মুক্তগদ্য 





অঙ্কন: শুভ

অভিসার

অ দি তি  ঘো ষ  রা য়

আকস্মিক তোমার আসা ছিল আমার
এই অগোছালো জীবনে। যেনো একটা শুকনো চাদর উন্নীত হয়ে বৃষ্টিরাতের অনুপ্রবেশ। আমার আমিটাকে খুঁড়ে বের করে এনেছিল এক নিমেষে, ঝোড়ো হাওয়ার প্রতিকুলতা যেভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল আত্মমর্যাদার ভীত; এ জীবন ধন্য। তুমি এসেছিলে ঝড়ের মতো উদ্ভ্রান্ত বেশে, বেশ তো ছিল তবে সেই সেদিন। একক মাঝি পাড়ে ভিড়িয়েছিল ডিঙ্গা, আর আমি একলাটি ওই মিঠে হাওয়ার পথে; কোনো এক আলতো সুরে ভিজিয়েছিলাম কান। ছিল বটে নিজেকে ঘিরে কঠিন কীসব ঘৃণা। তবুও তোমার আসা - সে তো আমার একযুগ ঘৃণার অবসান। আর তোমার দুই পায়ের শব্দ এক অনন্ত শিহরণ। আমি শুনতে চেয়েছিলাম তোমার পায়ের আওয়াজ। ঘুম ভাঙ্গা চোখে উঠে বসে কান পেতে রেখেছিলাম এক অন্ধ গলির দিকে। বিছানাপত্র দুমড়ে ছিল, বালিশের সাথেও আমার কড়ে আঙ্গুল। আমি কান পেতেছিলাম শুধু সেদিকে, এক নিঃসঙ্গ মোহনা কানে নিয়ে। হঠাৎ বুঝি, কিছু আওয়াজ শুনেছিলাম মেঘের মতো। ভেবেছিলাম, এ মেঘ তো তোমার আগমন নয়, তোমার যে ছিল সে তো বড়োই ধূসররঙা, এক আলো - আঁধারী মায়াবী ছবি। তারই মাঝে তুমি হয়তো একঘ্রাণ সবুজ মাঠ। নাহ্! সেই আওয়াজে তুমিই ছিলে। এসেছিলে ওই কিউমুলোনিম্বাস মেঘের মতো স্যাঁতস্যাঁতে ধূসরের দমবন্ধ ক্লস্ট্রোফোবিয়ায়, আর আছড়ে পড়েছিলে আমার শরীরে। এক আকাশভাঙা বৃষ্টি হয়ে। ঘুম এসেছিল সেই রাতে,স্বপ্নও দেখেছিলাম - বহুদিন পর, বহুদিন পর। দেখেছিলাম তোমায় জংলা পায়ে মেঠো পথ ধরে এগোতে, এক মেটে শাড়িতে অর্ধসিক্তা তুমি হেঁটে চলেছিলে একলা। আমার চোখে চোখ রেখেছিল তোমার অর্ধনগ্ন পিঠের এক আবছা অহংকারী তিল। পিছু নিয়েছিলাম সেই পথে, তোমার আড়ালে। এক লহমায় বিপত্তিরা নেমে এসেছিল সদলবলে। ফিরে তাকাতেই সেকি তোমার হঠাৎ চাউনি! কাজল কালোয় মায়াবী সে নেশা! গভীর সে চোখ। এই বুঝি সে যার দাপটে আমি ঘুমহীন, যার প্রতি আমার ভয় পাহাড়সমান! তবুও এড়িয়ে যেতে পারিনি। এ নেশা ভয়ঙ্কর। হোক সে কোনো কুহক বা এক মায়াপুরীর অধরা বিবেক। স্তব্ধ হয়েছিলাম আমি একনিমেষে। নেশার মত বিন্দুরা জড়িয়েছিল আমায়, সেই কালো চোখের মায়ায়। আমি ছুঁতে গেছিলাম সে চোখের পাতা। ছুঁতে গেছিলাম সে অহংকারী তিল। কাছে এগিয়েছিলাম পাঁচ পা। আঙ্গুল ডগা আছড়ে পড়তে গেছিল পিঠের নরম আঁচে। হ্যাঁচকা শব্দে আমি ধরমরিয়ে উঠি। 

খুব জোর বাজ পড়লো। গালে আমার বিন্দু বিন্দু জল। বৃষ্টির জলে লবণ মিশেছে। খোঁজ পেয়েছি আমি তার। ছুঁয়ে ফেলেছি আমি তাকে চকিতে, তার গভীরে। যেন একটা স্বপ্ন, কুয়াশা জড়ানো গাঢ় স্বপ্ন। যে নিজস্বতাটুকু মুছে যেতে বসেছিল আমার, এক দমকা হাওয়ার কেউ যেন হঠাৎ এই মনোক্রোমাটিক বিষন্ন শহরকে রাঙিয়ে দিলো। ভিজিয়ে দিল সঙ্গোপনে। রাঙিয়ে দিল চিবুক জড়ানো একাকী আবেগ, বাসনাগুলোকে কৃষ্ণচূড়া রঙের বসন্ত আবিরে।