।। কবিতা ।।



আর ভাবি না তাহাদের
 অনুপম দাশশর্মা

দিন বদলের কথা আর ভাবি না
যেমন ছেড়ে দিয়েছি ভাবা কেমন করে
সম্মানের সামনে জুড়ে দেওয়া হয় 'অ'
বিনীত মুখ অক্লেশে কখন যে শুষে নেবে
শ্রদ্ধার শেষ রক্তবিন্দু
জানিনা।
দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুরে বেড়ায় বাদামি মুখ
যেখানে স্থিতি মিথ‍্যের আলাপন থেকে সরে এসে
তুলে নেয় অগ্রন্থিত মনোবীণা,
সেখানে দিনান্তে ভেসে ওঠে প্রদোষের
শান্ত সংগীত
আমি অতিকায় ছায়াদের থেকে অবজ্ঞা পেয়ে
একান্তে গড়ে তুলেছি নিজস্ব রীত
এক মুঠো শস‍্যদানা তুলে আনি বেদনারহিত
খামার থেকে অক্লেশে।
দিন বদলের কথা আর ভাবিনা
যেমন ভাবি না অসম প্রতিযোগিতা থেকেও
কীভাবে অর্জিত হতে থাকে আমার উত্তরণের
স্মারকলিপিগুলি।



ইতিবৃত্ত
অভিজি মান্না

একটা সকাল এভাবে ভেঙে যেতে পারে?
যখন তার অস্ত্বিতের হুঙ্কারে ঘোড়া ছোটানোর কথা l
আর একটু নড়ে ওঠে মন l
আমি ভাবি তার পূর্ব ইতিহাস l
এতো যুদ্ধের ময়দান নয় l
তাহলে কি উঠছে গুঞ্জন l
সবটাই অন্ধকারের কাঠামো?
আমি কি শুনে যাবো শেষ রোদের হাহাকার l
তুমি মূল্যহীন, ক্ষয়িষ্ণু,  অতিতুচ্ছ?
ঘূর্ণি আর চুর্নিতে নির্বিকার হলুদ পাতা l



কবিতা
শঙ্খশুভ্র পাত্র

একটি আশ্চর্য পঙ্ ক্তি তোমাকে কখনও
উপহার দিতে পারিনি বলে হর্তুকি গাছের ডালে
কুমড়াফালির মতো ঝুলে আছে চাঁদ ৷

অথচ বাক্যবলে বলীয়ান এই যে আমি
ছন্দের বশে একান্ত দূর্বা তা তুমি পূর্বাকাশের
ইশারায় জেনেছ তাৎক্ষণিক ৷

কিন্তু কথা হল ভাবগম্ভীর, মূর্ছনা, একটা এসরাজ
যা বেজেই চলেছে অশ্রুত...

এইবার তাকাও ৷ গাছের গুঁড়িতে কাঠঠোকরার
মুহুর্মুহু চঞ্চু- আঘাত ৷

'ছোকরা ! কবিতা এক আশ্চর্যপতন...'
এই বলে দূরান্তে উড়ে গেল ধনেশচতুর ৷


স্বচ্ছতোয়া নদী
রুনা দত্ত

যতোটা অনুভূমিক আর্দ্রতায় নিজেকে
ভিজিয়ে নিলে আমিও হয়ে উঠবো
স্বচ্ছতোয়া নদী ...

ঠিক ততটাই ঝড় বা বানভাসি নিয়ে
আসবে একটি দীর্ঘকালীন রাত

তপ্ত দুপুরের উষ্ণতায় জারিত শরীরে যা
বিন্দু বিন্দু জলকণা হয়ে ঝরবে।

উষ্ণতা আর আর্দ্রতার মধ্যবর্তী বিভাজিকায়
গোলাপের পাপড়ির মতো পরতে পরতে
নিজেকে মেলে দিয়ে আমিও
সোহাগ আফিমজলে ভিজবো

তারপর সুগন্ধী নদীর মতো মিশে যাবো
তৃষ্ণার্ত মোহনার অববাহিকায়।



 যাত্রী
মৌসুমী ভৌমিক

আসলে একা চলা নয়
সমস্ত জনমানবের সুখ-অসুখ, ভাল -মন্দ
মিলিয়ে মিশিয়ে, তালে তাল রেখে
কাঁধে কাঁধ দিয়ে চলাটাই যাত্রা।

এই ব্যপ্ত চরাচরে যে সুদীর্ঘ পথ
তার ছায়ায় লুকানো যে মোহমাধুর্য

তার সমূহ বেড়াজালে ক্রমশই সুগভীর দ্বন্দ্ব, প্রত্যাশা, প্রত্যাখ্যানের প্রতিনিধি হতে হতে

এই যে ত্রস্ত জীবন, যাবতীয় মায়ায়
উলটপালট চলা, তারও কী কম মোহ!

যাত্রী মানেই অনাবিষ্কৃত আগামীর মোহ
  রূঢ় বন্ধুর পথের সখ্যতা অর্জনের মোহ
  সহযাত্রীর সুখ-দুখের ভাগীদার হবার মোহ
কখনও একাকীত্বে ডুবে যাবার মোহ।

যাত্রাপথের সৈনিকের আনন্দ বিষাদ ছুঁয়ে
মোহজাল কেটে লক্ষ্যে পৌঁছতেই পথ শেষ হয়ে আসে।



ভোরের রুমাল
মন্দিরা  ঘোষ

একটা ভোরের রুমাল থেকে কেটে নাও
           একটুকরো  ঝলমলে রোদ
 যেখানে লেখা আছে ফেরতের গল্প

 ভুল শব্দের পাশে যে বৃষ্টিফুলের নদী
            অভিমান বয়ে নিয়ে যায় চুপচাপ
সেখানে তোমার দাঁড়িয়ে থাকা
                               মুহূর্ত আঁকো

মনখারাপ রঙের বাড়িটির গায়ে
 তোমার আসা যাওয়ার দাগ
                      জন্মজড়ুল হয়ে জেগে
সেখানে রেখে দাও কাঁঠালীচাঁপার গন্ধ

আজও  আমার মেঘলা শাড়িতে
                           বেঁধে রেখেছি
          তোমার ঠোঁটের অনিবার্য ভুলগুলি



এক জটিল মনস্তত্ত্ব
 তনুশ্রী মল্লিক

তুমি তো জানোনা অপেক্ষার ভেতর বসে থাকে এক জটিল মনস্তত্ত্ব,
ফিরে যাওয়া সময় বোঝে কতটা ছায়া হেলে গেলে তুমি ফিরবে এই পেতে রাখা আহ্বানে,
অপেক্ষার ভেতর কাঁটা সরতে থাকে ,       
সরতে থাকে হিসাবের ফরমান,
ডাকও এখন তরঙ্গবাহিত হয়ে ফিরে আসে মুঠোর ভেতর,
তুমি কখনও সান্ধ্য অবকাশে পশ্চিমের দিকে তাকালে দেখতে পাও ফিরোজা আঁচলের ইতিহাস,
আমি দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে বসে থাকি ভাবি এও কী এক বিভ্রম না রঙমেলান্তি খেলা,
তোমাকে খুঁজতে গিয়ে বাতিঘরের আলোকে বরাত দিয়েছি নোনা চর জানে তা,
নুলিয়ার হাতে উঠে আসা শাঁখে আবহমানকাল ধরা থাকে ,                                                   
এও তুমি জেনে গেছ,
শুধু এই বিরামবিহীন নোনা ঢেউ অনন্ত জলরাশি হয়ে তোমার ফিরে আসা পথ ধুয়ে দিতে থাকে।