ধা রা বা হি ক 


    উপন্যাস 

  (১ম কিস্তি)



অঙ্কন : শুভ

ন র কে র  অ ন্ত রে
কৌশিক দে



এই নিয়ে পনেরোটি কবিতা অসিতের রিজেক্ট হলো এক নামকরা পত্রিকায়।

অসিত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তার বাড়িতে। তবে এটাকে বাড়ি বলা যাবে কিনা জানা নেই। দেওয়ালের বাইরের দিকটায় কঙ্কালের হাড়ের মতন ইট বেরিয়ে এসেছে। পুরো বাড়ির বাইরে অশ্বত্থ গাছের শিকড় পাক খেয়ে আছে। জায়গায় জায়গায় ঘন শৈবাল।

বাড়ির সামনে করপোরেশনের লোক 'বিপদজনক বাড়ি' লিখে  সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখে গেছে। যার অর্থ এই বাড়ি ভেঙে পড়লে সরকার দায়ী থাকবে না।

তবুও এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়া অসিতের পক্ষে সম্বব নয়। আর যাবেই বা কোথায় ! কেই বা আছে তার। ক্লাস সেভেনে পড়া কালীন তার বাবা-মা দুজনেই অভাবের তাড়নায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। লিস্টে অসিতের নামও ছিল, তবে তার বাবার পরিকল্পনায় একটু ঘাটতি ছিল। ছেলেকে বিষ খাওয়ানোর আগেই নিজে ও বউকে বিষ খাইয়ে দেয়।

চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা যায় তারা। ছোট্ট অসিত সামনে বসে শুধু কেঁদেছিল। আর হয়ত সেই দিনই তার মনে প্রথম কবিতার জন্ম হয়েছিল।

এই ঘটনার পর অসিতের মামা চলে আসে এই বাড়িতে। লোকটি ভালো। হাড়গিলে চেহারা। কাগজ বিক্রি করে সংসার চালায়। যদিও সংসার বলতে তার স্ত্রী - মালতি। মৈনাক পর্বতের মতন চেহারা। দুজনের অনেক চেষ্টার পরেও ছেলেপুলে হলো না । যদিও এ নিয়ে এখন আর দুঃখ নেই এদের মনে। কেন নেই তা তারা নিজেরাও জানে না। হয়ত মানুষ যখন কোনো কিছুকে অধরা ভেবে নেয় তখন সেটা না পাওয়ার মধ্যেও সুখ খুঁজে পায়। কি বিচিত্র এই মানব জাতি !

ইনকাম বলতে অসিত কিছু টিউশনি করে। তার সব ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হলো রিনা। সে ক্লাস নাইনে পড়ে। এই নিয়ে দুবার ইংরেজিতে ফেল করেছে। এখন তৃতীয় বার। রিনার বাবা কথা দিয়েছে অসিত যদি মেয়েকে পাশ করাতে পারে তাহলে তাকে একটা বিশেষ উপহার দেবে। সেটা কি তা জানা নেই।

রিনা নদীর জলের মতন সুন্দর। ফুলের মতন কোমল। পৃথিবীর কোনো কিছুই যেন তার মনে দাগ কাটে না। এত সুন্দর মেয়ে পড়াশুনায় এত কাঁচা কি ভাবে হয় সেটাই মাথায় ঢোকে না অসিতের। সে মাঝে মাঝে ভাবে রিনার কাঁধে হাত রেখে বলবে , " ওভাবে হাসছো কেন ? আমার বুঝি কষ্ট হয় না ? "

সেদিন হঠাৎ রিনা পড়তে পড়তে বলল, অসিত'দা একটা কথা বলবো ? তুমি কবিতা লেখো ?

অসিত বলল, তুমি কিভাবে জানলে ?

আসলে আমাদের পাড়ায় 'নবজীবন' বলে যে পত্রিকা বের হয় সেটার একটা কপি বাবা নিয়ে এসেছিল। আমি দেখলাম সূচিপত্রে তোমার নাম লেখা। কি সুন্দর লিখছ তুমি কবিতাটা। বিশেষ করে এই লাইনটা আমার খুব প্রিয় ,

" কতদূর আকাশ গেছে জানা নেই ,
তবে তারারাও কি গেছে সাথে ! "

মানবজীবনে এসে প্রশংসাপ্রাপ্তি বলতে ওইটুকুই অসিতের কাছে। আজকাল রিনাও খুব গম্ভীর । সে পড়াশুনায় মন দিয়েছে। তার বাবা নাকি তাকেও কি একটা উপহার দেবে বলেছে - যদি পাশ করে।



                                       দুই

দুপুর দুটো নাগাদ আজ একটা ইন্টারভিউ আছে। মালতি দেবী এসে দেখলেন অসিত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে  টেবিলের সামনে। তার মাথায় হাত দিয়ে বললেন , কি রে , আজ কোথায় যাবি বলেছিলি দুটোর সময় ! স্নান করে নে। আমি ভাত বেড়ে দি।

অসিত দেখলো বেলা বারোটা বাজে। চট করে স্নান করে সে খেতে বসলো। মালতি বললেন , আজকে তোর মনের মতন পুঁই শাক করেছি। বেগুন দেইনি। কেমন হয়েছে ?

অসিত উত্তর দিলো না। কথা ঘুরিয়ে বলল, মামা কোথায় ?

সে তো গেছে দর্জির দোকানে। সামনে পুজো তাই একটা পাঞ্জাবি বানাবে। দোকানের কাপড়গুলো গায়ে দেওয়া যায় না। শরীর চুলকায় । তাই নিজে কাপড় কিনে বানাতে দিতে গেছে। হ্যাঁ রে , তুই কিছু কিনলি না এখনো ?

মামি , পেটে ভাত নেই আর মামা গেছে পাঞ্জাবি বানাতে ! অদ্ভুদ। কত করে বললাম দুলালদার দোকানে কাজটা করতে। কি এমন কাজ ! সারাদিন বসে হিসেব নিকেশ করা। সেটাও করলো না। কাগজ বিক্রি করে আর কত দিন চলবে। ওই তো চেহারা ! মাথা ঘুরে কোন দিন দেখবে রাস্তায় পরে আছে।

মালতি কোনো উত্তর দিলো না। ঘরের পুরুষেরা রেগে গেলে মেয়েদের কথা বলতে নেই। ছোটবেলায় কে যেন শিখিয়েছিল। এখনো মনে গেঁথে আছে কথাটা।

আমহাসট্রিট থেকে ডালহৌসি পৌঁছাতে অসিতের বেশি সময় লাগলো না। বারো নম্বর ক্যানেল স্ট্রিটের ছ'তলায় উঠে সে বায়োডাটা দিলো মাছের মতন বসে থাকা একজন রিসেপশনিস্ট'কে। মেয়েটির বয়স কম। তবে কেমন যেন রোবট রোবট লাগে। কার সাথে কি কথা বলবে আগে থেকেই যেন মাথায় সেট করা আছে। জাস্ট সুইচ ওন হচ্ছে আর কথা বলে যাচ্ছে।

এই অফিসটা হলো ঘোষাল বাবুর। যার পুরো নাম প্রতিম ঘোষাল। খিদিরপুরের বা হলদিয়ার পুরোনো জাহাজ কিনে সেটাকে কেটে তার লোহা বাজারে বিক্রি করাই এর মূল ব্যবসা। এর খোঁজ অসিতকে দিয়েছে বর্তমান কাগজের চার নম্বর পাতার ষোলো নম্বর স্তবকের কর্মখানি নামক বিজ্ঞাপন।

সেই মাছের মতন মেয়েটা রোবটের মতন বলল, আপনি ভিতরে যান। স্যার ডাকছেন।

অসিত গুটিগুটি পায়ে চেম্বারের ভিতরে গেল। দেখল একজন মোটাসোটা লোক পেল্লাই এক চেয়ারে বসে। সামনে হাজার খানেক ফাইল। লোকটি বলল , বসুন।

অসিত বসলো। লোকটি তার বায়োডাটা দেখতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর লোকটি বলল,

এক বছর হলো বি.এ পাশ করেছেন। এখনো চাকরি পাননি কেন ? 

অসিত ভেবে পেলো না কি উত্তর দেবে। এই প্রশ্নটা যতবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ততবার তার উত্তরে সামনে বসা মানুষগুলো অপ্রসন্ন হয়েছে। তাও তাকে উত্তর তো দিতেই হবে। সে বলল, আজ্ঞে , পেয়েছিলাম। তবে , সে সবকটাই কলকাতার বাইরে যেতে বলছিলি। এখন আমার যা পরিস্থিতি আমার পক্ষে কলকাতার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়।

সেকি ! আপনি বিয়ে করেননি। একা থাকেন। বাবা মা'ও মৃত। এখনই তো বাইরে যাওয়ার বেস্ট টাইম।

আজ্ঞে ,  সত্যি বলতে কলকাতা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করেনা স্যার।

লোকটি উত্তরটা শুনে অসিতের দিকে ঝুঁকে বসলো। তার পেল্লাই ইজি চেয়ারে ক্যাচ ক্যাচ করে শব্দ হলো। লোকটা বলল, আপনাকে তাহলে আমি কিভাবে নি বলুন ! আমার অনেক ক্লায়েন্ট বাইরে থাকে। তাদের সাথে তো দেখা করতে যেতে হবে। আপনার কাজই তো ক্লায়েন্টএর সাথে দেখা করা। তাদের প্রজেক্টগুলো জানা। কে কেমন দাম দেবে সেটার একটা ফাইল বানানো।

সেই অর্থে আমার অসুবিধা নেই স্যার। আমাকে তো আর এক বছরের জন্য বাইরে যেতে হবে না। এতো দু এক দিনের ব্যাপার। ম্যানেজ করে নেব।

ম্যানেজ করে নেবেন !

হ্যাঁ স্যার।

ও, আচ্ছা আজ তাহলে আসুন। আরও কিছু লোক আসার কথা আছে। তাদের সাথেও কথা বলি। আপনি সিলেক্ট হলে জানানো হবে। বাড়িতে চিঠি যাবে। 

অসিত বুঝতে পারলো এই কাজটাও গেল। আর হলো না।


ইন্টারভিউ শেষ করে অসিত চলল গড়ের মাঠের উদ্দেশে। মাঝখানে কলেজ স্ট্রিট নেমে তুলে নিলো অঞ্জন'কে। এই ছেলেটিকে রোজ তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত কফি হাউজে পাওয়া যায়। পৃথিবীর সব কিছুই যার কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর। কোনো জিনিসই তার মনের মতন হয় না। রোগা পাটকা পাঁচ ফুটের একটি যুবক। মুখের চামড়া শুকিয়ে কিসমিস হয়ে গেছে। দুই গালে দুটো মারিয়ানা খাদ। সারাদিনের খাবার এক গ্যালন চা আর তিন প্যাকেট সিগারেট। এই খিটখিটে মার্কা ছেলেটার লেখা কলকাতার প্রায় সমস্ত নাম করা পত্রিকায় বেরোয়। এমন একটা মানুষ কি ভাবে এত সুন্দর সাহিত্য রচনা করতে পারে তা মাথাতেই ঢোকে না অসিতের। সত্যি , কি বিচিত্র মানবজাতি !

অঞ্জনের খিটখিটে পানার অনেক উদাহরণ আছে। যেমন ধরুন , চায়ের দোকানে চা খেল। চা শেষ করার পর দোকানদারকে বলল, ভদ্রলোকের ছেলে বলে টাকা দিচ্ছি। এই চা মানুষের খায় ! কুকুরের পেচ্ছাপ মনে হচ্ছিল।

সেবার একটি মেয়ে এক নামি পত্রিকায় অঞ্জনের লেখা পড়ে অভিভূত হয়ে তাকে ফোন করলো। 

'হ্যালো , নমস্কার , আমি সোনালী ঠাকুর। '
'বলুন।'
'আসলে আপনার 'সম্পর্ক' নামক কবিতাটি পড়লাম। অসাধারণ লেখা। আপনাকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করলাম। আপনি বাংলা সাহিত্যের গর্ব।'
'আপনি ভুল জায়গায় ফোন করেছেন। রং নাম্বার।'


প্রেসিডেন্সি কলেজের সামনে এসে অঞ্জন বলল, বাসে যাবো না। বাস বড্ড তাড়াতাড়ি জায়গায় পৌঁছে দেয়। খুব বিরক্তিকর। চল ট্রামে উঠি।

অসিত আর অঞ্জন ট্রামে উঠলো। ট্রাম চলল সেন্ট্রাল , চাঁদনী , ধর্মতলা পেরিয়ে গড়ের মাঠের দিকে।

অঞ্জন এসবের মাঝে অসিতের লেখার একজন নির্মম সমালোচক । কোথায় কি ভুল হচ্ছে তা ঠোঁট কাটার মতন বলে যায় অসিতকে। যদিও অসিতের তাতে খারাপ লাগে না। আজকে যেমন অঞ্জন ট্রামে যেতে যেতে বলল,  কি রে শালা , বলেছিলাম তোকে লেখা গুলো পাঠাস না। ছাপল না তো !

'তোর মতে কি আমার লেখা ছেড়ে দেওয়া উচিত?'

'এই শোন ওই শরৎচন্দ্র স্টাইলে কথা বলবিনা। কত বার বলেছি এই ন্যাকা মার্কা লেখাগুলো ছাড়। সব কবিতায় একি কথা। একি দুঃখ। দুঃখেরও অনেক ভ্যারাইটি আছে। সেটাকে ধর। নেকি কান্না কাঁদলে কেউ লেখা ছাপায় না। আর তুই যেখানে লেখা পাঠাচ্ছিস সেই সব পত্রিকা মানুষ কিনে পড়ে। তোর মনে হয় তোর লেখা মানুষ কিনে পড়বে ?'

'তা জানি না রে ।'

'সব জানিস , শালা বুর্জোয়া , এই ট্রামে দেখ কত লোক, শহরের রাস্তায় দেখ কত লোক । এত লোকের কত দুঃখ , কত কষ্ট । কে শালা তোর কবিতা পড়ে আবার কষ্ট পেতে যাবে ! কবিতা অত সহজ না। কবিতার জন্য ধ্বংস হতে হয়। শালা বুর্জোয়া । '

ট্রাম থেকে নামতে নামতে অঞ্জন বলল, রাতে কি করছিস ? ফাঁকা আছিস ?

'না ভাই , পড়ানো আছে ।'

'রাখ তোর পড়ানো। ওই তো বেছে বেছে কচি কচি মেয়েগুলোকে পড়াতে যাস। আজকে আমার সাথে বারে যাবি। এটাই শেষ কথা।'

অফারটা ফেলতে পারলো না অসিত। মাসে দু চারবার এই অঞ্জনের আশীর্বাদে পেটে মদ পরে। হালকা নেশায় জীবনের সব কষ্ট মুহূর্তে দূর হয়ে যায়। অসিতের মনে হয় মাসের ওই দুচার দিন সে মুক্ত। তার কোনো দুঃখ নেই। 
আজকে রিনাকে পড়ানো ছিল। তবে অঞ্জনএর হাত থেকে আজ মুক্তি নেই। তার উপর মদের অফার। অসিত ভাবলো থাক আজ সে যাবে না পড়াতে। রিনা আজকাল খুব বেশিই সিরিয়াস ভাবে পড়তে বসে যা তার একেবারেই ভালো লাগে না।


                                            তিন


মেনকা বারে ঢোকার আগে অসিত বলল , ব্রাদার ভাবছিলাম একবার দেবেন্দ্রকে ডাকলে কেমন হয় ? 

অঞ্জন ঠোঁট উল্টে বলল, ওই শালার নাম নিবি না। নাম নিলেই কোথা থেকে উড়ে এসে পরে। একটা টাকা খরচ করবে না। মালটা শুধু খাবে আর বড় বড় ডায়লগ মারবে। আমি কোনদিন শালার মাথায় বোতল ছুঁড়ে মারবো।

অঞ্জনের কথাই ঠিক হলো। বারের ভিতরে গিয়ে দেখা গেল দেবেন্দ্র আগে থেকেই সেখানে বসে আছে। তাদের আসতে দেখে লটারির টিকিট জেতার হাসি নিয়ে চেচিয়ে উঠে বলল, আরে তোরা , ভাবাই যায় না। আমিও একা একা বোর হচ্ছিলাম। সবে দুটো পেগ মেরেছি। 

অসিত লক্ষ্য করলো অঞ্জন দাঁত কিড়মিড় করতে করতে দেবেন্দ্রর সামনে বসল। চারটে রামের পেগ অর্ডার দিলো। অঞ্জনের সাথে মদ খেতে গেলে সে অসিতকে জিজ্ঞেস করে না সে কি খাবে। তার মতে যে টাকা দিচ্ছে সে যা খাওয়াবে তাই খেতে হবে। নিজের ইচ্ছে দেখাতে হলে নিজের পয়সায় খাও।

দেবেন্দ্র বলল, যাই বলিস ভাই অঞ্জনের লেখাটা আজ পড়লাম। দারুন লেখা। বঙ্গদেশে এমন কবিতা বহুদিন কেউ লেখে নি ।

অঞ্জন দাঁত কিড়মিড় করে বলল, তুই আবাল কবিতার কি বুঝিস শালা। মাছের ব্যাবসায় আছিস ওই নিয়ে থাক। তুই সামনে বসলে মাছের গন্ধ বেরোয়। বিরক্তিকর।

দেবেন্দ্র বলল, আর তুই সামনে বসলে জুতোর গন্ধ বেরোয়। তাও যদি ব্যবসাটা তোর নিজের হতো। বাপের পয়সায় ফুটানি।

অঞ্জন বলল, শালা তোর দাঁত ভেঙে দেব আজ। কিপ্টাখোর মাছআলা।

প্রায় হাতাহাতির অবস্থা দেখে অসিত বলল, যে যাই বলুক আমার মতে অঞ্জনের লাস্ট কয়েকটি লেখা এবছরের শ্রেষ্ঠ লেখা। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যাবে বাবু সেলিব্রিটি হয়ে গেছে। কচি কচি মেয়েরা অটোগ্রাফ নিতে দৌড়াচ্ছে।

কথাগুলো কেমন যেন টনিকের মতন কাজ করলো। দুজনেই শান্ত হলো। অঞ্জন বলল, আমি কিন্তু শুধু অসিতের মদের টাকাই দিতে পারবো । 

দেবেন্দ্র বলল, বড় এলো টাকা দেওয়ার লোক। যাইহোক , অসিত , তোর তো লেখা দেখলাম না। এবারে লেখা দিসনি কোথাও ?

অসিত কি বলবে ভেবে পেলো না। ঠোঁট উল্টে বলল, পাঠিয়েছিলাম । মনোনীত হয় নি। আমি তো ন্যাকা ন্যাকা কবিতা লিখি আমার লেখা কে আর কিনে পড়বে বল ! বলেই আড় চোখে তাকালো অঞ্জনের দিকে।

অঞ্জনের এখন পেটে রাম পড়েছে। দুপেগ পর্যন্ত কিছুই বলবেনা। তারপরেই গর্জে উঠবে।



মেনকা থেকে তারা যখন বেরোলো তখন রাত দশটা। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে অথচ তারা কিছুই বুঝতে পারেনি। এসি বারের এটা একটা সুবিধা। বাইরে কি হচ্ছে কিছুই জানা যায় না। কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী বহির্ভুত হয়ে থাকা যায়।

তারা ঠিক করলো হেঁটে বাড়ি ফিরবে। অসিত থাকে আমহাসট্রিট , অঞ্জন আর দেবেন্দ্র কোলেমার্কেট।

সেন্ট্রাল এভিনিউয়ের সামনে আসা মাত্র দেবেন্দ্র রাস্তার উপর হর হর করে বমি করতে শুরু করলো। বিদি কিচ্ছিরি অবস্থা। মানুষজন তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ হাসছে। অঞ্জন দাঁত কিড়মিড় করে বলল, শালা রাস্কেল , কুত্তার পেটে ঘি সহ্য হয়! মেছো মাল ।

বমি শেষ করে লালা ভরা মুখ নিয়ে দেবেন্দ্র বলল, আমার পক্ষে হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। একটা ট্যাক্সি ডেকে দে।

অঞ্জন বলল, লাটের বাট। ট্যাক্সি মারাচ্ছে। আমি এক টাকাও দিতে পারবো না।

অসিত ছুটলো ট্যাক্সি আনতে। সাথে এক বোতল জল।

ট্যাক্সিতে উঠে দেবেন্দ্র বলল, মাইরি বলছি , পকেটে এক টাকাও নেই। কেউ আমায় পাঁচশো মতন দে। কালকেই দিয়ে দেবো।

অঞ্জন বলল, নো ওয়ে। বাড়ি গিয়ে বাপের কাছে চা , শালা বমিখোর।

অসিত পকেট থেকে তিনশো টাকা বের করে বলল, আমার কাছে এই আছে। তবে কাল দিয়ে দিস না হলে বাজার হবে না বাড়িতে।

হুশ করে ট্যাক্সি বেরিয়ে গেল। অঞ্জন চতুরের হাসি হেসে অসিতকে বলল, তোর দ্বারা কিছুই হবে না জীবনে , শালা কমিউনিস্ট।

আবার হাঁটতে লাগলো তারা। বৃষ্টি শুরু হলো ।            (চলবে)