।। মুক্তগদ্য ।। 

অলংকরণ : শুভদীপ মন্ডল


তরুণী বেলার বিছানাটা

না স রি ন  আ ল ম



তার বিয়ের আগের রাতে শেষ বারের মত নিজের শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল নীলা । বালিশ গড়িয়ে এক ফোঁটা লবন জল বিছানাটার উপরে গিয়ে পড়ল । বিচ্ছেদের যন্ত্রনা তখন দুজনের হৃদয় জুড়ে । স্মৃতির ভেলায় ভাসতে থাকল দুজনেই । 


মনে আছে তোর,  দোকান থেকে কিনে আনা নতুন জামাগুলো মেলে দিতাম তোর উপরেই?

 মুচকি হাসল বিছানা । 

শুধু নতুন জামা! 

কেন তোর পুরনো জামাগুলো জটলা পাকাতো না আমার উপরে? 

মনে আছে তোর আমার সাথেই রোজ কেমন নতুন বই এর পাতার গন্ধ শুঁকতিস?

তা আবার মনে নেই , কী দারুণ গন্ধ ! আর পাতা উল্টানোর সেই খসখস আওয়াজটাও তো শুনতাম । 

ডাইরি লিখতে লিখতে কতদিন তুই কলমটা হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়তিস আর কলমের সেই নীল কালি আমাকে নোংরা করত । 


রাত দুপুরে মন উদাস করা রবীন্দ্র সংগীত শুনে মন ভার হতো তোর । মাঝে মাঝে অভিমানের সুরে কানে কানে তখন বলতিস - "কেন শুনিস এমন গান , আমার বুঝি মন খারাপ করে না" ?

আর আমি তখন তোর মন ভাল করতে গেয়ে উঠতাম "ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে" । ফ্যাসফেসে গলার গান শুনে তুই বিরক্ত হতিস ঠিকই তবুও তুই শুনতিস। 

আমাকে সঙ্গে নিয়ে তুই বেশ ভাল ছিলি !


 সেই ঘর , সেই বিছানা এখন পর । সেই ঘরের মালিক এখন বাড়ির ছেলে ।

ঘরটা এখন গেস্ট রুম । আর বিছানাটা গেস্টদের জন্য ফাঁকা পরে থাকে । একা, একেবারে একা । প্রিয় নীল বেডসিটটাও সময়ের সাথে সাথে ক্ষয়ে গেছে । 

বিছানাটা গেস্টদের সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে এখন । হয়তো কষ্ট হয় এখনও তবে তার কষ্টের ভাষা অগুন্তকরা কী বুঝতে পারবে!  

দু মাসে ছ'মাসে গেস্ট হয়ে নীলা গেস্ট রুমে থাকতে আসে । গেস্ট  রুম হয়ে যাওয়া তার ঘর তাকে দেখতে পায় । বিছানাটা বোধহয়  আবার একজন গেস্টকে দেখে বিরক্ত হলো । আসলে বিছানাটা তাকে ভুলে গিয়েছে । 

সে আসতে আসতে নিজের শরীরটা ছড়িয়ে দেয় বিছানায় । বিছানা জুড়ে অপরিচিত সব গন্ধ । চোখ বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করে তার বিছানার ফিসফিস আওয়াজ,  ডাইরির পাতা উল্টানোর শব্দ আর খুঁজতে থাকে নতুন বই এর গন্ধ । নিঃশব্দে কেমন ঘুমিয়ে আছে সব । 

বিছানার বুকে কান পেতে ফিসফিস করে নীলা জিজ্ঞেস করে -কী রে ভালো আছিস ?