কবিতা
ভিক্ষুক গাছ
তৈ মু র খা ন
দু একটি ভিক্ষুক গাছ পথপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে
যদিও নিরিবিলি পায়
উলঙ্গ আলোরা এসে চারিপাশে নাচে
পাখি নেই, পাখি নেই
মড়কের শকুনেরা উড়ে যায় দূরের আকাশে
চাঁদ চলে যায় সারারাত ভেসে ভেসে
দু এক ছটাক জ্যোৎস্না মাথার উপর ফেলে দেয়
বর্ষা এলেই গাছ গর্ভবতী হবে
গাছের ভেতরে কথা জমে আছে
অনেক অনেক কথা
আজ শুধু ভিক্ষুক হয়ে রাত জাগে
উপত্যকা
সে মি মা হা কি ম
কবিতা আমার সন্তান নয়-
আত্মাকে চিবিয়ে খায় রোজ!
আমার ক্লেদ শুষে
অনায়াসে বাড়িয়ে দেয় একাকীত্বের ক্ষত,
হাড় থেকে নিবিড় একাগ্ৰতায়
ছাড়িয়ে নেয় খাওয়া-পরার সুখ আছে যত,
রক্ত দিয়ে ল্যাপে পোঁছে জমাট আঁধার-
যা কখনও ছিল না-সামনে পিছনে আমার,
আলোর উৎসমুখে ফেলে আসে ছাই-
যদি আমি হাসতে-হাসতে কাঁদতে ভুলে যাই,
কি নিপুন চাতুর্যে আমার আবদারী সুখে
ঘেঁটে দেয় ভুল বোঝার পূতিগন্ধময়তা !
তারপর,
বিড়ালী আদরে গায়ে গায় ঘষে
জানান দেয় ভালোবাসার মানে স্বার্থহীনতা....
রঙ-তুলি নিয়ে জন্মাইনি আমি,
শব্দের জোড়াতালি-
কথার এজমাইলি ঘাটে।
আমার যে কথারা-
পায়নি শরীর চটা ওঠা বাস্তবতায়,
তাকে একদিন এঁকে দেবো
ভালোবাসার শরীরী ক্যানভাসে .......
বিচূর্ণ স্তম্ভ সমূহ
গো লা ম র সু ল
মাটির রক্তমাখা বুক
বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে একটা সোনার গরুর গাড়ির মতো
সমাধিস্থ পতঙ্গ
চর্যাপদের ভাঙা ডিঙি
আর পোড়ো একটি ভিতের ওপর আকাশ
গতকাল রাতে চাঁদের নিচে তোমার মৃত্যু
আমারা নিয়ে এসেছি একটি উদ্ভিদের গোরস্থান
সকাল থেকে আকাশে উড়ছে আগামী প্রজন্মের ঈগল
ডানায় বাঁধা হাওয়ার একটা কোণ
এখন বিকেলবেলা
মানুষের দ্বীপ
আমি ছুরি নিয়ে ক্ষয় করতে বসেছি লবণের সিঁড়ি
জান্নাতের সূর্য ডুবছে
বিচূর্ণ স্তম্ভ সূমহ
রাত্রির কাঁদা
আর খুব নিচেয় এক ফোঁটা অশ্রু
পৃথিবী থেকে পরিত্যক্ত
ভাসছে
অনভ্যাসের কবিতা
অ নু প ঘো ষা ল
বৃষ্টিতে সবটুকু ধুয়ে যাওয়ার কথা নয়।
দুপুর ভিজিয়ে রাখা
ছোটকা'র গোয়ান গ্রামোফোন,
জাম রঙা মিঠুদের বাড়ি,চলন্তিকা পাঠাগার,
জানালা দিয়ে অবকাশ দেখে ফেলা মেয়ে,
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা শুধু ভাত...
ছাঁদ জুড়ে এক পশলা মগ্ন উড়ান।
আঁকশিতে বহুকাল বাঁধা আছে
সেসব মুঠোভর্তি চাঁদ...
উচ্চাকাঙ্ক্ষী পাহাড়পুরের মোড়।
জারুলের পিঠে চরে বহুবার হেঁটে গেছি
মরে যাওয়া তারাদের কাছে।
একই পথে,টিমটিমে প্রখর সিঁড়িতে!
উজাড় করে দিয়েছি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেঘ,
হেলে থাকা শীতের পোশাক আর
অপরাহ্নের ভাগ।
অপার্থিব নড়াচড়ায় বয়স বাড়িয়ে রেখেছি!
রেখেছি,আরও কিছু জলভর্তি পাখি।
ভাগশেষ টুকে রাখা ছিল আমিষ অরণ্যে।
বাদুড়ঝোলা শনিবার,
শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনের মতো।
আমার আঙুলে তখন শুয়ে থাকা জল।
ফেলে রাখা আয়ু। ওগড়ানো দেহজ বিশ্বাস।
অথচ আকাশ ছিল, শিশিরও ছড়ানো ছিল,
রাশিফলে ছিল কিছু লাটাই-ঘুড়ির যোগ।
তবু,
শূন্যতার কাঠপেনসিলটা কিছুতেই
হাতে নিয়ে দেখাই হলো না কখনও।
জন্ম একটা তারিখ
র বি ন ব ণি ক
হতে পারে জন্ম একটা তারিখ
হতে পারে আলো এক নির্ভুল মিথ্যে
অথবা হতে পারে জানালা এক অনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভাববেন না, ভাবনা একপ্রকার অতিপরিচিত দাস
ঘোড়া ছুটে এসে বলে দেবে আপনার অব্যবহৃত মিনিট
ভাববেন না, একদম ভাববেন না
নির্ধারিত দিনের আগে আমরা কেটে নিয়ে যাব দেহের ফসল
হতে পারে আপনি আমারই এক মৃত সৈনিক–দল
সেদিন ও আজ
সৌ ম্য ম য় পা ত্র
এইখানে একদিন তোমার প্রেমের মতো মন
এইখানে আজ কবিতার স্বাদ শুধু তেতো ;
তোমাকে ছোঁয়ার কথা গোপন,
এইখানে একদিন ভালোবাসি বলে দেওয়া যেত।
সব প্রেম চুপ হয়ে বসে আছে , ধীরে
লক্ষ বছরের পথ মুছে যায় এ অন্ধকারে
এই নোনাজল,ঢেউ,ছুরির ধার হয়ে পথে দূরত্ব নিয়ে,
জানালার ছায়া নিয়ে , আড়াল রেখেছে চোখ দূরে
অজানা দ্বীপের মতো শুয়ে, নাবিকের দুই চোখে চেয়ে
নতুন লেখার মতো যতবার খুঁজে পাই , তারও বেশি হারিয়েছি
কথা হয় রাতে রাতে--চোখ,মোবাইলের আলো নিভে গেলে ঘুমে
প্রেমিকের স্বপ্নের মতো রাত্রের নাভি থেকে বেয়ে
একদিন এই হাত, দুটো পরিচিত ঠোঁট ; বনানী দে!
একদিন তার চোখ মৃত জোনাকির আলোর মতো স্থির
ব্যর্থ নির্বাণীর মাৎসর্য আর মৃতদের শোক উঠে আসে
শুধু নিঃশ্বাস , এই মাটি ঘাস আর প্রেম নেই যার
বাকি মানুষের মন, স্থবির
বাকি সব কথা , লালচোখ , প্রেমের ওম মেখে
দাঙ্গার এ আগুন নেমে আসে, ভেজা ঠোঁটে
আজও তাকে দেখি আমি চুপ, এই পরিযায়ী সঙ্গমের রাতে ।
গুচ্ছ কবিতা
শ্যা ম শ্রী রা য় ক র্ম কা র
সলিলকি
(১)
সুন্দর! তোমাকে দেখে সব প্রতিরোধ খসে পড়ে
হৃদয়ে ছড়িয়ে যায় অস্ত্রের উপদলগুলি
(২)
ছায়ার শত্রু নেই ভেবে
ছায়াটির আড়ে বসি, ছায়াসংশ্লেষে
হিমশৈলের মতো ভারী হই আরও
আচমকা কাঁধের ওপরে
বাজপাখির পায়ের মতো রোদ পড়ে
(৩)
পায়ে লেগেছিল কিছু পাপ
ধোওয়া হয়নি বলেই
শিকড়টি নেমে গেছে ঘরের গভীরে
আপাতত গাছ হয়ে আছি
শুধু সময়ের হাত নড়ে
অ নি মে ষ গু প্ত
ছায়া
(১)
সে এক ছায়া, শরীরময়তায়
তার সব আঠা ধুয়ে যেত
মণিপুর স্বাধিষ্ঠান
বেজে উঠত সেতারের মতো
(২)
কেমন ছিল মৃত্যু-স্বাদ !
ফেরার পরের স্তব্ধতা এখনো
ঘিরে আছে অনন্ত বিষাদ
গন্তব্যে চিহ্ন দিলে
রাস্তার দুপাশে বিভ্রান্তি—
একদিকে নোনাধরা পুরনো দেওয়াল
অন্যটায় পতনের রীতি
(৩)
বিস্তৃত হতে চেয়েছি
ধুলো থেকে চিন্ময় আকাশে...
ছায়াশিল্পী আদলটুকু আঁকতে পারেনি
(৪)
গন্ধ মেখে বসেছি ঘাটে
ঝুলি থেকে বেড়ালের মতো
ঝাঁপ দিচ্ছে পদ্মবন
বাসনার কাঁটা
শ্যা ম ল র ক্ষি ত
বোধ
কাল জিজ্ঞেস করেছিলাম
কেমন আছেন?
ভালো৷
আজ জিজ্ঞেস করছি
কেমন আছেন?
আপনি নিরুত্তর৷
তারপর
তারপর সকাল এল
তারপর সন্ধ্যা এল
তারপর রাত্রি এল
তারপর
একটি মাটির পৃথিবী৷
উত্তর ভাবনা
আকাশে কয়টি তারা?
প্রশ্ন করে আদিম নাগরিক
শুভ উত্তর দেয়
অসংখ্য৷
'এবং খোঁজ',
শারদ সংখ্যা (আশ্বিন)
অঙ্কনশিল্পী: তমোজিৎ ভট্টাচার্য্য, শুভদীপ মন্ডল