কবিতার  কথা 

অলংকরণ : অমিতাভ ঘোষ 



অ নি মে ষ  গু প্ত 

বাঁশি


ওপারে করুণ বাঁশি 

বাজালে শ্যামল

শুষে নেয় এপারের জল


বাঁশি মানে চিরজীবী ব্যথা      

শ্যামল এক চির নির্ধন         


জল বলতে 

কুয়োতলার চাঁদ  

হিমবন্ত অনুপ্রাণ আলো-

 

প্রাণ বলতে অকাল বোধন 



তা প স  রা য়

দেখতে দেখতে ধানের নুড়ির পাশে জমে ওঠে উপচে পড়া শূন্যতাগুলি


এই সেই কুয়াশার ঘাট। রোজই স্নানে নামবার আগে বসে থাকি

কুয়াশার প্রতিটি রেণু ছুটে আসে, কত গল্প তাদের -

প্রাসাদ বানাতে জানে, তারা নতুন অক্ষর আমার গণ্ডুষে তুলে দিয়ে বলে

- এসো পান করো

আমাদের হাঁস ও ডাহুক পাখিরা এখানেই রয়েছে কোথাও

রেলগাড়ি ঘোরাঘুরি করে পুকুরের অন্য পাড়ে, তাদেরও আমন্ত্রণ আছে


আমি এক সামান্য মেকানিক। আলপনার ভেতর থেকে স্ক্রু খুলে গেলে ডাক পড়ে

কোথাও অক্ষরের দোষে শব্দ ফলে না, ছুটে যাই, জোনাকি অন্ধকার যে গাঁয়ে জরুরি

আমাকে সেইসব হিত আমের বাগানে অন্ধকার রেখে আসতে হয়, ক্রমে 

গুটি থেকে আম বাড়ে কিছুটা অজ্ঞাতে

শিরার ভেতর থেকে রবিবার নেমে এলে আমার আহ্লাদ থাকে না, দেখা হবে না যে

বটের ঝুরিতে প্যাঁচানো নৃত্যরত টেরাকোটাগুলি, তাদের ভাতঘুম আমিই তো শুনে আসি দুপুর দুপুর


কুয়াশাতলায় তোমাদেরও যেতে হয়, বাতাবি লেবুর ফুলের গায়ের ঘ্রাণ কুয়াশাশরীরে

কবিতাখাতার সাদা অংশ জুড়ে - লক্ষ্য কোরো কুয়াশার কতখানি আহ্লাদ থাকে



তৈ মু র  খা ন

উল্লম্ফন 


এত উল্লম্ফন কখনও দেখিনি 


সবাই উঠে আসছে নিরন্তর 

সীমাহীন প্রাচূর্যের উল্লাস নগরে 


এইখানে অবিরাম সূর্য 

সূর্যের বার্ধক্য নেই 


কিছুটা যৌনগোধূলি যদিও 

গোলাপি রঙের মায়ায় 

বিশ্রামের পাঁচালি পাঠ করে 


তারপর নিরুক্ত শয়ন ঘর 

প্রাণশস্যে ক্ষুধা নিবৃত্তির আয়োজন 


এসব তবুও দূরের সমাচার মনে হয় 

আমাদের কারুণ্য নির্ভর পর্যটন 

কোথাও ঝরনার আবেগ খুঁজে ফেরে 

বাহ্যত সংকট শুধু আর সব মৃত্যুযাপন


দুরপনেয় বোধ কাঙ্ক্ষিত শোভার কাছে 

মাথা নত করে দেয় 

উল্লম্ফন চলতে থাকে 

             বস্তুত জাগতিক প্রশ্রয় 




ব ন মা লী  ন ন্দী -র দুটি কবিতা 


চিঠিতে 


ধূলো বালির কলম  লিখে না আকাশ

বর্ণ অক্ষর গুলি  ভাষার কাজল

গোপন বোনের সবুজ  বনভূমি জাতির  ঘরবাড়ি

স্নায়ুর  ঘড়ি ঘর

সপ্যান্দিত কোকিল

বারান্দায় হেলান দের   প্রতিবেশী রোদ 

পরিশ্রমী ঘাম    চেনে য় মাটি

কান্না লিখে ছেদবি নদু

খুব ভালো হত

থাকলে আহ্বান ও বিসর্জনের  দরজা ভিন্ন অভিন্ন

খাঁটি মুটি আগুন  মোটা চাল আর কলমি শাক

জোৎস্নার হাতপাখা গড়িয়ে দিত ভাত

ছায়া আয়নায় দেখি আলোর দিক নির্ণয়

খোলস  খোলস জিবন

মুখাশের পোশাক সবই সময়ের টিকুজি

লিখি ভালোবাসা

চা ভাড়ের  সংসার মিথ্যে এক গান

মাথাহিন মানুষ হাত পা বিহীন মানুষ

শুধু মিছিলের ভিড়

 লিখে না গোপন জল চিঠিতে

একবার  জানালার  পা দুটি চান করতে চাই

অনেক অনেক বছর পর



বান্ধবী


চিঠি শরীর উড়ে গেছে অচেনা পাখি পথে

বনের সবুজ ঠোঁট

টিয়ার বর্ণপরিচয় সবুজ পাঠশালা

আজ আর কিছু নেই

সিলেট চোখের হাসি কান্না

ক্ষণে ক্ষণে বাঁশির মতো বেজে ওঠে বাতাস দেওয়ালে


জানালার ফসল মাঠ

ডাইরির পৃষ্ঠায় বৃষ্টির নামতা

বিকাল ছায়াপথে গুমোট দীর্ঘশ্বাস

জোৎস্নার ছাতা মাথায় হেঁটে গেছে বাদল মেঘ

হারিয়ে গেছে মেঘবৃষ্টির আবেশ দিনগুলি

যার গভীর অন্তরালে ছিল প্রচ্ছদবিহীন ভালোবাসার পটভূমি


এখন ফসলকাটা মাঠ

হলুদ ফুলের শরীর

মাঠে মাঠে হলুদ চাঁদ

সর্ষে ফুলের ওড়না উড়ে এলে তোমাকে খুব মনে পড়ে



বি শ্ব জি ৎ  দে ব

নৃত্যকলা


বায়ুপ্রকল্পের মাঠ ও কর্কটক্রান্তি পেরিয়ে

এসেছে সে, পায়ের নূপুর উড়িয়ে


আমাদের হৃদবিগলিত চৌমাথা

বৈঠকের সেঁকা তন্দুরি, বহুকোষী ধাবা

সেদিকেই নামিয়ে রেখেছে মর্মর, ঠান্ডা মোড়ক

পার্শচরিত্র মোড়া পলিথিনগুলি


মড়কেও মরেনি সে, ধর্মভীরু

চামড়ার বিনম্র কালশীটে


শুধু আংশিক পাঠোদ্ধারকৃত এসবের

গল্প বলা শেষে আলাদা হয়েছে নদী উপনদী

গ্রাম ধোয়া আষাড়ের জল, নৃত্যকলা

শবের সাকিন



বৈ জ য় ন্ত  রা হা

জলজ 


শরীরে নদীর গন্ধ নিয়ে শব্দ উঠে এলে বিষাদের জড়তা ছুঁড়ে জল থেকে মাথা তোলে সৌধ মিনার আকাশের ডানা ভেঙে মেঘেদের ঘর বাড়ি খসে পড়ে নিষাদের তীক্ষ্ণ চোখে হরিণের দেহ সূর্যালোক কেড়ে নেয় গাছের কোটরে কোটরে বাস্তুসাপ পাকে পাকে  অভিশাপ দেয় অপদেবতার ভয়াল ভ্রুকুটি ম্লান হয়ে আসে গন্ধে গন্ধে অনুপস্থিতির পতাকা ওড়ে জলজ লতারা সবুজ বাতাস টেনে নেয় নৈঃশব্দ্যের ছায়া মেখে পড়ে থাকে বালুতট হলুদ পায়ের চিহ্ন বহুদূর মৃতদের পরিক্রমা সারে কবিতার মতো একা 

টবের মাটিতে পোঁতে নতুন গাছের চারা আমাদের মা



র বি ন  ব ণি ক 

আদরের ফলাফল 


অর্ধেক নারীর ভেতর ডুবে আছে আমার সমস্ত পোশাক,

পরিচ্ছদ আর অবশিষ্ট  চাঁদের  অংশ

নির্ভার  রোদে  একে  একে  মেলে  ধরি  পরিশ্রান্ত  ঘোড়ার  অঙ্গ

শুকিয়ে  এলে  গুছিয়ে  রাখি  ছায়ার  আসবাবে

 

শরীরে  দিগন্ত  নেমে  এলে  ভাবি  এসব  বাষ্পীয়  স্তন

স্তনের  ভেতর  আমাদের  অর্ধেক  চলাচল

 

ঘুমিয়ে  পড়ি, ব্রহ্মতালুতে  হাত  রেখে  চলে  যায়  সমগ্র  আদরের ফলাফল–



সু চ রি তা  চ ক্র ব র্তী 

শহরের বুকে বাজতো পিয়ানো মধুর


প্রিয় শহর থেকে বিচ্ছিন্ন ক্রমশ সেঁধিয়ে যাচ্ছি ঘরে

যন্ত্রণা সাবলীল স্বকীয় ভঙ্গিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে টবের গাছে

দরজার কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ ; জানলায় একটুকরো রোদ।

সন্ধ্যের শহরে বেজে উঠতো পিয়ানো প্রাঞ্জল 

কে যেন পরালো সাদা চাদর মৃত্যুর নৈঃশব্দ্যে 

সৎকার  চাই।

স্তব্ধতা ভেঙ্গে কে লিখবে স্বরলিপি ! কে খুলবে দরজার কপাট!

সকাল সন্ধ্যে রাত্রি গোগ্রাসে গিলে নিচ্ছে সময়

ক্ষুধাতুরা দৃষ্টি চেটে খাচ্ছে পোকা মাকড় । 

সারি সারি বাড়ি নিঃশব্দ নিঝুম ; সড়ক খুঁজে নিচ্ছে চাকার দাগ

সরল বর্গীয় বৃক্ষের ভারি মজা , ওকে ছোঁয়া দায়।

পাজর ভাঙ্গা পিয়ানোর শব্দ শোনা যায় দূরে

চার দেওয়াল বলো কবে সুস্থ হবে আমার প্রিয় শহর !



সৌ মী  আ চা র্য্য

বসতি


স্বপ্নের ভিতর ভোরের আলো এলে গাছেরা গুটিগুটি পাত পেড়ে বসে। দুহাতা সম্ভবনার সাথে মেখে নেয় ভবিষ্যত। নদী এসে লাজুক হেসে উঁকি দেয়। পাখিরা যায় আসে ব্যস্ত আপ্যায়নে।

ঘুমাতে যাবার আগে বীজ রাখা জরুরি কাঠামের ভিতর। ধূমায়িত স্বরে পুর্ণজন্মায় দধিচী। স্বপ্নের ভিতর এখনো স্বপ্ন আছে। শৈশবের গন্ধমাখা সহজ সরল প্রত্যয়। এই সব ছেড়ে কে চায় আবার জেগে উঠতে মুখোশের ভিতর!



সৌ ম্য ম য়  পা ত্র

প্রথম ছোঁয়া 


ছুঁয়েছি অছ্যুৎ হাতে 

হাত থেকে খসে গেল শীতের বাকল


হাত কী গাছ ?


প্রেমিক পুরুষ অথবা শীতল মাংসাশীর মাঝামাঝি

শুয়ে থাকা পাঁজর!


বুকে ঝনঝন শব্দে ডুবে গেল সন্ত্রস্ত পাতারা,

পাতা ধীর, পাতা মৃত 


পাতা পুরানো চোখের মতো 

এখনো গাছের নিচে খুঁজে পাওয়া যায়

এক ঐশ্বরিক সাদা স্বপ্ন, 

সুতোহীন শরীরের যুবক যুবতী– আদম ইভ 


ওরাতো প্রেমিক প্রেমিকা!


রাত পেরিয়ে এলাম দ্রুত 

রাতে কোনো পাখি জেগে নেই — কেবল শরীরবিদ্যুৎ।



হা মি দু ল  ই স লা ম

 যন্ত্রণা 


বারবার ফিরে আসে রক্তহীন ঠোঁটের দুপুর 

অসম্ভব ক্ষিদে নিয়ে জন্ম নিচ্ছে 

আমাদের প্রজন্ম ভ্রূণ 


ক্ষরণে এখন যন্ত্রণা বরফ যুগ

বিবর্ণ পাতায় ধুয়ে যাচ্ছে নদী। সম্পর্কের ভীড়ে অথৈ শূন্যতা 


হাওয়ার শব্দ লিপিবদ্ধ করি প্রতিদিন টেবিল উৎসবে 


গলিত বাষ্পে হারিয়ে যাচ্ছে মানব শিশু

ভোরের আলোয় মৃত শুকতারা 


অরণ্যের নগ্ন জীবন ছুঁয়ে দেখি ঈশ্বর খেলছে মানুষের মৃত্যুর সাথে