নিরীক্ষামূলক গল্প 

নিরুপমা

সৌ গ ত


ন্মের পর হইতে পিতা ব্যতীত নিরুপমাকে আর কেহই কখনো আদর করে নাই। তাহানর একটিমাত্র কারণ ছিল তাহার গাত্রবর্ণ। জন্মের অব্যবহিত পরেই কন্যাদায় নামক টিকাটি শিরোভূষণ করিয়াই সে তাহার প্রথম ক্রন্দন ঘোষণা করিয়াছিল। পরিবারস্থ সকলেই উৎসাহী ছিল কালিন্দী জাতীয় কোন নামকরণে কিন্তু রমানাথ নিজ প্রথমা কন্যার ভেতর কী দেখিয়া একপ্রকার বলপূর্বক তাহার নাম রাখিয়াছিলেন নিরুপমা। যদিও ইহার কারণে প্রচুর পরিমাণ ভর্ৎসনা তাঁহাকে সহ্য করিতে হইয়াছিল তথাপি তিনি বিন্দুমাত্র দমেন নাই। নিরুপমাও পিতার আদর পাইয়া ও অবশিষ্ট সকলের অনাদর কখনো গ্রাহ্য ও কখনো অগ্রাহ্য করিয়া, কখনো কালো রূপের জন্য কাঁদিয়া, কখনো বিদ্রোহ ঘোষণা করিয়া ক্রমে বিবাহযোগ্যা হইয়া উঠিলো। তবে একটি কথা সে তাহার অন্তরে স্পষ্ট বুঝিয়া লইয়াছিল যে তাহার পিতা ব্যতীত আর কেহই তাহাকে কখনো ভালোবাসিবে না এবং তাহার কোনদিনও বিবাহ হইবে না। অথবা যদি বিধাতার কোন গ্রহফেরে হইয়াও যায় তাহা হইলেও সে নিতান্ত দোজবরেই গচ্ছিত হইবে।


এমন সময়ে একদিন রমানাথের জ্যেষ্ঠভ্রাতা উমানাথের কনিষ্ঠা কন্যা মালতির বিবাহের লগ্ন আসিয়া উপস্থিত হইল। দূর দূরান্তের আত্মীয় কুটুম্বে গৃহ পরিপূর্ণ হইয়া উঠিলো। পুরুষদের হাঁকডাক, রমণীদের কলহাস্য ও চাকরবাকর দাসদাসীদের দৌড়াদৌড়িতে গৃহ গম গম করিতে লাগিলো। বিবাহ উপলক্ষ্যে এলাহাবাদ হইতে প্রথমবারের জন্য কলকাতায় আসিয়াছিল উমানাথের শ্যালিকার বড় ভাসুরের কন্যা সুরমা। বয়সে সে নিরুপমা হইতে এক কি দুই বৎসরের জ্যেষ্ঠা হইবে। তথাপি তাহার এখনো বিবাহ হয় নাই। তাহার পিতা ইংরাজি শিক্ষায় আলোকপ্রাপ্ত এবং স্ত্রী স্বাধীনতায় শুধুমাত্র বিশ্বাসী নহেন, মনের বিশ্বাস ও মুখের কথার সাজুয্য রাখিতে সুরমাকে তিনি লেখাপড়া শেখানো ছাড়াও মোটরগাড়ি চালানো, ঘোড়সওয়ারি করা, মায় গাউন পরিয়া ইংরাজদের পার্টিতে যাইয়া কিভাবে তরিবত সহকারে তাহাদের ভাষায় আচরণ করিতে হইবে তাহাও শিখাইয়াছিলেন। তাহার পর তিনি সুরমাকে বলনাচ শেখাইতে উদ্যত হইলে সুরমার মা একেবারে বাঁকিয়া বসিয়া 'আমাকে আগে কাশীতে রাখিয়া আসিও' বলিয়া ফরমান জারি করাতে সুরমার শিক্ষা আপাততঃ ওই পর্যন্তই হইয়া রহিয়াছে।


গৃহে পদার্পণ করিবার কিছুক্ষণের ভেতরেই সুরমা ও নিরুপমা এমনভাবে মিলিয়া মিশিয়া গেল যে শুধু তাহাদের কেন – সকলেরই মনে হইতে লাগিলো তাহারা যেন জন্ম-জন্মান্তরের সহোদরা। নিরুপমার জগত এতদিন কেবলমাত্র গৃহ ও খিড়কিপুকুরের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। তাহার বাইরের জগতটা তাহার কাছে ততটাই প্রসারিত ছিল যতখানি তাহার দৃষ্টি ছাতের সীমানা ছাড়াইয়া যাইতে পারে, তাহার বেশী নহে। সেই জগতের সন্ধান কেবল তাহার দৃষ্টি জানিত। বাকি ইন্দ্রিয়গুলি সেই রস হইতে বঞ্চিত ছিল। অপরপক্ষে সুরমা সেই বিশাল বহির্জগতের সমস্তকিছু তাহার সকল ইন্দ্রিয় দিয়া উপভোগ করিয়া আসিয়াছিল। আজ সে তাহার সমস্ত কিছু দিয়া নিরুপমার অপূর্ণ জগত নিমেষে ভরাইয়া তুলিলো। তাহার শিক্ষিত ও পরিশীলিত চেতনায় নিরুপমার গাত্রবর্ণ কিছুমাত্র বাধা হইয়া দাঁড়াইলো না।



সাধারনতঃ যে কোন বিবাহানুষ্ঠানেই দেখা যায় যে যাহার বিবাহ স্থির হইয়াছে সে ব্যতীত আর সকলেই আনন্দ করিতেছে। বিবাহ যাহার হইবে সে কেবল যূপকাষ্ঠে নিজের মুন্ডটি বাড়াইয়া ফ্যালফেলে চক্ষে চাহিয়া থাকে। তাহার রসনায় সমস্ত উৎকৃষ্ট খাদ্যই তখন কোন মতেই কাঁঠাল পাতার স্বাদ অতিক্রম করিয়া উর্দ্ধে উঠিতে পারে না। তবে নিয়মমাত্রেই তাহার ব্যতিক্রম থাকে। আমাদের নরেন্দ্রনাথ সেইরূপ এক ব্যাতিক্রম। নরেন্দ্রনাথ বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে যখন গৃহে তাহার বিবাহপ্রস্তাব উঠিলো তখন তাহার হৃদয়খানি নববরষার দুকূলপ্লাবি ঢেউয়ের ন্যায় ভাসিয়া গেল। বিবাহ এতদিন তাহার কাছে কেবলমাত্র একখানি পারিবারিক অনুষ্ঠানরূপেই প্রতিভাত হইতো। শিশুকাল হইতে সে অজস্র খুড়ামশায়ের বিবাহের সাক্ষী। এমনকি একাধিক বিবাহে সে স্বয়ং নিতবর সাজিয়া ও অপরপক্ষে লাল বেনারসীর পুঁটুলি-স্বরূপ নিতকণেদের নিজ পিতৃ অথবা পিতৃস্বসার স্কন্দে মাথা রাখিয়া ঘুমাইয়া পড়িতে দেখিয়াও ভাবী বধূ সম্পর্কে কখনো তাহার বিরাগ জন্মায় নাই। তখন সেই শিশুকালের যে কল্পনা তাহা যে কোনদিন সত্য হইয়া তাহাকে ঘিরিয়াও ঘনীভূত হইয়া উঠিতে পারে তা সে যেন ভাবিয়াও ভাবে নাই। আজ যখন সত্যই সেই ভাবনাখানি বাস্তবে পরিণত হইতে চলিলো তখন তাহার হৃদয়স্থিত ময়ূরটি পেখম মেলিয়া নাচিতে শুরু করিয়া দিল ও সেই অশ্রুত অপূর্ব সঙ্গীতে ভাষ্য যোগাইলেন স্বয়ং কালিদাস। ময়ূরের নৃত্যের সহিত বরষার ঘোর সম্বন্ধ রহিয়াছে। বরষার সহিত মেঘের ও মেঘের সহিত বজ্র-বিদ্যুতের। নরেন্দ্রনাথের হৃদয়ে যখন ময়ূর নাচিতেছিল তখন বিধাতা অলক্ষ্যে বজ্র-বিদ্যুতের বেনী পাকাইয়া একটি নূতন কাহিনী বুনিয়া তুলিতেছিলেন।



বিবাহের দিন উপস্থিত হইলে সকলে মালতিকে লইয়া পড়িল। আর সুরমা পড়িল নিরুপমাকে লইয়া। তাহাকে স্নান করাইয়া, নানাবিধ লেপ্য লেপন করিয়া, মাজিয়া ঘষিয়া অস্থির করিয়া তুলিল তাহাকে। অপরপক্ষে মালতির ওপরেও নানাবিধ স্ত্রী-আচারের অত্যাচার চলিতেছিল। মালতি তাহা কেবল শরীরের উপর অত্যাচার ধরিয়া লইয়া নীরবে সমস্তকিছু সহ্য করিতেছিল। আর তাহার মনোদেশে অন্য কোন ভাঙাগড়ার খেলা চলিতেছিল। সেদিকে কাহারও কোন খেয়াল ছিল না। অবশ্য এদেশে নারীর মনকে কেই বা কবে মূল্য দিয়াছে? ছাই ফেলিতে ভাঙা কুলোর মতই তাহার দশা। তাহারও যে একটি মন রয়েছে তাহা মালতি এতদিন দেখিতে পায় নাই। তাহার যৌবনের কুঁড়িটি সবেমাত্র ফুল হইয়া ফুটিবো ফুটিবো করিতেছিল, হয়তো আরো খানিকটা সময় পাইলে তাহা পূর্ণকুসুমে বিকশিত হইয়া উঠিত, কিন্তু তাহার আগেই তাহার বিবাহ স্থির হইয়া গেল। পূজার থালির পদ্মকুঁড়ির পাপড়িগুলিকে যেমন কিশোরী বালিকা তাহার আঙুলের চাপে বিকশিত করিয়া তুলিয়া দেবতার পায়ে সাজিয়ে দেয়, মালতির মা পিসি মাসি'রাও তেমনি তাহাকে একদিনের ভেতর কৈশোর হইতে যৌবনে উন্নীত করিয়া সাজাইয়া তাহার স্বামীদেবতাটির জন্য ফুটাইয়া তুলিতেছিল। সেই প্রবল চাপে তাহার মন যে কতখানি বিদ্রোহ করিতেছে সে হিসাব কাহারো কাছে ছিল না।



বিবাহবাড়িতে বরের আগমন রমণীকূলের কাছে একটি বিশেষ উত্তেজনার বিষয় বটে। বরের আগমন ঘটিলে যে প্রবল শঙ্খ ও হুলুধ্বনি ওঠে, তাহা যতটা না বরবাবাজিকে আহ্বান জানানোর জন্য, তদপেক্ষাও অনেক বেশী পঞ্চমবর্ষীয়া থেকে অশীতিপর সকল নারীকে বর দেখিতে আসিবার জন্য। এই আহ্বানে একমাত্র ব্রাত্য থাকে কণে। সে তখন আশা-আকাঙ্খার প্রবল দোলায় মানসিক সমুদ্রপীড়া লইয়া নিজের শয্যার উপর জবুথবু হইয়া বসিয়া থাকে। নরেন্দ্রনাথের ক্ষেত্রেও এই উত্তেজনার বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটিলো না। সকলে বর দেখিয়া যারপরনাই আমোদিত ও আহ্লাদিত হইয়া কলহাস্যে গৃহ মুখরিত করিয়া মালতিকে তাহার উজ্জ্বল সৌভাগ্যের বর্ণনা করিতে গিয়া দেখিল মালতির পরিবর্তে শয্যার উপর চাহার চেলিটি কেবল পড়িয়া আছে। আর একটুকরো কাগজে কাঁচা হস্তাক্ষরে লেখা রহিয়াছে, 'আমি চলিলাম। অভাগিকে খমা কোরো'! 


মালতির মন তাহার মা পিসি মাসি'রা দেখিতে পায় নাই সত্য। তবে কেহই যে দেখিতে পায় নাই তাহা তো হয় না! বিধাতার অলঙ্ঘ্য নির্দেশে মালতির মন দেখিতে পাইয়াছিল প্রতিবেশী সুবল বাঁড়ুয্যের ছেলে হারানচন্দ্র। কাঁচামিঠে আম বা মিষ্টি পেয়ারা আর উঁচু ডাল থেকে পুজোর ফুল পেড়ে দেওয়ার ভেতর দিয়ে মনের অনেকখানিই দেওয়া নেওয়া হইয়া গিয়াছিল। সুযোগের অপেক্ষায় তক্কে তক্কে থাকিয়া আজ বরের আগমনের সময়টিতে কণেকে একা পাইয়া হারাণচন্দ্র আর দেরী করেনি। তাহার আশ্বাস পাইয়া কূলের মুখে কলঙ্ক লেপিয়া মালতিও তাহার অনুগামিনী হইয়াছে। এক্ষণে তাহাদের সন্ধানে লোক পাঠানো হইবে না পুলিশে এত্তেলা দেওয়া হইবে তাহার চাইতেও বৃহত্তর সমস্যা হইয়া দাঁড়াইলো পাত্রপক্ষকে কী বলা হইবে? অন্ধকারে অজানা পথে পথিক যেমন পদে পদে ঠোকর খাইয়া মরে, মালতির বাপ কাকাদেরও সেই দশা উপস্থিত হইল। অপমান ও কলঙ্ক এই উভয় জাঁতিকলে পড়িয়া তাঁহারা কি বা করিবেন, কোনদিকটাই বা সামলাইবেন ভাবিয়া তাঁহাদের প্রাণ উড়িয়া যাইতে লাগিলো। এমন সময় নিরুপমাকে লইয়া সুরমা আসিয়া দাঁড়াইলো। মেঘ সরাইয়া আকাশে যেন পূর্ণশশীর উদয় হইলো। সুরমা আজ সারাদিন ধরিয়া নিজেও সাজিয়াছে, নিরুপমাকেও সাজাইয়াছে। তাহার অধীত সমস্ত বিদ্যা, অবলেপ্য, চূর্ণ প্রভৃতির প্রয়োগে নিরুপমাকে তাহার নামের যোগ্য করিয়া তুলিয়াছে। সকলের চোখে যেন ধাঁধা লাগিয়া যায়। এই তাহাদের নিরু! কালো মেয়েরও যে এত আলো হয় কই তাহারা আগে কখনো অনুভব করে নাই তো! রমানাথ আর দেরী করেন না। তিনি উমানাথ এবং নরেন্দ্রনাথের বাবা ও জ্যাঠাকে লইয়া একটি ঘরে ঢুকিয়া আগল তুলিয়া দিলেন। নরেন্দ্রনাথের বাবা রমানাথেরই বাল্যবন্ধু। বস্তুতঃ তাহারই উদ্যোগে এই বিবাহের ব্যবস্থা হইয়াছে। তাই রমানাথ যখন হাতজোড় করে জানালেন যে কণে সহসাই মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং নরেন একপ্রকার তাঁহার পুত্রসম, এই অবস্থায় কিভাবেই বা তার বিবাহ দেওয়া যায়, তারচেয়ে নরেন যদি তাঁহার কন্যার পাণিগ্রহণ করে তাহলে সবদিক বাঁচে, তখন নিরুপমাকে সেই অপরূপা সাজে দেখিয়া এবং রমানাথ বরপণের মূল্য নিজে থেকেই আরো দশহাজার টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় বরপক্ষও কণের পলায়নের যে কানাঘুষা শুনিয়াছিল তাহা ভুলিয়া গেল। তারপর নির্দিষ্ট লগ্নে নরেন্দ্রনাথ ও নিরুপমার বিবাহ সম্পন্ন হইয়া গেল।



বিবাহের দিন সকাল হইতেই নিরুপমা সুরমার আদরের অত্যাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করিয়াছিল। সুরমা যখন তাহাকে এই নতুন সাজে সাজাইয়া তুলিলো, নিরুপমা যেন আপন নাভির কস্তুরির গন্ধে মাতোয়ারা হইয়া গেল। সে কেবলই আয়নায় নিজেকে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখিতে লাগিলো ও পরম বিস্ময়ের সহিত সুরমাকে জিজ্ঞাসা করিতে থাকিলো, 'এ কি আমি? এ-ই কি আমি?' তাহার পর কখন মালতি কাহার সহিত পলাইয়া গেল, কখনই বা তাহার বিবাহ হইয়া গেল সে যেন টেরই পাইলো না। নিরুপমা কখনই তাহার বাপের কাছে ছাড়া আদর পায় নাই। তাহার পর সে প্রথম আদর পেলো সুরমার কাছে। বাপের আদর তার কাছে অতি স্বাভাবিক ছিল। সুরমার আদর তার শিরে মুকুটের মত বিরাজ করিতে লাগিলো। আর আজ যখন বাড়িশুদ্ধ সকলে উন্মুক্ত কন্ঠে তাহার প্রশংসা করিতে লাগিলো তখন সে টের পাইলো যে তাহার মনের ভেতরে আরো একটা মন জন্ম লইয়াছে। সেই মনের জন্মদাত্রী সুরমা। সেই মন সুরমার মনের সমস্ত আলোটুকু লইয়া জ্বল জ্বল করিতেছে। তাহার মনে হইলো সে যেন আপনাকে আপনি অনুভব করিতে পারিতেছে। যেন কোনো একটা পূর্ণিমাতিথিতে কোনো-একটা সমুদ্র হইতে একটা জোয়ারের স্রোত আসিয়া তাহার অন্তরাত্মাকে এক নূতন অনির্বচনীয় চেতনাশক্তিতে পরিপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছে। সে যেন আপনাকে আপনি দেখিতেছে, ভাবিতেছে, প্রশ্ন করিতেছে, এবং বুঝিতে পারিতেছে। নিরুপমা বুঝিতে পারিলো কে হৃদয়ের অন্তঃস্থল হইতে প্রশংসা করিতেছে আর কে তাহার এই কালো রূপ লইয়া এমন পাত্রে বিবাহ হইয়া গেল সেই অসূয়া হইতে! বিদায়ের সময় তাহার চোখে জল আসিল বটে, কিন্তু সে কাঁদিল না। বাবাকে প্রণাম করিয়া আর সুরমাকে একবার প্রাণপণে জড়াইয়া ধরিয়া গাড়িতে স্বামীর পাশে উঠিয়া বসিল।



বৌভাতের পরদিন নিরুপমা স্নান সারিয়া আসিতেই নরেন্দ্র কেমন গম্ভীর হইয়া গেল। বিবাহ বাসরে যাহাকে অলোকসামান্যা স্বর্গের পরী প্রতিভাত হইয়াছে, ফুলশয্যার ফুল শয্যায় যাহাকে সামান্য স্পর্শ মাত্র করিয়া তাহার সুখের রাত্রি প্রভাত হইয়াছে সে যে এতটাই সাধারণ দেখিতে অকিঞ্চিৎকর এক সামান্যা নারী তাহা হৃদয়ঙ্গম করিয়া নরেন্দ্র স্তব্ধ হইয়া গেল। সে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলে পরে নিরুপমা তাহার স্বামীর মনের কথাটি ধরিতে পারিয়া মনে মনে হাসিল সামান্য। তারপর ঘর গোছাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়িল। যদিও বা কেহ কেহ আড়ালে বলিলো যে নতুন বৌয়ের বাবা নাকি রং করিয়া অচল টাকা চালাইয়া দিয়াছে, তথাপি নিরুপমার এই অতি সাধারণ রূপখানি কিছুদিনের ভিতরে সকলেরই সহিয়া আসিল। শুধু নরেন্দ্রনাথের মায়ের মনের মেঘ কাটিল না। সংসারে পুরুষমানুষ টাকাকড়ি ও সম্পত্তি লইয়াই মজিয়া থাকে। নারীর সে বালাই নাই। তাহার মজিবার উপায় কেবল অপর নারীপুরুষের রূপ ও চরিত্র। নরেন্দ্রনাথের পিতা তাহার বধূমাতার মূল্যস্বরূপ অতিরিক্ত দশহাজার পাইয়াছেন। তাহার আর বলিবার কিছু নাই। কিন্তু বধূমাতার গাত্রবর্ণে নরেন্দ্রনাথের মায়ের হিসাব এলোমেলো হইয়া গেল। পুত্রবধূ লইয়া বড়াই করিবার কোন উপায় রহিলো না। পণের অঙ্কের কারণে নিরুপমার উপর কোন অত্যাচার হইলো না ঠিকই তবে সে ভালোবাসাও পাইলো না। তাহাতে অবশ্য নিরুপমার কিছুই ইতর বিশেষ হইলো না। যে নিজ পিতৃগৃহেই অনাদরে বড় হইয়াছে তাহাকে শ্বশুরবাড়ির অনাদর আর কতটুকুই বা পীড়া দেবে! সে নিজের মনের মত একটুখানি ছোট্ট জগত তৈরি করিয়া, সংসারের সমস্ত দায়িত্ব সামলাইয়া, স্বামীকে আড়াল হইতে ভালোবাসিয়া ছায়ার মত বাঁচিয়া রহিলো। লোকে তাহাকে মাড়াইয়া চলিয়া গেল বটে, পিষ্ট করিতে পারিলো না।



বিবাহ করিয়াও নরেন্দ্র বিবাহের সুখ পাইলো না। সেই যে ফুলশয্যার পরের দিন সকালে সে মুখখানি গম্ভীর করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গিয়াছিল, তাহার পর হইতে সে তাহার বধূকে আর কখনো সামনে পায় নাই। প্রথম প্রথম কয়েকদিন তাহার সেভাবে কিছু মনে হয় নাই। বরং মনে হইয়াছে ভালোই হইল! ও কালো মুখ দেখার চাইতে না দেখাই ভালো। মনে মনে শ্বশুরবাড়ির ওপর ভারি চটিয়াছিল তাহাকে এইভাবে ঠকাইবার জন্য। তাহার পর ধীরে ধীরে তাহার রাগ যখন পড়িল তখন অকস্মাৎ একদিন সে স্নান সমাপনান্তে ঘরে আসিয়া দেখিলো তাহার পোষাক প্রস্তুত নাই। সে চিৎকার করিয়া কিছু বলিতে যাইবার আগেই দমকা হাওয়ার মত একটি অবগুন্ঠনবতী নারী আসিয়া বিছানার ওপর তাহার পিরান ও কোঁচানো ধূতিখানি ফেলিয়া দিয়া আবার দমকা হাওয়ার মতই প্রস্থান করিলো। কেবল যাইবার আগে সেই অবগুন্ঠনের অন্তরাল হইতে ডাগর দুখানি চক্ষুর সহিত তাহার চক্ষুদুটির ক্ষণিকের জন্য মিলন সাধিত হইলো।


ও দুটি চোখ সে বিবাহের রাত্রেও দেখিয়াছে। কিন্তু সেদিনের সেই দেখার ভিতরে চমক ছিল, মোহ ছিল, স্বপ্ন ছিল, কায়াকে অতিক্রম করিয়া মায়ার আকর্ষণ অনেক বেশী প্রবল ছিল। সেদিন তাহার দৃষ্টিতে অনুরাগ ছিল, তাহাকে ঘিরিয়া রজনীগন্ধার সুবাস ছিল, বাতাসে সন্ধ্যার তমোজালভেদি সানাইয়ের মিলনের রাগিনীর আহ্বান ছিল। আজিকার এই দেখার ভিতরে নিছক দৃষ্টিপাতের বাস্তবতা ভিন্ন আর কিছুই ছিল না। তবু যেন অনেককিছুই ছিল। নরেন্দ্রনাথ কিয়ৎকাল নিশ্চুপ থাকিয়া তাহার ঘরখানির পানে তাকাইলো। এবং অনুধাবন করিলো যে বিগত কিছুদিনের ভেতরেই তাহার বাঁচিয়া থাকিবার প্রায় সমস্ত অভ্যাসই কি এক জাদুবলে পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে তাহা সে ইতিপূর্বে খেয়াল করে নাই। পূর্বে তাহার ঘরখানি একপ্রকার এলোমেলোই হইয়া থাকিত। বিছানার চাদরখানি কোঁচকানো, বালিসের ওয়াড়ে তেলের দাগ, টেবিলের ওপর বইখাতাপত্র শিয়ালদহ স্টেশনের সব্জিবাজারের কথা মনে করাইয়া দিত, আলনায় জামাকাপড়েরাও ঝুলিয়া থাকিত বানরীর সন্তানের ন্যায়। আজ স্নান করিয়া আসিয়া সে দেখিলো তাহার ঘরখানি জুড়িয়া কে যেন স্নেহহস্ত বুলাইয়া গিয়াছে। ঘরের কোথাও এতটুকু ধূলা নাই। টেবিল পরিচ্ছন্ন। বিছানার চাদর পরিপাটি করিয়া পাতা। বালিশের ওয়াড়ের কোণায় সূঁচ-সুতোর কারুকাজ। দরজার গোড়ায় নতুন পাপোশ। পাপোশের পাশে তাহার জুতো দুপাটি কালি করা। তাহার সমস্ত পোষাক সুন্দর করিয়া ভাঁজে ভাঁজে মিলাইয়া আলনায় ঝোলানো। ঘরের সমস্ত আসবাব আর জানালার পর্দা জুড়িয়া যেন সেই ডাগর চক্ষুদুটি বিরাজ করিতেছে। এতদিন এসব তাহার চোখে পড়েনি কেন? সারাটি দিন জুড়িয়া নরেন্দ্রনাথের মনে সেই ডাগর চক্ষুদুটি খেলিয়া বেড়াইতে লাগিল।


সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরিবার সময় ফুলওয়ালাকে বেলফুলের মালা ফিরি করিতে দেখিয়া নরেন্দ্রনাথ একজোড়া মালা কিনিয়া লইলো। তারপর কি মনে করিয়া মণিহারি দোকানে যাইয়া ছোট একশিশি বিলাতি এসেন্স কিনিলো। তারপর টিপ, চুলের ফিতা, কাঁটা প্রভৃতি ক্রয় করিয়া শেষে একখানি শাড়িও কিনিয়া ফেলিলো। তারপর সেই সমস্ত আবেগতাড়িত বস্তুগুলোকে অপরের চক্ষু হইতে লুকানোর জন্য একখানি ব্যাগও খরিদ করিলো। একটি ভুল দিনের পর দিন জমিতে জমিতে যখন অপরাধের পর্যায়ে গিয়া দাঁড়ায় তখন তাহার বোঝা ওজনে বেশ ভারিই হইয়া ওঠে। এ অপরাধের নালিশও হয়না, আর তার দায়রা সোপর্দও হয়না। নরেন্দ্রনাথ নিজ অপরাধের ওজন কমাইবার জন্য বিপণী হইতে কেনা দ্রব্যের ওজন বাড়াইয়া তুলিলো। তা হউক, শাক দিয়া মৎস ঢাকিবার মত সাজের জিনিষ দিয়া রমণীর কাছে নিজের ভুল পুরুষমানুষ যুগে যুগে ঢাকিয়া আসিয়াছে। ওতে তেমন দোষ হয় না। গৃহে প্রবেশ করিবার সময় নরেন্দ্রনাথ ভারি সাবধানে সকলের চক্ষু এড়াইয়া নিজের ঘরে ঢুকিয়া তবেই স্বস্তি পাইলো।


অন্যান্য দিন দাসী খাবার দাবার আনিলেও দরোজার বাহিরে চুড়ির ঠুংঠাং আওয়াজ নরেন্দ্রনাথ কখনো কখনো শুনিয়াছে। আজ দাসী খাবার লইয়া আসিলে সে খাবার প্রত্যাখ্যান করিয়া ওই চুড়ির মালকিনকে ভিতরে পাঠাইয়া দিতে কহিবে। তারপর ছোট একটি উপহার দিয়া সন্ধি প্রস্তাব দেবে। অবশিষ্ট উপহারগুলি রাতের জন্য তোলা থাকিবে। নরেন্দ্রনাথ কোন উপহারটি আগে তুলিয়া দেবে এবং কিভাবে কথা শুরু করিবে সেই ভাবনায় যখন মশগুল তখন আচমকা পদশব্দে ফিরিয়া দেখিলো খাবার লইয়া মা আসিয়াছেন। নরেন্দ্রনাথ নিজ মনোভাব গোপন করিয়া রহিলো। তাহার মা তাহাকে খাওয়াইতে খাওয়াইতে, হাতপাখা দিয়া হাওয়া করিতে করিতে ইনাইয়া বিনাইয়া কত কথা তুলিয়া কত প্রসঙ্গের অবতারণা করিয়া চলিলেন। নরেন্দ্রনাথ খাইতে খাইতে ক্রমশঃ শঙ্কিত হইয়া উঠিতে লাগিলো। শেষে বাধ্য হইয়া মা'কে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে পারিলো যে তাহার বৌ'কে তাহার বাপের বাড়ি হইতে লোক আসিয়া লইয়া গিয়াছে। বৌয়ের সেই যে বোন কুলের মাথা খাইয়া পলাইয়াছিল, সেই পোড়ারমুখীকে পেয়াদায় পাকড়াইয়া আনিয়াছে। এখন নাকি তাহারা সমাজে নাকখৎ দিয়া সেই জামাইকেই নতুন করে বরণ করিবে। তা যাক – বৌ গিয়াছে ভালোই হয়েছে। তাকে আর তিনি ফিরাইয়া আনিবেন না। অমন পরিবারের মেয়ের তাঁদের বাড়ির বৌ হবার কোন যোগ্যতাই নেই। তিনি নরেনের জন্য নতুন বৌ আনিবেন। দেখিয়াই রাখিয়াছেন, তাঁহারই সইয়ের সইয়ের বোনের মেয়ে। গায়ের রঙখানি পুরো দুধে আলতা। সবই ঠিক আছে। নরেনের বাবারও বিশেষ আপত্তি নাকি নাই কারণ ওই কালো বৌকে ত্যাগ দিবার জন্য যতখানি ব্যয় হইবে তাহার অনেক বেশীই এই বিয়েতে পূরণ হইয়া যাইবে। কালকেই ঠাকুরমশাই আসিবেন বিবাহের দিন স্থির করিতে। নরেনের খাওয়া হইয়া গেলে তাহার মাতা থালা তুলিয়া লইয়া যাইতে যাইতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিলেন। ছেলেকে কিভাবে কথাক'টা বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। ছেলে নিজে থেকে জিজ্ঞেস করিয়া ভালোই করিয়াছে। ছেলে এমনিতেও কালো বৌ নিয়ে সুখে ছিল না। এখন নতুন বৌ এলে দুটো নাতি নাতনির মুখ দেখে তবেই শান্তি।


খাওয়া হইয়া গেলেও হাত না ধুইয়া নরেন্দ্রনাথ নতমুখে একইভাবে বসিয়া রহিল। দরোজার আড়ালে রাখা ব্যাগটি থেকে গুপ্ত বেলফুলের গন্ধ ক্রমশঃ সারা ঘরে পরিব্যাপ্ত হইতে হইতে তাহার বুকের ওপর চাপিয়া বসিতে লাগিল।



মালতির পূর্বকৃত কলঙ্ক ঢাকিবার নিমিত্ত অনেক অর্থ খরচ করিয়া সুবলচন্দ্রকে বাসা বদল করাইয়া সুদূর ব্যারাকপুরে পাঠানো হইলো এবং বিবাহকে উপলক্ষ্য করিয়া দেশী ব্যান্ডের সহিত গোরাদের ব্যান্ড আনাইয়া হইচইটি বেশ বড় রকমেই জমাইয়া তোলা হইলো। কিন্তু ফুলের মালা দিয়া সাজাইলেই কি আর আঁশচুবড়ির গন্ধ ঢাকা পড়ে? আত্মীয় কুটুম্বের ফিস ফাস ও কানাকানিতে মালতির কলঙ্কের কুৎসা গৃহময় ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। একা রামে রক্ষা নাই সুগ্রীব দোসর। বিবাহের দিন সকালেই রমানাথের বাল্যবন্ধু আমাদের নরেন্দ্রনাথের পিতা গোদের উপর বিস্ফোটকের ন্যায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। শ্বশুরমশাই আসিয়াছেন শুনিয়া নিরুপমা ঘোমটা টানিয়া রেকাবিতে মিষ্ঠান্ন ও জল লইয়া ঘরে ঢুকিতে গিয়া শুনিল তাহার শ্বশুরমশাই ছদ্ম বিড়ম্বনার সহিত নরেন্দ্রনাথের অপর বিবাহের কথা কহিতেছেন। এবং পণ বাবদ  যাহা লইয়াছিলেন, বিবাহের খরচ খরচা বাদ দিয়ে তাহার অবশিষ্ট অর্থ তিনি ফেরত দিবার জন্য পুঁটুলি বাঁধিয়া লইয়া আসিয়াছেন। নাট্যশাস্ত্রের হিসাব অনুযায়ী এমন সময়ে নিরুপমার হস্ত হইতে মিষ্টান্নের রেকাবি ও জলের গেলাসটি পড়িয়া যাইবার কথা। এবং তাহার হয় জ্ঞান হারাইয়া ওখানেই পড়িয়া যাইবার কথা অথবা ছুটিয়া আসিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে শ্বশুরমশাইয়ের পা জড়াইয়া ধরিবার কথা। কিন্তু নিরুপমার ওইসব কিছুই হইলো না। সে কয়েক মুহুর্তের জন্য স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। তারপর শান্ত পায়ে আসিয়া শ্বশুরমশাইয়ের সামনে মিষ্টান্নের রেকাবি ও জলের গেলাস রাখিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিল। তারপর রমানাথকে প্রণাম করিয়া মৃদুস্বরে কহিলো, 'এ টাকা তুমি নিও না বাবা।' তাহার পর আবার শান্ত পায়েই ঘর হইতে বেরিয়ে গেল নিরুপমা। বলাই বাহুল্য নরেন্দ্রনাথের পিতা তাহার অনেক আগেই টাকার পুঁটুলিটি তাঁহার ব্যাগে ঢুকাইয়া লইয়াছেন।


খারাপ খবর বাতাসের আগে ছুটিতে থাকে। নরেন্দ্রনাথের পিতা বাটি হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবার পূর্বেই নিরুপমার বিবাহ ভাঙিয়া যাইবার খবর রাষ্ট্র হইয়া গেল। তাহার মা ও জ্যেঠাইমা কপালে করাঘাত করিয়া পড়িলেন। বাকি আত্মীয়স্বজন প্রচন্ড শোক প্রকাশ করিলেও অন্তরে ভারি আরাম পেলে।


নিরুপমা পিতার ঘরে শান্ত থাকিলেও নিজের ঘরে আসিয়া তাহার সহ্যের বাঁধ টুটিয়া গেল। সে আপন বক্ষ চাপিয়া নীরবে অশ্রু বিসর্জন করিতে লাগিলো। তাহার পর কাঁদিতে কাঁদিতে কখন সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে তাহা আর তাহার খেয়াল নাই। ঘুমের ভিতরে সে স্বপ্ন দেখিলো তাহার সুরমাদি আসিয়া কহিতেছে - ভয় নাই, ওরে ভয় নাই! ঘুম ভাঙিয়া ধড়মড় করিয়া শয্যার উপর উঠিয়া নিরুপমা দেখিলো কখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে, তাহাকে কেউ ডাকে নাই। ঘরে কেউ আলো জ্বালায় নাই। তবু বাহির হইতে ডায়নামোর বিজলী বাতির আলো আসিয়া ঘরেতে এক মায়াবী আলো আঁধারির সৃষ্টি করিয়াছে। বাহিরে দেশী ব্যান্ডের সহিত গোরাদের ব্যান্ডের তুমূল প্রতিযোগিতা চলিতেছে। নিরুপমা অশ্রু মুছিয়া পায়ে পায়ে জানালার কাছে আগাইয়া গিয়া পর্দা সামান্য সরাইয়া নিচের কলকোলাহল দেখিতে লাগিল। এমন সময়ে  তাহার ঘরের দরোজায় মৃদু করাঘাত হইলো। নিরুপমা ধীর পায়ে গিয়ে দরোজার ছিটকিনি খুলিতেই কে যেন সবলে পাল্লা ঠেলিয়া ঘরে আসিয়া দরোজা আবার বন্ধ করিয়া দিলো। নিরুপমা মুহুর্তের জন্য চমকিয়া উঠিল। সে 'কে!' বলিয়া চিৎকার করিতে যাইবার পূর্বেই সেই মানুষটি ফিরিয়া তাকাইল। নিরুপমা দেখিল তাহার স্বামী! এই ক'দিনেই এ কি চেহারা হইয়াছে মানুষটার! চোখের কোল বসিয়া গিয়াছে! গালে না কামানো দাড়ি! নিরুপমা কোনমতে অস্ফূটে স্খলিতস্বরে বলিতে পারিলো, 'তুমি!' নরেন্দ্রনাথ আগাইয়া আসিয়া নিরুপমার বাহুদুটি ধরিয়া তাহাকে নিজ বক্ষের কাছে টানিয়া লইয়া তাহার ডাগর দুটি চক্ষের দিকে নির্নিমেষ নয়নে চাহিয়া রহিল। এমন সময়ে ব্যান্ডের বাদ্য ছাপাইয়া শঙ্খ ও হুলুরব ধ্বনিত হইয়া উঠিল। বর আসিয়াছে! নরেন্দ্রনাথ নিরুপমার ওষ্ঠ চুম্বন করিয়া কহিলো, 'পালাইবে আমার সঙ্গে?'





'এবং খোঁজ', 

শারদ সংখ্যা (আশ্বিন)

অঙ্কনশিল্পী: তমোজিৎ ভট্টাচার্য্য, শুভদীপ মন্ডল