।। উচ্চারণ ।।
![]() |
অলংকরণ : শুভদীপ মন্ডল |
নি ল য় ন ন্দী
সোয়েটার
একদিন শীত ছিল। গ্রামোফোনে রাগেশ্রী।
কুয়াশা এসে দাঁড়িয়েছিল জন্মান্তরের সীমানায় অশালীন উত্তুরে বাতাসে তখন নিষ্প্রভ পাণ্ডুলিপি
মাঝির কোঁচড়ে চৌরাসিয়ার বাঁশি নৌকা
দিগভ্রান্ত
নয় নং কাঁটায় একমনে উল্টোসোজা সোজাউল্টো
অরণ্য বুকের মাপ। অবুঝ পশম।
পশম বা পেখম কোমলতা যে নামেই ডাকি
লুকোনো নখেই চিনি আদুরী বেড়াল।
উলের বনে তখন কিচিরমিচির ঝড়ঝাপটা বা
অনাগত বসন্ত উৎসব...
সেই থেকে গুছিয়ে রাখা আছে বসন্ত বড়শি
তা থাক
সেদিন শীত ছিল
আজ একটা সোয়েটারও নেই।
ব ন মা লী ন ন্দী
মালবিকা
রাত শিশির কুয়াশার চাদর
ঝরে পড়ে রোজ কতকিছু
আমি পাড়াগাঁয়ের কলম
বাঁশপাতার জীবন
প্রতিদিন হাটে লন্ঠন হাতে অন্ধকার
লিখতে শিখিনি চাঁদ দুঃখ
নক্ষত্রের বোবা কান্না
দুর অশ্বত্থের ডালে ঝুলিয়ে রাখে পেঁচা নরম হাত
সমুদ্র ফোন আলাপ পরিচয়ে ডাকে নিঃস্বতা
আমি ও অন্ধকারের ছায়া
বা অদ্বিতীয় একা
মালবিকা তুমি জ্যোৎস্না যন্ত্রণা
ভালোবাসা প্রেম নয়
এবার শরীর চাই
প্র তা প বো স
অনুশীলন
আমার একটা ছোট্ট কাঁচের বোতল ছিল
খুব যত্ন করে রাখতাম।
আকাঙ্ক্ষারা সব টুপটাপ ঝরতো-
ডিম ভরা ইলিশ মাছের তেল, মাংস, সর্ষেবাটা সব খাওয়ার পর ডিমগুলো
বা অন্যের বাগানের আপেল
কিম্বা ভাদুরে কুকুর যুগলের থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার ভান
সে সব টুপটাপ ঝরে পড়া আকাঙ্ক্ষারা
আমি কাঁচের বোতলটাতে ধরে রাখতাম।
তারপর আমার চারপাশ দিয়ে চলে গেল সময়
বাড়ির বিড়ালটারও অনেক বয়স হলো
আর বোতলটা, আমার ছোট্ট বোতলটা
ভেঙে গেল একদিন...
ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম...
কিন্তু আমায় অবাক করে বোতলের দৈত্যটা
চোখ খুলে ঘুমিয়ে থাকলো।
র বি ন ব ণি ক
সমস্ত ১
ঘুমন্ত শরীরটাকে যদি ভেবে নেন ভিক্ষার আদ্যক্ষর
বা অসার জিভটাকে ভেবে নেন নিরস্ত্র মৃত্তিকা
অথবা যদি ভেবে নেন অশ্রু একটি কাঙালিনী
তবে বলবো অজান্তেই বারংবার ভুল করে লেখেন পরিসর
বা জেনে-বুঝে শব্দকে ক’রে তোলেন অমাত্রিক
প্রতি সন্ধ্যায় পাঁচটি বক সংকেত তৈরি ক’রে ফিরে যায়–
চোখ ফিরিয়ে নেবার ভঙ্গিমায় চেয়ারের মানচিত্র আঁকেন প্রতিবার–
সমস্ত ২
আমাদের বসবাস বলতে কোনো গ্রাম ছিল না
চলাফেরার সাথে পেঁচিয়ে থাকতো সাপ
শরীর ঘুমিয়ে পড়লে মন উঠে যেত মায়ের কাছে
মা বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলতেন একাটা রাষ্ট্রের জন্ম হওয়া দরকার
এত সব না বুঝে সাপের চোখে চোখ রাখতে রাখতে
কখন যে সিংহকে তাড়া করে বসলাম
জেগে উঠছে শরীর, তবুও বুঝতে পারছি না
আমার ভেতরে রাষ্ট্র না রাষ্ট্রের ভেতরে আমি–
সৌ ম্য ম য় পা ত্র
বিস্ময়
শুধু বিস্ময়; গাছেরা যতটা চুপ
এই বৃষ্টির জল আয়নার মতো
কাছে যেতে পারো, এ জীবন রাস্তার বেশি নয়
মুছে যায় দু'হাতে জমা ধুলো , স্বাদ
শুধু বিস্ময়; মেঘ বদল হল বলে ঋতুও
সব কথা মুছে যাওয়া রোদ, মন আর মাংসের ঘ্রাণ
কষাইয়ের চোখের জল, অভিমান; মিথ্যে
স্বপ্নের জন্মের ইতিহাস এখনও মাটিতে।
আজ বলে কিছু নয়, সব দাগ অতীতের
সব ফিরে যাওয়া মুখ নিজেকে পেয়েছে
গুছিয়ে নিয়েছে,
শুধু পড়ে থাকে কথা, প্রিয় চোখ
হেঁটে আসা পথ, প্রেমিক ধুলোরা
রাত্রির মতো নীরব অথচ মৃত্যুর মতো সচেতন।
এই বৃষ্টির জল আয়নার মতো,
এ জীবন রাস্তার বেশি নয়। শুধু বিস্ময়।
সৌ ম্য ব্র ত চ ট্টো পা ধ্যা য়
বসন্ত বিলাপ
এই যে বসন্ত বাড়িয়েছে হাত.....
তীব্র ভালোবাসা তবু অকরুণ তফাৎ
একদিন, দুইদিন তারপর বহু বহু কাল
খোলস ছাড়া ঘুমন্ত ময়ালের মত
হিস্ হিসে স্তব্ধতায়, শুয়ে ছিলে অন্ধকারে
বুকের অনেক গভীরে
মজে যাওয়া সে নদীর তীরে,
আজ পাকা উঠান, যত্নের গেরস্থালী.....
তবুও তো কত কাঁধ প্রত্যহ হয় খালি
টুকিটাকি হলুদ, নুন ছেড়ে নদীর অতলে
শ্মশানের ধ্বস্ত কোলাহলে
পর্দা উঠে গেলে, দেখো অকস্মাৎ....
হয়তো পারবে চিনতে
কালের নির্ঘোষে সেই বজ্রের আঘাত