।। অনুবাদ গল্প ।। 

অলংকরণ : শুভদীপ মন্ডল


বাবা, স্কুল , বেড়ে ওঠা মেয়ে

মূল ওড়িআ গল্প : অমিয় বেজ

বাংলা অনুবাদ : প্রদীপ কুমার রায়


                    

                               ১

পুত্র প্রেমে পাগলদের ছেড়েদিলে , বাকি সবাই আমার মতো মেয়ের বাবারা অহেতুক সুখী । আমি অপুত্রিক । ছেলে থাকার সুখ জানার অবকাশ নেই ।তবে মেয়ে না থাকার যন্ত্রণা কোনো  বাবার হৃদয়ে লুকিয়ে নেই ?


                                ২

                               

স্টান্ডার্ড সিক্সে পিঙ্কি । স্কুল , টিউসানে নেওয়ার আনার দায়িত্ব আমার । সেইদিন ও আমাকে চমকে দেয় । ফেরার পথে জিঞ্জেস করি --

-- মামা ! আইসক্রিম  ?

-- নাঃ....!

--- মন খারাপ ? মিস্ বকেছেন ?

--- না , ভালো লাগছে না ।

---কি হয়েছে ?

--- আমি  বড়ো হয়েছি বাবা  ।

হঠাৎ কাল থেকে আজকের ভেতরে বড় হয়ে যাওয়া, প্রিয় আইসক্রিম বারণ করার সমীকরণ বুঝতে না পেরে চুপচাপ বাড়ি ফিরে আসি ।


                                  ৩

                                 

সৌম্যা আরো চমকে দেয় সন্ধ্যায় ।

--- একটা ফোল্ডিং খাট আনবে ।

--- কেনো ?

--- পিঙ্কি এবার পড়ার ঘরে শোবে ।

---কেন ! বাচ্চাটা ভয় পাবে না ?

---নাঃ..! ও বড় হয়েছে ।

সৌম্যা আমাকে বোঝায় । আমি কিছু বুঝতে পারি ।

তবুও মনে হয় , আমার প্রাণ থেকে, বড় হওয়ার বাহানায় , আমার মেয়েকে আমার থেকে আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে ।


                               ৪

                              

খবর পড়ে বড়বাবু চিৎকার করেন ।

বাংগালোরে একটি ছয় বছরের মেয়েকে স্কুলের ভেতরে রেপ্ ।

এই কথা নিয়ে  বাংগালোর শহর জ্বলছে ।শিশুটি ওড়িআ দম্পতির ।

-- ছয় বছর ! না বেশি হয়ে থাকবে । এতো ছোট্ট বাচ্চা কে......!

স্টেনো বাবু যোগ করেন ।

--- কিছু অসম্ভব নয় । সে কি মানুষ না কি ? বাচ্চা খাওয়া রাক্ষস একটা ।

প্রমিলা দিদি বিরক্ত হয়ে বলেন

-- নতুন কি আছে ? নিঠারীতে কি হয়েছিল ? আমাদের এখানে নয় দশ ক্লাসের বাচ্চাদের প্রেগন্যান্ট করে দিচ্ছে ।

আমি চুপচাপ শুনছিলাম । বুক কাঁপতে থাকে ।কাঁপবে না  ?

আমি ত এক মেয়ের বাবা ।


                               ৫

                              

পিঙ্কি ।

  আর আগের মতো ঘোরাঘুরি করছে না । একটু চুপচাপ , একটু অন্যমনস্ক । আমার কাছে আর বেশি আসে না । সব কথা মায়ের সাথে । সেই ঈর্ষায় আমি কষ্ট পাই । সৌম্যা বোঝায় ।

  -- এসব সাধারণ । আমার ছোট্ট বেলায় ঠিক এমন হচ্ছিলো । দুঃখ করোনা । মেয়ে বড় হচ্ছে ।

আমার থেকে দূরে চলে গিয়ে আর কারোর কাছে চলে যাবেনা ত পিঙ্কি ?

সেই আর একজন , ভালোবাসা র সজ্ঞা বদলাতে কতটা সময় নিবে ?

এক  ভয় দুঃখকে ঘাঁটছিল কেবল ।


                                 ৬

                                

--- শিগগিরই বাড়ি এসো ।

---কি হয়েছে ?

-- পিঙ্কি র বন্ধুর মা ফোন করেছিলেন । স্কুলের ভেতরে একটি মেয়ে মরে পড়ে আছে ।

-- কি বলছ ? কার মেয়ে ? মিস্ কে ফোন করেছিলে ?

-- করেছি । সুইচ্ আফ্ । তাড়াতাড়ি এসো ।


কিভাবে স্কুলে পৌঁছেছি জানা নেই । প্রচুর ভিড় ।

পুলিশ পৌঁছে গেছে । ভেতরে ছাড়ছে না । বাচ্চাদের পরিচয় পত্র দেখে গেটদিয়ে বাইরে ছাড়ছে । পিঙ্কি আসে । একরকম দৌড়ে দৌড়ে । ভয়াতুর ,চোখ টলটলে । জড়িয়ে ধরে আমাকে । আমিও কিছুক্ষনের জন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরি । অপ্রস্তুত হয়ে আলাদা করে সৌম্যা ।

-- ছাড়ো ওকে । বড় মেয়ে। দম বন্ধ হয়ে যাবে ।

--- চুপ !

আমি খুব জোরে চিৎকার করি ।

আর্ধেক ভিড় আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায় ।