ বছরের এক তরুণ ,অথচ কি অসাধারণ কবি প্রতিভার অধিকারী ! দৃষ্টি কতো গভীর , শব্দ নির্বাচনে কি অসাধারণ দক্ষতা !  জীবনকে , জগতকে , মানুষকে  প্রাণভরে ভালোনাবাসলে কারোর পক্ষে  কবে এমন মর্মভেদী কবিতা রচনা করা সম্ভব নয় । আমার তার সাথে কবে সাক্ষাৎ হয়নি , পরিচয় ও নেই । ফেসবুক মাধ্যমে তার কবিতার সাথে আমার পরিচয় ।  যখন তার কবিতা পড়েছি এক বিদ্যুৎ চমক  আমার ভেতরে অনুভব করেছি । আমার বিশ্বাস আজ থেকে ২০/২৫ বছর পরে  ,( তখন হয়তো আমি এই পৃথিবী তে থাকবোনা ) যীশু কৃষ্ণ যদি কবিতা রচনা অব্যাহত রাখতে পারেন তবে ওড়িশার শ্রেষ্ঠ কবিদের তালিকায় তার নাম অবশ্যই থাকবে ।