কবিতা 

অঙ্কন: শুভদীপ মন্ডল



দেওয়ালের রঙ

হ রি ৎ  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়


দেওয়ালের রঙ ভারি হলে নদী অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে

তীর ছুঁয়ে যেতে যেতে অপলক দেখে নেয় 

গাছেদের সব কটি পাতা ঝুলে আছে আলোপথ ধরে


মেঠোপথে কোলাহল করেছিল যতগুলো পা

আজ তারা 

আলপথ ধরে সোজা চলে গেছে দিগন্তের ওপারে

যতসব আলোকিত ঘর

তাদের জানলার পথে পথে

পেঁয়াজের ধূসর খোসার মতো অন্ধকার ঘনীভূত হয়


কিছু কিছু পা উঠে আসে দেওয়াল সাজিয়ে

সব পথ কেড়ে নিয়ে মাথা হয়ে যাবে -

এমনই ইচ্ছা সব উঠে আসে হাতের যুদ্ধে 

দেওয়ালের রঙে রঙে ফিকে হয় অলিগলি দেশকথা


হাতেগোনা ক'টা দিন মাথা তুলে সাড়া দেয়

ডালপালা সবুজের ঘর

চোখে চোখে পড়া যায় 

জোয়ার ভাঁটার দোদুল্যমান সংসার

তবুও দেওয়ালে দেওয়ালে মুখর দেশজ বন্ধ্যা মগজ




বৃত্তান্ত

স ত্তা প্রি য়  ব র্ম ন


বৃত্ত বলতে ফিরে আসা বোঝায়

বৃত্ত বলতে বোঝায় মুখ গহ্বর, শব্দ

                    পরিণামশূন্য নির্লিপ্ত একখণ্ড মাঠের মত বাকতরঙ্গ

                    যা আমাদের জুড়েছিল

                    যা আমাদের ভেঙেছে, 

আকাশের চাঁদ বৃত্তাকার 

নেহাইয়ে পেটানো শূন্য একখানা

          ঝলসে যাওয়া কামনার মুখচ্ছবি,

বৃত্ত বলতে বুঝি দূর্লঙ্ঘ অন্ধকার গুহা

বৃত্ত বলতে ছোট একটি ভাসমান দিঘী

দিকহীন নেশাখোর অশ্বারোহী

                                        ছুটছি বৃত্ত ধরে।

পথ আছে অনিঃশেষ

তবু কোথাও না কোথাও গিয়ে ঠিক মিলে যাবে

                                        আরেকটি পথে

যেভাবে ছেড়ে যাওয়ার পর

                    কেউ না কেউ হাত বাড়িয়ে দাঁড়ায় পথের পাশে,

দাঁড়াবেই, ছেঁড়া সুতোয় গিঠ দিতে আসবেই

                            কোনো এক সেলাই মেশিন।

ভালোবাসায় স্পর্শ পেলেই

                              আমাদের আরেকটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়।

বৃত্ত বলতে আমি বুঝি জীবন 

বৃত্ত বলতে বুঝি একটি সম্পর্ক 

বৃত্ত বলতে ঘড়ির ফ্রেম 

বৃত্ত বলতে শূন্য কন্ঠস্বর - 

যতো দূরেই যাই 

                    গরুর খুট পোতা আছে সূর্যের বাড়িতে, 

আমার বজ্রমুষ্ঠির ক্ষমতায়ণ বৃত্তের ভেতর

বৃত্তের মুঠোতে ভোরে থাকে অঘ্রাণের পাকা ধান 

বৃত্তের মধ্যে ঘোড় দৌড় 

ভিখেরি বুড়ির ভিক্ষের থালা বৃত্তাকার। 

কত দূর যেতে চাও? 

এই রইল আটপৌরে বৃত্তাকার জানালা খোলা 

                              বৃত্ত সম্পূর্ণ হলে সন্ধে বেলা 

                                                  এখানে এসে বসো। 




ঘুমঘুম নদী

বি শ্ব জি ৎ  দে ব


ঘুমের পোশাক পরে এসেছে নদীটি

কটিবন্ধে চর,ছিটমহলের বালি..

গীট দিয়ে আঁটা নীলাকাশ ফাঁকি

সাঁকোটি বুকের ওপর

নড়বড়ে হাড়ের কেয়ারী....

পোশাকের ঘুমঘুমগুলি ভাঙাপাড়

অববাহিকার ঋনী, বিমর্ষ জলের

অসুখে জড়ানো শ্যাওলার গ্রাম

ছোপ ছোপ আড়ষ্ট কলোনি


নুড়ি ফেলে ফেলে ভাটিদেশ খুঁজে

জুড়িয়ে নিতে এসেছে সে

আমার মতোই তাঁর ভাঙনের শ্বাস

স্লিপিং পিলের ভাটিয়ালি ..




কোথায়ও হারিয়ে গেছে কিছু একটা

গো লা ম  র সু ল


আমার মধ্যে হারিয়ে গেছে কিছু একটা

আর শরীরের এক জায়গায় ক্ষতের মতো সে আমায় ডেকে নেয়


আকাশের দ্বিধা থেকে বেরিয়ে কে কোথায় চলে গেলো 

নক্ষত্রের পাল

আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাষার দুঃখী বর্ণমালা

আর কানের ভেতরে জমে থাকা ফাঁপা শব্দের মতো  বছরগুলো


কান্নার ভেতরে ঢুকে পড়া প্রজাপতি তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল সূর্যের দিকে


দূর ঘুরছে

ব্যক্তিগত হয়ে গেছে মেঘ


হাওয়ার দুটি প্রথম অঙ্কুরিত পাতা

গোড়া থেকে সাড়া দেয়

পৃথিবীর গভীরে গর্ভপাতের মতো

আমাদের সেই ব্যথা


জলে ভেসে যায় জনৈক নৌকা

কোথায়ও হারিয়ে গেছে কিছু একটা




মন্দির

বি শ্ব জি ৎ  আঁ কু ড়ে   


কথা তো কথাই হয়তো-বা নিটোল ভাষ্কর্য.....

বিভৎসতার আড়ালে আর কতটাই বা বিভৎস রূপ তাঙ্গুরতে পারে ! 

যতটা তার অন্তরালে.....     


মন্দবাসা ভালো নয় জেনে তুমিও কী ঝাঁপ দাও.....

আঠারোর সাঁতার জেনেও  নির্দ্ধিধায় জ্বালিয়ে রাখো দাউদাউ 

উঠোনে ছড়ানো  নতুন ধানের খই  

                                                       রাঙা-মাড়ুলিতে আল্পনা 

অঘ্রাণের কুয়াশা মাখা গোধূলি আঁচল  

সে সোহাগে  টোকা দিয়ে কেউ কী উড়ে গেছে.....

 ঘাই সামলে, অক্ষম তুমি  ! ফুগলে গেছে সময়  


বিষাদে কাহিল হলে দোষী করো.... 

বেচারা রাতের অনুবাদে উলঙ্গ আঁধার

                                              সে রোষে  চাঁদেরও কলঙ্ক ঘন..... 

পতিত জ্যোৎস্না দিয়ে  ভিজিয়ে নাও দেহ

এ তো সামান্যই ক্ষত ! যাতে তুমি  মামুলি বিকেল বলেই চেনো.....