কবিতা 


অ বে লা   
নির্জন  নস্কর 

গাছ;
আমাদের ছায়াটুকু

দাহবীজ
কোথাও যাওয়া নেই ৷ তবু

দু-একটি পরাজিত পাখি , করতলে
ধরে আছে ছায়া  —

উড়বে বলে সেই যে পজ হয়ে গ্যাছে !
আকাশ এসে  ঠুকরে তুলছে ডানা



অ ন ভ্যা সে র  ক বি তা
অনুপ ঘোষাল

দুপাশে জঙ্গল রাখা থাক।
পশুপাখি সব শুয়ে থাক সম্পন্ন চাঁদের আড়ালে।  
লতানো গাছের মতো
                    নিষ্ঠাবান শীত নেমে আসুক
                               খসে যাওয়া পাতার ভিতর।
বাঁকাচোরা নদীটির পাশে
             অযথাই স্বরলিপি ফেলে যাক
                                         কিশোরবেলার কেউ।
  এরকমই কত কিছু সাজাতে চেয়েছি প্রতিদিন।
টাঙিয়ে দিতে চেয়েছি পিঠ খোলা যতিচিহ্নটুকু    
                   আলো রঙের বাদাম গাছের ডালে।

কখনও ভেবেছি এইবুঝি বৃষ্টি নেমে এল
         জারুলের বন,
            অনিচ্ছুক আবাসন,
                           কোচিং ফেরত ট্রামে।
বহুবার হেঁটে যেতে চেয়েছি ফিরে আসা পথে,    
             একদম একা...আনমনা অলীক ছবিতে।
      শুধুমাত্র ভুলগুলো শুধরে নেব বলে!
সে সব হয়নি কিছু।
সে সব হয় না কিছু।
সূর্যাস্ত শুকিয়ে যায়।
দুধেভাতে থেকে যায়
    কিলবিলে একফসলী ব্যাভিচার আর
                                নিটোল উদ্বৃত্ত মশারির খুট।





এ ক  বি মূ র্ত  স্প র্শে র  অ পে ক্ষা য়
সুকুমার হালদার


দৃষ্টিভ্রম হলে হিংস্র জন্তুর মতো
মিহি ঘ্রানে খুঁজে নিই আমার প্রিয় গলি
আমার কিছু  অপূর্ণ একাকী সময়
লুকিয়ে রাখি গলির অন্তরালে 
ভাবি! গলিটা রাজপথ কবে হবে !
ইচ্ছার পৃষ্ঠায় আঁকিবুকি কাটি আর
উদাসীন ঈশ্বরের কথা ভাবি
ভাবি,ফুলেদের অসুখ হলে
ঈশ্বরও উদাসীন হয়
দীর্ঘ আয়ুষ্কালে মরচে ধরা জানলার মতো
অজস্র গলির ভেতর বেঁচে আছি। না
আমার সর্বাঙ্গ জুড়ে অজস্র গলি,
জানি না। এক বিমূর্ত স্পর্শের অপেক্ষায়।



নি বে দ ন 
তৈমুর খান

রোজ নিবেদন লিখে যাই 
জীবনের ঝরাপাতা কুড়োতে আসে না কেউ 
বাতাস ওড়ায় শুধু, বহুদূর 
নিদাঘের আকাশ ঘিরে ভরসার মেঘ আসে 
হয়তো করুণা, হয়তো বিস্ময় 
নিয়তির রুখাশুখা মাটি পাতে বুক 
রোজ নিবেদন ওড়ে 
বাতাসে বাতাসে পোড়া ছাই ।




মৃ ত  চো খ
সৌম্যময় পাত্র

খোঁজ নিয়ে দ্যাখো তারা অনেকই এলোমেলো পায়ে
কেউ সিঁড়ির ধাপে , নদীর পাড়ে
কেউ সবুজ ভালবাসে বলে ;
স্বপ্নের স্বাদ জল হয়ে আজও -
কেউ খুঁজছেনা আর , কবে নদীর ওপারে পা ;
কবে মহামারি শেষ ,
কেউ রাখছেনা হাত , চুমু
জানালার মতো জলে ভিজে থাকা চোখ
স্বপ্নের কাফন পরেছে সাদা সাদা
কেউ ভাবছেনা রাত কত হলে
ঘুমেদের প্রেম ঠিক মায়ের মতো ।




ঠি ক  যা ও য়া র  আ গে ই 
তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়


দীর্ঘজীবী আশীর্বাদ ধুয়ে যাচ্ছে ঋজু কান্নায়!
এই মাহেন্দ্রক্ষণেও সঙ্গে থাকবে না?
মাথার উপর দৈনন্দিন চাঁদ
ছড়িয়ে দিচ্ছে অধোমুখ জ্যোৎস্না...
আড়াল করে রাখো।
আড়াল ভেঙে রাখো অভিশাপ!
সন্তান আত্মহত্যা করলে
 যে অভিশাপ বুকে ধরে রাখে বাবা! 
অথচ, 
মা রোজ প্রদীপ দেয় তুলসী তলায়!
দেখে,
একদিনের দীর্ঘজীবী আশীর্বাদ, 
চঞ্চল সাঁতার কাটছে ঋজু কান্নায়।
  



 গুচ্ছ কবিতা 


অ নি মে ষ  গু প্ত

১)
বৃষ্টি ছিল একটু আগে  
এখন মেঘের ছায়া
মায়াবী আলো
মেখে নিচ্ছে নিজের সুশীতল
এই সেদিনও দহন ছিল  
গ্রীস্ম বাতাস...  
পূতাগ্নি, আহূতি, ওঁ ফট স্বাহা
নেভা আঁচে স্বর্ণমূল্য নেই
উদান বায়ু এখনো স্থির  
নিজের টানে যৎকিঞ্চিৎ  
দক্ষিণামিদং...   
নিবেদনে বটের পাতা  
আলোর কাছে অর্ঘ্য দিচ্ছে
আঠা আর রস

 ২)
ঘুম চায়নি যারা
তারা দুবেণীদের মতো
ঋতুমতী হয়নি শুধু
স্কুল ড্রেসে নাচতে এসেছিল


সেইসব ঢেউ খুঁজে খুঁজে
পৌঁছোতে পারিনি...
নাম বলার সময় এলে
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছি
কী যেন নাম, কী নাম যেন !  
ঘুম চাইতে এসে...

 ৩)  
আর তো ফেরেনি
সে যে রোজের বিলাসিনী
আরো কিছু ধুঁধলা ছিল
সেদিন বুঝিনি     
আমি তো শালুকফুল
একগলা জলে  
পাওয়া যায়না কিছু   
শুধু বৈধব্য ফলে
দাঁড় টানি দাঁড় মাপি
কত বাঁও বল !
যেখানে বসেছে কথা শব্দ ছলোছলো... 

 ৪)
যেমনভাবে এসেছিলে—
পড়শীকে জানান দিয়ে  
তেমন করে নয়...

চলে গেলে যেন এক সুচতুর খিল
কৌশলে নৈঃশব্দ্য মিশে আছে  
ভেবেছিলাম গান হবে
দুধছায়া আলোয়
যেভাবে কোমল ধৈবত 
এসে বসে প্রথম ভৈরবে
তবু এই অকরুণ যাওয়া!  
রোজ রোজ রাস্তা দিতে
ধুলো হতে হতে
গুঁড়োজন্ম শিখে নেয় পদচিহ্ন রাগ।       

৫)
এইসব দুঃখ কিংবা সুখ   
দুর্ঘটনাজনিত কিছু নয় !  
শতকরা পঁচানব্বই শতাংশেরই
ভুল ভ্রান্তি হয় ভাবে
এ-ই বোধহয় নির্মল বিশ্বাস
মেনে নেওয়ার দোরগোড়ায়
আসতে আসতে
পেরিয়েছি লেভেল ক্রসিং    
মেল ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে দূরে
ফেলব না রাখব ভেবে  
গার্ড সাহেবের দিকে
ফিরে যাওয়ার
পতাকা নাড়তে থাকি।


 ৬)
অতর্কিত আঘাত হানতে
কিংবা কোন অভিচার ক্রিয়ায়
একেবারে নিকেশ করে দিতে
বদলে দুচোখ নিলে  
এতই জীঘাংসা !  
এখন শূন্য কোটর
দিন রাত এক হয়ে আছে 
ভেবেছিলাম বেলা পড়লে
যাব কিন্তু সে আগুনের গায়ে
লেগে যাচ্ছে মহাকালের ছাই   
রাস্তা নেই, ঠাহর করে করে কতদূর চলে যাওয়া যায়!  

 ৭)
কারো আসার কথা ছিল  
বৃষ্টি সারাদিন  
বাড়ির বাগানে বটপাতা
জামপাতার হলুদ শূন্যতা
চোখ ধাঁধানো দুপুর
জানলাগুলোর পাল্লা খোলা
পুরনো গন্ধ আর নির্বাক হাওয়া
পাক দিচ্ছে ঘরের ভিতর   
‘তুমি আসবে বলে’, এফ এমে
গায়ত্রী বসুর গান বাজছিল—

দরজার কড়ায়...  
ঔদাস্য ছিল সঙ্গে বিষাদও
দুঃখদিনের সময় বয়ে যায়  
মেজোপিসিমা আজো
একাকিনী
স্নান সেরে কাঁসার থালায়
মধ্যবয়স ঢেলে দিচ্ছেন পড়ন্তবেলায়




র বি ন  ব ণি ক

একপেশে

শুনেছি আমার নাকি দু’পাশ ছিল না
কেউ কেউ মস্করা করে বলতেন একপেশে
কেউ আবার বলতেন এক পাশাপাশি 

পাশাপাশি শব্দটার প্রতি তেমনভাবে কোনো কাম, ক্রোধ বা ঘৃণা ছিল না
শুনেছি কেউ কেউ এসে উঁকি দিয়ে দেখতেন আমার একপাশের স্বচ্ছতা
আমি নাকি তৎক্ষনাৎ বলে উঠতাম শূন্যতা একটি লিপিবদ্ধ স্তন
অমনি তারা একে একে মিলিয়ে যেতেন দৈনন্দিন শিলাখন্ডের ভেতর
বাবা এসে কানে কানে বলতেন যাতায়াত একটি দৈনিক রূপক
আমি কান সরিয়ে নিলেই মানুষের সমস্তপাশ থেকে জ্বলে উঠতো আগুন
আর ক্রমশ আমি ডুবে যেতাম আমার পাশাপাশি শ্রমণে–



অন্তর্গত করতল

যে পাশে অভিজ্ঞান, সে পাশে আমার ছুটন্ত ঘোড়া
ঘোড়ার ভেতরে দীর্ঘ রোদের মতো নিগ্রতা

যে পাশে অভিজ্ঞান, সে পাশে আমার সমুদ্র উপাসনা
জলের ভেতর বিস্তৃত লবণাক্ত আকাঙ্ক্ষা 

সত্য ও অসত্যের মাঝে শুধু কাঁচা মাংসের দেয়াল
যে পাশে আমি সে পাশ আমার অন্তর্গত করতল



ল ক্ষ্মী কা ন্ত  ম ণ্ড ল


চৌকাঠ 

একরাশ নির্জন গন্ধের হরিত কাল 
প্রতিদিনের শুকনো পাতাগুলিকে ঝাঁট দিচ্ছে নিস্পাপ পথরেখা - ঊষায় হাঁটতে থাকে স্তোত্রগান  
আমি স্বস্তিক চিহ্ন আঁকি  - এক ঝাঁক কাকের গায়ে জড়িয়ে যায় গাছ গাছালির বিবেক ;  নদীশব্দ আসে আলো অন্ধকারের   মিলনকালে ,  পাখির  ছায়া  লম্বা হতে হতে একর একর ধানি জমি পেরিয়ে যায়  ; পুব কিনারায় রোদের আঁচল  - 
ব্যথা তো অনেক - তবু এই বিস্ময়ের মুক্তি নেই     
অস্থিরতায় উঠে দাঁড়ায় প্রতারিত আদমের গল্প ,  মাটির শরীরে প্রোথিত বিষের যন্ত্রণা - শিশির বাগানে হেঁটে যাওয়া শুশ্রূষা রমনীর দীর্ঘতম দুরত্বে ভেজা গোড়ালি ,  কপাল জুড়ে এলোমেলো কেশ       
পৃথিবীর সকল একাকীত্বের নামই ভোর  -  ক্ষতবিক্ষত করছে শোক -  তারপর সূর্যোদয়   


 অনাথ 

চাতকের জল পিপাসায় আমারই জন্মদাগ, অথচ হাত থেকে খসে পড়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, প্লেটোর ধারণা
অচিন পাখির খাঁচাটা ভাঙা হলো না আর শিরদাঁড়ার প্রকারভেদে সেই জলাজমি  
 নিরম্বু অস্তিত্বের কাছে পথ দু’ভাগে বিভক্ত  এক সপুস্পক দুই অপুস্পক 
দুঃসময় থেকে যে শিশু বেরিয়ে আসে  সেও বুঝে গেছে আমলা আর আলপথ 
শূন্যস্থানে আঙুল ডোবাতেই দুটি প্লেটের ধাক্কা , চালতা পাতার ফাঁক দিয়ে প্রজাপতি উড়ে যায়  
কেটে যায় অপ্রস্তুত ইচ্ছে  তেতাল্লিশ তিপান্ন  সঞ্জীবনী তুচ্ছ করে যুদ্ধ থামে নি  আজও 
কেবল ফুটে  উঠছি ধানের ডগায় আর আকাশ তার আঁচল বুলিয়ে দেয়  -    


★ শীর্ষক : কথিকা বসু