।। কবিতা ।। 

অলংকরণ : শুভদীপ মন্ডল



বাধ্যবাধকতা 

অ জি তে শ  না গ   

 

ওলো সই, তুই বাড়ি যাবি না?

চোখ চাইতেই লাল টুকটুকে ফ্রক পরা এক পরী

মিষ্টি হাসি, সুঠাম হাতের গড়নখানি - নধর কিশোরী,

যদিও ওঁর পায়ের দিকে চাইনি।

তারপর অনিয়মিত শ্বাসক্ষেপ,

ফ্লাশ টানা আর দাঁতে ব্রাশ দিতে দিতে চোখে জল,

দাঁড়ভাঙা চিরুনি, কোণে জমে থাকা ময়লাবাহী চশমা।

আর অফিসের পথে দাঁড় টানতে টানতে টেনে তুলি,

পরশুর না-কাচা রুমাল, কালকের মোজা, পকেটে কলম।

ব্যস্ত রাস্তায় চোখ চাইতেই

‘ওলো সই, তুই বাড়ি যাবি না?’ – পাশে নিবিড় হয়েছে -

লাল টুকটুকে ফ্রক পরা এক পরী।

আর আমি কালো কুটকুটে কুকুরের লেজ ডিঙিয়ে অফিসে।


রোদ মরে আসতেই, অফিস-টেবিলে মাথা ঝোঁকাতে দিলে না সে।

‘ওলো সই, তুই বাড়ি যাবি না?’

তাকিয়ে দেখতেই হয় লাল টুকটুকে ফ্রক খুলে ফেলেছে পরী।

ওর লোমশ দুটি পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে

আমি দুহাত জড়ো করে ঘুমোই।

ঘুমোতে বাধ্য হই।




অনভ্যাসের কবিতা

অ নু প  ঘো ষা ল


তোমার প্রতিটা হ্যাঁ-য়ের পাশে

              আমার একটা করে না রাখা আছে।

খুব জোরে,

হয়তো বা বিশুদ্ধ আবেগেই,চিৎকার করছো।

অথচ তুমি জানো,

    জোরে বলা সব কথাই সঠিক হয়নি আগেও।

ডেকে নিচ্ছ তাঁদের,

        খারাপ কথা অনায়াসে বলতে পারে যাঁরা। 

    চিৎকার বদলে যাচ্ছে হুমকিতে,দম্ভে।

    সংখ্যাতেও বেড়ে যেতে পারো তুমি।

   সংখ্যাও আসলে মেঘভাঙা কুয়াশারই নাম।

   চারপাশ ঘন হয়, বৃষ্টি হয় না কখনও।

   এরপর রেগে যাবে তুমি। যাবেই।

কিন্তু প্রতিটা না-য়ের যুক্তি

                  অস্বীকার করতে পারবে না।

শীত এসে গেলে এরকমই হয়।

রোদ নিভে আসে দ্রুত।

তোমার ভাবার গতির থেকেও বেশী।

বাতাসে টানটান হয়ে থাকে ছাতিমের ফুল।




উড়ন্ত জনপদ 

র বি ন  ব ণি ক 


যা  কিছু  গতিশীল  তা  আমার  নশ্বরতা

যা  কিছু  তুমি  তা  আমার  অবশ্যম্ভাবী  নৈঋত


প্রতিটি  কনফুসিয়াসের  ভেতর  এক  পরিত্যক্ত  মুখমন্ডল  থাকে

চোখের  ছাই,  নাসিকার  অবশিষ্টাংশ,  ঠোঁটের  বৈরাগ্য   

এসব  আমার  প্রাত্যহিক  উড়ন্ত  জনপদ


স্থিতিশীলতা  আমার  একান্ত  সহ্যের  গাছ

যা  কিছু  স্থিতিশীল  তা  আমার  অপদার্থ  বিপ্লব।




একটার পর একটা আকাশ

গো লা ম  র সু ল


একটা ভারী দরজা আমাকে বন্ধ করে নিয়ে যাচ্ছে

শুরু থেকে শেষের একটি অদৃশ্য কাঠামোর মতো


সূর্য জানে না এখন কি মাস

কারণ সে উদয় হয় না অস্ত যায় না

ছাদের ওপর এক আড়া বৃষ্টি হয়ে গেছে

এখনো ভিজে রয়েছে   একটি কমলা লেবু গাছ


উলঙ্গ আয়না 

আলগা  বনভূমির মতো

যেখানে আমি হরিণ শিশুর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটছি একটার পর একটা আকাশ

আর ওখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো দরজা আমি খুঁজে পাবো না।  




মালবিকা

ব ন মা লী  ন ন্দী


চৈত্রের ফুলদানিতে

বিকেলফুল

ডাইরীর নদীপথ বাঁক নেয়

টেবিল ভাবনায়

যেন রামধনু রঙের মাটি

একপাড় সরষে ফুলের উপাখ্যান

অন্যপাড় চিতা খুচরো কঙ্কালের ফুটপাত

বাতাসে ছিঁড়ে বন্য দাঁত নখ

পেপার ওয়েটের নিচে চাপা

শোকের সমুদ্র পৃষ্ঠাগুলি

সংসার সম্পর্ক গড়ে ধানমাঠ

এখন নিঃশ্বাসের নাভিমূলে কাটপোকাদের আস্তানা

গোপনে আয়না ভাঙি

অন্ধকার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুর হোশিয়ারি ‌পোশাক বদলায়

নদীর ওপারে তোমার হাতে তীরধনুক

 



বসন্ত

ম ন্দি রা  ঘো ষ 


ডাকনাম মনে আসে

মনে আসে রং আর ধ্বনির মেলা

 জলপাই নদীতে কাগজের নৌকো  

মাটির একতারায় বিকেল নামানো ডানা

 একদিন  সব আলগা দিয়ে দেখি

সারি সারি সংসারী মেঘ

সংশয়  নিয়ে ঝুঁকে আছে কাগজঘরে

ফাঁকও ফাঁকির  মাঝে মস্ত এক শূন্য

 শূন্যতা মুড়ে রাখছে

 

অথচ সেই ডাকনামের সাজিঘরে আজও 

 বসন্তের ঘুঙুর 

আনমনা মাদলের গায়ে আবিরের স্পষ্ট  উচ্চারণ

ভুল আঁকা নেই কোথাও

বরং যা কিছু ভাঙন সবই অবলীলাঘাম

 আতরধোয়া  ডাকনামের উচ্চারণ 

বাকি তো নদীর গান 

বয়ে যাওয়া ধারাপাত 

অনাবশ্যক দু একটি কথোপকথন

  ক্লান্ত অক্ষরে উড়ে আসে

বসন্ত এলেই চিনচিনে ব্যথার আলগোছ

নদী হতে চায়  বিকেলের খামে




কবিতার শেষ
বৈ জ য় ন্ত  রা হা

ভুলে গেলে হাওয়া বয়, নিয়ে যায় দূরে,  পাপ--
বন্ধ দরজা আজও,
                 বিচ্ছিন্ন দৃশ্যরেখা, 
                              অদৃশ্য সমস্ত সংলাপ, 
আমার ঘরের থেকে বহুদূর তোমার বাড়ি
জানিনা কেমন আছ, 
                  কাকে বল আজও,
                                    'বাড়াবাড়ি!'--

যুদ্ধেরা শান্ত খুব, ধ্বসে গেলে অথবা দাঁড়ালে,
মনে পড়ে ঠোঁটের খুব কাছে ছিল তোমার আঙ্গুল, 
হেরে গেলে, তারাদের ভীড় ঠেলে নৌকোর পালে
রক্ত জমাট হয়, খেরো খাতা,  ঝনঝন বাসনের ভুল, 

' চা করে খাওয়াব তোমায়, একদিন, তোমার বাড়ি'
নিঃশব্দে উড়ে গেছে, ঝরে গেছে সব শীতকাল, 
'চুল কেটো, বড় হয়ে গেছে',  ---
                            কতকাল জেগে আছে আড়ি, 

লাবণ্য ফিরে এস, অমিতের ফুরোল সকাল...




দেশ          

শ ত দ ল  মি ত্র


ধানকাটা সারা। ধু-ধু শূন্যতায় 

শুয়ে আছে মনখারাপের মাঠ। 

রাখাল বালক গরুর পাল নিয়ে ফিরে গেছে 

গোধূলির বিকেলে। যাক! 

আমার শরীর ছুঁয়ে আনমনে 

নিঃসঙ্গ সাপ এক 

এঁকে দেয় নিরুদ্দিষ্ট বাঁক 

আমি ঢলে পড়ি অনন্ত হননে। 

কে যেন বলে উঠল অস্ফুটে—বালাই ষাঠ! 

বুকের মধ্যে তখন পাললিক স্মৃতি 

হারানো নদীটির ছলাত্ছল আবেশ। 

পাঁজরের পাড়ে জন্মদাগ। অন্নঋণ।  

উত্তুরে বাতাস বয়ে যায়। যাক! 

আমার পা জোড়া মাটি পাক... 


আহা! মা বলে ডাকিনি কতদিন! 

দেশ!